অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সন্দেশখালির বেড়মজুরে।  গ্রামে পুলিশি ধরপাকড়ের রীতিমতো রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গ্রাম। পুলিশি ভ্যানের সামনে গাছের গুড়ি ফেলে বিক্ষোভ, গাছের ডাল হাতে নিয়ে পুলিশের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ালেন গ্রামের মহিলারা! এমন একটা দৃশ্য তৈরি হয়, গ্রামের বাঁশের ভাঙা সাঁকোর এক প্রান্তে পুলিশ, আরেক প্রান্তে মহিলা। পুলিশ যাতে কোনওভাবেই গ্রামে ঢুকতে না পারে, সাঁকোর ওপরেই শুয়ে বিক্ষোভ মহিলাদের। সন্দেশখালির বেড়মজুর এদিন দেখাল জনরোষের আরেক দিক। পুলিশি ভ্যানের সামনেই শুয়ে পড়তে দেখা গেল এক বয়স্ক মহিলাকে। রীতিমতো টেনে হিঁচড়ে চ্যাঙদোলাকে করে সরাতে হয় তাঁকে। কারণ তাঁর স্বামী তখন পুলিশের ভ্যানে। অভিযোগ, শাহজাহান, তাঁর চ্যালাদের না গ্রেফতার করে, পুলিশ গ্রামবাসীদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে।

দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: শুক্রবার সকাল থেকে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়েছে সন্দেশখালি। শুক্রবার সন্দেশখালির বেড়মজুড়ে সকাল থেকে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায়। তৃণমূল নেতার বাড়িতে গ্রামবাসীদের হামলার ঘটনাও ঘটে। ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন এডিজি দক্ষিণবঙ্গ।

২৪ ঘন্টার মাথায় পরিস্থিতি বিচারে সেখানে যান রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। বার্তা দেন, আইন হাতে তুলে নিলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের। ডিজি ফিরতেই পুনরায় উত্তপ্ত হয় সন্দেশখালি। ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। অভিযোগ, পুলিশ স্থানীয়দের, এমনকি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদেরও আটক করে। শুক্রবার দুপুরে মহিলারা লাঠি-ঝাঁটা নিয়ে রাস্তায় প্রতিবাদ দেখাতে নেমে পড়ন। অভিযোগ, স্বামী-ছেলেদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে পুলিশকে বাধা দেওয়া হয়। মহিলারা প্রতিবাদ দেখাতে রাস্তায় বসে পড়েন, রাস্তায় শুয়েও বিক্ষোভ দেখান। গ্রামবাসীরা রাস্তার মাঝে গাছের ডাল জড়ো করে আগুন জ্বালিয়ে দেন।

শুক্রবার সন্দেশখালিতে বিজেপি মহিলা মোর্চার পক্ষে একটি দল সন্দেশখালিতে যায়। তাঁদের সেই সফরের মধ্যেই নতুন উত্তেজনা। গ্রামবাসীদের দাবি, ভাঙচুড়ের ‘মিথ্যা’ অভিযোগে পুলিশ বেশ কয়েক জনকে আটক করেছে। বাড়ি থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। প্রথমে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা আটকানো হয়। এর পর এক মহিলা পুলিশের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। তাঁকে পুলিশ সরিয়ে দেওয়ার পরেই বিজেপি মহিলা মোর্চার প্রতিনিধিরা গ্রামের মহিলাদের নিয়ে রাস্তার উপরে বসে পড়েন। পুলিশ সেই প্রতিরোধ সরিয়ে দিতে গেলে তৈরি হয় উত্তেজনা।

উল্লেখ্য, শুক্রবার সকালেই সন্দেশখালি যাওয়ার পথে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়। লকেটের নেতৃত্বে বিজেপির মহিলা প্রতিনিধিদের একটি দল সন্দেশখালির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু তাঁদের সন্দেশখালি থেকে অনেকটা দূরে ভোজেরহাট এলাকাতেই আটকে দওয়া হয়। লকেটের অভিযোগ ছিল, পরীক্ষার কারণ দেখিয়ে তাঁদের সন্দেশখালি যেতে দেওয়া হচ্ছে না। বাধার মুখে পড়ে পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বচসাতেও জড়িয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ। এর পরেই তাঁকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গ্রেফতারও করা হয় বলে ফেসবুকে জানান বিজেপির সাংসদ নিজেই। লকেট লিখেছিলেন, ‘‘এই রাজ্যে শাহজাহান শেখদের গ্রেফতার করা হয় না। কিন্তু সন্দেশখালির মানুষের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে গ্রেফতার করা হয়।’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here