লোকসভা নির্বাচন আসন্ন। নির্ঘণ্ট ঘোষণা না হলেও প্রস্ততি শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। আশা করা হচ্ছে, এপ্রিল-মে মাসেই লোকসভা ভোট হতে পারে। সূত্রের খবর !

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সন্দেশখালি ইস্যুতে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। সন্দেশখালির আঁচ গিয়ে পড়েছে দিল্লিতেও। দু’দিনের বিজেপির রাষ্ট্রীয় অধিবেশনে রাজনৈতিক প্রস্তাব পেশ করার সময় রাজনাথ সিং-এর মুখে উঠে এসেছে সন্দেশখালির মহিলাদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ প্রসঙ্গ। এই প্রেক্ষাপটে এবার প্রধানমন্ত্রীকে বঙ্গ সফরে এনে লোকসভা নির্বাচনে মহিলাদের মন পেতে এখন মরিয়া বঙ্গ পদ্ম শিবির বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের। সন্দেশখালির ঘটনাকে হাতিয়ার করে বিজেপির মহিলা মোর্চা তারাও রাজ্যজুড়ে মহিলা সুরক্ষা ইস্যুকে সামনে রেখে বিশেষ প্রচারে নামতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে।

আর এরইমধ্যে বাংলায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লোকসভা ভোটের আগে সম্ভবত আরামবাগেই তাঁর প্রথম সভা হতে চলেছে। হুগলির আরামবাগের হাত ধরেই এ রাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম নির্বাচনী সভা হওয়ার কথা বলে জানা যাচ্ছে। আগামী ১ মার্চ রাজ্যে আসার কথা নরেন্দ্র মোদীর। ২ মার্চও সভা করতে পারেন তিনি। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে সেদিন সভা করতে পারেন তিনি। এরপর ৬ মার্চ বারাসতে।

আগেই জানা গিয়েছিল, ৬ মার্চ উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে আসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

রাজ্য বিজেপির পরিকল্পনা, সেই সভায় সন্দেশখালির ‘নির্যাতিতা’-দের উপস্থিত করানো হবে। আলাদা মঞ্চ করে বসানো হবে তাঁদের। সেখানে মুখ ঢেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখোমুখি হবেন তাঁরা। যেহেতু বারাসত থেকে বসিরহাট খুব দূরে নয়। তাই সন্দেশখালির আবহে তাঁর বারাসত সফরকে আলাদা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।  বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, সন্দেশখালির মহিলারা তাঁদের বক্তব্য লিখিত আকারে হোক বা মৌখিকভাবে হোক প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন।

তবে আরামবাগে লোকসভা ভোটের আগে একেবারে প্রথম সভা মোদীর। আরামবাগ লোকসভা আসনটি বিজেপি নিজেদের ভাল আসন বলেই মনে করে। গতবার মাত্র ১২০০ ভোটের ব্যবধানে আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্র হাতছাড়া হয় বিজেপির। সেখান থেকেই এবার ভোটপ্রচার শুরু প্রধানমন্ত্রীর।

১ মার্চ আরামবাগ এবং ২ মার্চ কৃষ্ণনগরে সভা করতে পারেন মোদী। রাজ্য বিজেপির নেতারা জানাচ্ছেন, এ রকম পরিকল্পনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে কথাবার্তাও হয়েছে। কিন্তু যে হেতু প্রধানমন্ত্রী, তাই আগে থেকে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।

বিজেপি সূত্রে খবর, গত লোকসভায় আরামবাগে খুব কম ব্যবধানে হেরেছিল বিজেপি। লোকসভায় হারলেও আরামবাগে শক্ত ঘাঁটি রয়েছে পদ্ম শিবিরের। তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছিল ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনেও। আরামবাগ লোকসভার মধ্যে যে সাতটি বিধানসভা রয়েছে, তার মধ্যে আরামবাগ, খানাকুল, গোঘাট, পুরশুড়া এই চার বিধানসভা কেন্দ্রে জিতেছিল বিজেপি। বাকি তিন বিধানসভা হরিপাল, তারকেশ্বর এবং চন্দ্রোকোনায় তৃণমূল জিতেছিল। বিধানসভার নিরিখে হিসাব করা দেখা যাচ্ছে, আরামবাগ লোকসভায় ভোটের অঙ্কে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি।

কয়েক দিন আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক সভা করেছিলেন আরামবাগে। প্রথমে হুগলি জেলার পান্ডুয়া বা বলাগড়ে সেই সভা করার কথা ছিল। পরে জায়গা বদল করা হয়। রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, ‘দুর্বল আরামবাগে জোর দিতেই’ মমতা সেখানে প্রশাসনিক সভা করেছিলেন। একই ভাবে মোদীও আরামবাগকে পাখির চোখ করতে চাইছেন বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের।

অন্য দিকে, কৃষ্ণনগর আসন নানা সমীকরণে বিজেপির জন্য উর্বর। অতীতে লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর থেকে জিতেও এসেছে বিজেপি। ১৯৯৯ সালের লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর থেকে বিজেপির সাংসদ হন জলু মুখোপাধ্যায়। তখন বাংলায় বিজেপির এত পোক্ত সংগঠন বা জনভিত্তি ছিল না। পাশাপাশি, কৃষ্ণনগর থেকে তৃণমূলের বহিষ্কৃত সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে নিয়ে সাম্প্রতি অতীতে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তাকেও কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি।

রাজনৈতিক মহলের অনেকে মনে করছেন, বিবিধ সমীকরণে কৃষ্ণনগর লোকসভা পদ্মশিবিরের জন্য ভাল আসন। বিজেপি যে কৌশলে এগোচ্ছে, তাতে যত দিন যাবে মেরুকরণ তত তীব্র হবে বলেও অনেকের মত।

তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার বিষয়ে চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এখনও পর্যন্ত দীর্ঘ মেয়াদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমে রয়েছেন জওহরলাল নেহরু। টানা প্রধানমন্ত্রী চেয়ারে আসীন ছিলেন তিনি। আর এবার মোদী কুর্সিতে বসলে সেই দিক দিয়ে নেহরুর সমানে সমানে হয়ে যাবেন। ১৬ বছর প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব সামলেছেন নেহরু। তবে ১৯৬৪ সালে প্রয়াণ হয় তাঁর। তাই প্রধানমন্ত্রীত্বের তৃতীয় মেয়াদ শেষ হয়নি তাঁর।

গত সপ্তাহে নয়া দিল্লিতে বিজেপির জাতীয় কাউন্সিলের সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ‘বিজেপিকে প্রতি নতুন ভোটারের কাছে পৌঁছতে হবে। তীয় মেয়াদে ক্ষমতা ভোগ করার জন্য বলছি না। আমি দরিদ্র শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য বেঁচে আছি। কোটি কোটি নারী, দরিদ্র এবং যুবকদের স্বপ্ন মোদীর সংকল্প।’

বিগত নির্বাচনগুলিতে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস মহিলাদের একটা বড় অংশের সমর্থন পেয়েছে। মহিলাদের সমর্থন না পেলে যে আগামী লোকসভা নির্বাচনে ভাল ফল করা কার্যত অসম্ভব সে কথা মাথায় রেখেই এবার মহিলা ন্যায় সমাবেশের মাধ্যমে খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বারাসতের মাটিতে হাজির করানো মহিলাদের পাশে থাকার বঙ্গ বিজেপির কৌশল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here