দেশের সময় সন্দেশখালি: শনিবারের পর রবিবারের সন্দেশখালিতে সকাল শুরু হয় কিছুটা উত্তাপহীনভাবে। বেরমজুর অঞ্চলের কাঠপোল বাজার এলাকায় অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসেছে। সেখানে একের পর এক অভিযোগ জানাতে আসছিলেন গ্রামবাসীরা। ফের নতুন করে তপ্ত হয়ে ওঠে সন্দেশখালির বেড়মজুর। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছেন সাধারণ মানুষ। বিচারের দাবিতে উঠেছে রব।

অন্যদিকে এদিনই আবার সন্দেশখালি যাওয়ার পথে দিল্লির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের পথ আটকায় পুলিশ। তুমুল ধস্তাধস্তিও হয়। গ্রেফতারও করা হয় ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের সদস্যদের। এদিকে বেড়মজুরেই আবার অন্য মেজাজে দেখা গেল সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিককে। কীতর্নের দলের সঙ্গে খোল কাঁধে হাসিমুখে নাচতে দেখা গেল তাঁকে।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাঠপোল এলাকায় পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্পে বিক্ষোভ দেখান গ্রামের মহিলারা। সন্দেশখালি বেরমজুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বটতলায় হাতে কাগজ নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। শেখ শাহজাহান, তাঁর ভাই সিরাজ ও অধীর মাইতির গ্রেফতারের দাবি জানাতে থাকেন। রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসুকে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেন গ্রামের মহিলারা। 

কাঠপোল কেন্দ্রে এসেছিলেন বেরমজুরের বাসিন্দা ৫০ বছরের শুভেন্দু মাঝি। সঙ্গে তাঁর স্ত্রীও ছিলেন। শুভেন্দু মাঝি বিশেষ ভাবে সক্ষম। তাঁর অভিযোগ, এক সময় এলাকায় তাঁর দোকান ছিল। সেটিকে জোর করে দখল করে নিয়েছে তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। ভবঘুরের মত আজ দশ বছর ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। শেখ শাজাহান ফেরার, আর শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দাররা জেল বন্দি। তাই সাহস করে নিজেদের জমি, বাড়ি, দোকানপাট ফিরে পেতে আইনের সাহায্য চাইতে  পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন।

সন্দেশখালির বেরমজুর এলাকায় কীর্তনের আসরে দেখা গেল মন্ত্রী পার্থ ভৌমিককে। শাহজাহান, সিরাজ, ও তাঁদের অনুগামীদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে গণক্ষোভ দেখা দিয়েছে সন্দেশখালিতে। আন্দোলন-বিক্ষোভ নিয়ে তেতে রয়েছে এলাকা। 

বেরমজুর অঞ্চলের কাঠপোল বাজার এলাকায় অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসেছে। সেখানে একের পর এক অভিযোগ জানাতে আসছিলেন গ্রামবাসীরা। ক্যাম্পের কিছুটা অদূরেই চলছিল কীর্তনের আসর। সেখানে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিককে খোল বাজাতে দেখা যায়। পরে গ্রামবাসীদের উদ্দেশে তিনি জানান, রাজ্যে কোনও গুন্ডামি বরদাস্ত করা হবে না। দুমাসের মধ্যে সকলের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

পার্থ বলছেন, “মানুষের ক্ষোভ ক্রমশ প্রশমিত হচ্ছে। অন্যান্য অনেক বিষয়ে অভিযোগ আছে। কিন্তু, মেয়েদের উপর পাশবিক অত্যাচারের যে অভিযোগ হাইলাইট করে দেখানো হচ্ছিল সেটা যে সর্বৈব মিথ্যা তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। জমি যদি কারও গিয়ে থাকে তাহলে তাঁরা ফেরত পাবেন।” এদিকে আবার মন্ত্রীর কথা বলতেই ঝাঁটা হাতে গর্জে উঠলেন এক মহিলা। বললেন, “এত অভিযোগ আছে যে বলে পুরোতে পারব না। এই ঝাঁটা দিয়েই সব আবর্জনা ঝেঁটিয়ে বিদায় করব। আমাদের বেলায় আইন, আর ওদের বেলায় কোনও আইন থাকে না। ও মা-বোনদের নিয়ে ইচ্ছামতো খেলা করে। আনন্দ উপভোগ করে। কোনও মন্ত্রী আমাদের দরকার নেই। মন্ত্রী তো বলেছে কোনও ঝামেলা নেই। উনি কী ঘুমাচ্ছিলেন?”

প্রসঙ্গত, একদিন আগে সন্দেশখালিতে যেতে দেখা গিয়েছিল পার্থকে। সঙ্গে ছিলেন দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। বিকালে মহিলাদের অভিযোগ শুনতেও বসেন। সেখানেই মন্ত্রীদের পেয়ে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন গ্রামবাসীরা। শাহজাহানের বিরুদ্ধেও নিয়েও গর্জে ওঠেন। তখনই এক মহিলার এই প্রশ্নের রীতিমতো বিব্রত হয়ে ‘বেঁফাস’ মন্তব্য করে বসেন রাজ্যের সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। এক মহিলার উদ্দেশে বলেন, শেখ শাহজাহানের নাম তাঁকে কেউ শিখিয়ে দিয়েছে। এরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এবার সেই পার্থকেই হাসিমুখে নাচতে দেখা যাওয়ায় তা নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে।

অন্যদিকে বাড়তে থাকা আন্দোলন নিয়ে সুজিত বলছেন, “যারা এসব করছে তারা তাদের স্বার্থ দেখছে। পলিটিক্সটা জিইয়ে রাখতে চাইছে। ওরা বুঝতে পারছে বেশিদিন এই আন্দোলন আর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। তাই প্রধানমন্ত্রী যতদিন না আসছেন ততদিন আন্দোলনটা জিইয়ে রাখতে চাইছে। কিছু মানুষকে কিছু লোক করাচ্ছে। কারা করছে আমরা বুঝতে পারছি। আমি বেড়মজুরে দাঁড়িয়ে সবটা দেখলাম।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here