পাঁচ-ছয় ঘণ্টা দাঁড়াতে হচ্ছে লাইনে, জল-খাবার নেই, রেহাই পাচ্ছেন না রোগী, মহিলারাও!

দেশের সময়: দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোল। পরিকাঠামো নির্মাণে এখানে খরচ করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। গড়ে উঠেছে আধুনিক টার্মিনাল। কিন্তু পরিষেবা সেই তিমিরেই। এই সীমান্ত দিয়ে পাসপোর্ট নিয়ে বৈধভাবে যাতায়াত করতে গিয়ে যাত্রীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। অভিযোগ, বাংলাদেশের বেনাপোল ইমিগ্রেশনে একজন যাত্রীর পাসপোর্ট খতিয়ে দেখার কাজ সারতে সময় লাগে মাত্র পনেরো মিনিট। কিন্তু এপারে পেট্রাপোলে সেই কাজের জন্য পাঁচ থেকে ছ’ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। রোগী হোক কিংবা কোনও অন্তঃসত্ত্বা মহিলা বা বয়স্ক মানুষ, রেহাই মিলছে না কারও।

এদিকে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে হওয়ায় রোদে পুড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। ভিজতে হচ্ছে বৃষ্টিতে। শৌচালয়ে যাওয়ারও কোনও সুযোগ নেই। কারণ, লাইন হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা। সবমিলিয়ে এক দুর্বিসহ যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে যাত্রীদের। যেসব ভারতীয় বাংলাদেশে যাচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশনে তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম ভোগান্তি হলেও, বাংলাদেশের যাত্রীদেরকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, রোজকার ছবি। ফলে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ভারত-বাংলাদেশের যাত্রীরা। যদিও এনিয়ে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। 

যাত্রীদের বক্তব্য, পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে দীর্ঘ সময় নষ্ট হওয়ায় গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে চরম নাকাল হতে হচ্ছে তাঁদের। ট্রেন-বাস পাচ্ছেন না। ফলে দিনের দিন কলকাতায় পৌঁছাতে না পেরে কাজের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে তাঁদের। চিকিৎসকের অ্যাপয়েনমেন্ট বাতিল হয়ে যাচ্ছে। রাত হয়ে যাওয়ায় পেট্রাপোল সীমান্তেই বা বনগাঁ শহরে হোটেল ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে। পাসপোর্ট, ভিসা নিয়ে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে এদেশে আসা যাত্রীদের বক্তব্য, যাঁরা ট্রেনে বা বিমানে বাংলাদেশ থেকে এদেশে আসছেন, তাঁদের তো এই ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না। তা হলে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে এলে কেন তাঁদের এই ভোগান্তির শিকার হতে হবে? গোটা বিষয়টি নিয়ে পেট্রাপোল এক্সপোর্টার ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন থেকে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়কারী কেন্দ্রগুলির কর্মীরাও যার পরনাই ক্ষুব্ধ। তাঁদের বক্তব্য, এভাবে চলতে থাকলে যাত্রীর সংখ্যা কমতে থাকবে। এমনিতেই অনেকে এখন ট্রেনে বা বিমানে বাংলাদেশ থেকে এদেশে আসেন। পেট্রাপোল দিয়ে এলে কলকাতায় পৌঁছনো সুবিধা, সেকারণেই যাত্রীরা এই সীমান্ত ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এভাবে যদি তাঁদের হেনস্তার শিকার হতে হয়, তা হলে বাধ্য হয়ে তাঁরা বিকল্প পথে আসবেন। এতে পেট্রাপোল সীমান্তের গুরুত্ব কমবে। যাত্রী সংখ্যা কমে গেলে এই সীমান্তের উপর যে সব ব্যবসায়ী নির্ভরশীল, তাঁরাও পথে বসতে বাধ্য হবেন। বিষয়টি নিয়ে বারবার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

বাংলাদেশের যাত্রীদের বক্তব্য, চিকিৎসা, পড়াশোনা, ব্যবসা কিংবা বেড়ানোর জন্য প্রতিদিনই কয়েক হাজার মানুষ ভারতে আসেন। যাঁরা সড়কপথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসতে চান, তাঁদের কাছে প্রথম পছন্দ পেট্রাপোল। কারণ, এখান থেকে কলকাতায় পৌঁছনো তুলনামূলকভাবে সহজ। কিন্তু যেভাবে তাঁদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছিয়েছে, তাতে বিরক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে। ভারতের ইমিগ্রেশনে ধীরগতিতে কাজ চলায় যাত্রীরা নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ইমিগ্রেশনে ডেস্কের সংখ্যা বেশি থাকলেও মাত্র তিন-চারটি খোলা থাকে। ফলে যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় ইমিগ্রেশন কর্মীদের। যাত্রীরা ভোর ছ’টায় ইমিগ্রেশনে লাইন দিয়ে বিকেলে এমনকী রাত এগারোটা বেজে যাচ্ছে দেশে আসতে। এত রাতে সীমান্ত পার হওয়ায় নিরাপত্তার ঝুঁকিও বাড়ছে।  

বাংলাদেশের যাত্রীদের অভিযোগ, পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে দীর্ঘ সময় তো লাগছেই, তার উপর রয়েছে কুলি ও দালালদের দাপট। যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সিরিয়াল ভেঙে লাইনে আগে ঢুকিয়ে দেওয়ার টোপ দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়ানোর হাত থেকে নিস্তার পেতে অনেকে দালালদের টাকা দেন। কিন্তু আদৌও তারা কোনও কাজ না করে দিয়ে বেপাত্তা হয়ে যায়। এসব নিয়ে বলতে গেলে বিএসএফের দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয়। ভারতে চিকিৎসা করিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে ফেরা খুলনার এক বাসিন্দার কথায়, সকাল ন’টায় আমরা পেট্রাপোল সীমান্তে আসি। কিন্তু মোটেই কাঙ্খিত পরিষেবা মেলেনি সেখানে। নোম্যান্স ল্যান্ডে আমাদের দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। একটি পরিবহণের কর্মীরা আগে আগে ইমিগ্রেশনের কাজ করে দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে এক হাজার টাকা নেন। কিন্তু কিছুই করেননি। শুধুমাত্র আমাদের সঙ্গে যে ব্যাগপত্র ছিল, সেগুলো কিছুটা পথ বহন করে দিয়েছেন, এটুকুই। অন্যদিকে, বিএসএফের দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয়েছে। 

পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে ফেরা আরএক যাত্রী বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি নিয়ে, সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে ভারতে এসেছি। তাহলে আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হবে কেন? ওই যাত্রীর অভিযোগ, পেট্রাপোল সীমান্তে ইমিগ্রেশনে কর্মীর সংখ্যা কম, ইন্টারনেট সমস্যা এসব তো আছেই। তার সঙ্গে প্রশাসনের মারমুখী আচরণ। মনে হচ্ছে যেন, পাসপোর্ট, ভিসা নিয়ে ভারতে এসে আমরা কোনও অন্যায় করে ফেলেছি বলে মনে হচ্ছে ৷ দিনভর না খেয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। এটা অমানবিক ছাড়া কী হতে পারে। পরিষেবা দেওয়ার নামে চেকপোস্টে আমাদের চরম হয়রান হতে হয়েছে। বাংলাদেশে ঢোকার পর বাসের টিকিট মিলছিল না। নন এসি বাসে পাঁচশো টাকার টিকিট কাটতে হয়েছে আটশো টাকায়। এসি বাসে এক হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে দেড় হাজার, দু’হাজার টাকায়। 

শুধু একজন, দু’জন নয়, পেট্রাপোল দিয়ে যাতায়াত করা কমবেশি সব যাত্রীরই একই অভিজ্ঞতা। সম্প্রতি ঢাকায় ফেরা এক যাত্রীর বক্তব্য, ভোর পাঁচটার সময় পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন অফিসের সামনে লাইনে দাঁড়াই। বিকেল চারটেয় বাংলাদেশে ঢুকেছি। কিন্তু তার পর বেনাপোল ইমিগ্রেশনে নথিপত্র যাচাই করতে সময় লেগেছে মাত্র দশ মিনিট। তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশে আসা এক যাত্রী জানিয়েছেন, আগেরদিন রাত দশটা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বনগাঁয় ফিরে গিয়েছি। পরদিন আবার এসে লাইনে দাঁড়াই। তার পর বাংলাদেশে আসতে পেরেছি। তা হলে ভাবুন, কতটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। 

পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে ১৪টি ডেস্ক রয়েছে। অথচ খোলে মাত্র তিন -চারটি। জানতে চাইলে বলা হয়, কর্মীর সংখ্যা কম। ফলে সব ডেস্ক খোলা সম্ভব হচ্ছে না। এরই জেরে যাত্রীদের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এক-একজনকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে কমকরে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। যদিও যাত্রীদের উন্নত পরিষেবা দিতে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে ১৬ টি ডেস্ক চালু করা হয়েছে। সেখানে গোটা প্রক্রিয়া সারতে খুব বেশি হলে সময় লাগছে পনেরো মিনিট। স্বাভাবিকভাবে ওপারের পরিষেবা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে কোনও অভিযোগ নেই। তাঁদের যত ক্ষোভ পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন নিয়ে। 

ছয়ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য তথা পঞ্চায়েতের শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য সঞ্চালক পরিতোষ বিশ্বাস বললেন, ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতকারী যাত্রীদের পেট্রাপোল সীমান্তে যে কীভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, চোখে না দেখলে তা বিশ্বাস করা কঠিন। ধরা যাক, লাইনে পাঁচশো জন দাঁড়িয়ে আছে। খুব বেশি হলে ৫০ জন ইমিগ্রেশন বিল্ডিংয়ের ভিতরে। বাকি ৪৫০ জনকে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে নোম্যান্স ল্যান্ডে খোলা আকাশের নিচে। যাত্রীদের জন্য কোনও কম্পোর্ট জোন নেই। তাঁরা লাইনে থাকা অবস্থায় জল, খাবার পান না। শৌচালয়ে যাওয়ারও কোনও সুযোগ নেই। এপারের ইমিগ্রেশনে ১৪ টির বেশি কাউন্টার থাকলেও খোলা থাকে মাত্র দু-চারটে। সকাল দশটায় লাইনে দাঁড়িয়ে পাসপোর্ট পরীক্ষা হতে বিকেল চারটে বেজে যায়। কিছুদিন আগে আমিও বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। আমাকেও পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে তিন ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে।

যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য বলে সেখানে কিছু নেই। দু-তিনটে কাউন্টার খোলা। অথচ মাঝেমধ্যেই কোনও কাউন্টার থেকে অফিসার উঠে চলে যাচ্ছেন। পনেরো মিনিট, কুড়ি মিনিট পর তিনি ফিরছেন। কারও কিছু বলার নেই। গত বছর পুজোর সময় পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে দিনে সাত-আট হাজার যাত্রী যাতায়াত করেছে। এবার সেই সংখ্যা অনেক কমেগিয়েছে। যাঁরা যাতায়াত করছেন, নিরুপায় হয়ে। 

পেট্রাপোল এক্সপোর্টার অ্যান্ড ইমপোর্টার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ দে বলেন, পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে পাসপোর্টে যাতায়াত করা যাত্রীদের যে কী চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, তা বলার ভাষা নেই। পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে ম্যান পাওয়ার কম। ফলে কম কর্মী, আধিকারিক দিয়ে বিপুল সংখ্যক যাত্রীকে পরিষেবা দিতে গিয়ে কার্যত নাকানিচোবানি খেতে হচ্ছে। শুধুমাত্র পাসপোর্ট চেক করতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে, এটা ভাবা যায়?

একে তো ম্যান পাওয়ার কম, তার উপর প্রায় দিন সার্ভারের সমস্যা। ফলে কাজ বন্ধ। খুবই খারাপ লাগে যখন দেখি, কোনও শিশু কোলে মহিলা বা বয়স্ক নাগরিক রোদ-বৃষ্টির মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদেরও দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কারও জন্য কোনও ছাড় নেই। যাত্রীরা যখন ইমিগ্রেশনের লাইনে ঢোকার জন্য নোম্যান্স ল্যান্ডে অপেক্ষা করেন, তখন সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়। কারণ, তখন কারও শৌচালয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হলে কিছুই করার থাকে না। তাঁরা না পারেন ভারতে ঢুকতে আবার না পারেন বাংলাদেশে যেতে। এই সমস্যার একটা সমাধান হওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে বহুবার জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। 

পেট্রাপোল স্টাফ অ্যান্ড ক্লিয়ারিং এজেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করে গেলেন। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী ও সম্পর্ক আরও মজবুত করার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত করা বাংলাদেশের যাত্রীদের অভিজ্ঞতা মোটেই ভাল নয়। প্রকাশ্যেই তাঁরা তা বলছেন।

আপেক্ষিকভাবে মনে হতে পারে, বিষয়টি ছোট। কিন্তু অবশ্যই এ বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার। না হলে ভারতের পরিষেবা সম্পর্কে একটা খারাপ বার্তা যাবে। পেট্রাপোলে আধুনিক টার্মিনাল হয়েছে। তার পরও পরিষেবার এতটুকু উন্নতি হবে না কেন? কেন একজন যাত্রীকে লাইনে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। এর দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে অনেকে দালাল ধরে সাইড লাইনে অর্থাৎ বিনা পাসপোর্টে ভারতে আসার চেষ্টা করছে। 

সম্প্রতি পরিবার নিয়ে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন বনগাঁর মতিগঞ্জের তরুণ সিংহ। তাঁর অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ। বললেন, এখন পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়ায় ঢাকা থেকে বাসে পাঁচঘণ্টাতেই বেনাপোলে পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে সময় লাগছে ছ’ঘণ্টারও বেশি। তবে তাঁর অভিযোগ যে শুধু পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন নিয়ে তা নয়। তরুণবাবুর অভিযোগ, বেনাপোলে দালালদের রমরমা। টাকা না দিলে ফর্ম ফিলআপ করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীকেও টাকা দিতে হচ্ছে। না হলে পাসপোর্ট আটকে রেখে দিচ্ছে।

তবে সেসব অভিযোগকে ছাপিয়ে গিয়েছে নোম্যান্স ল্যান্ডের দুর্ভোগ। বললেন, আমি সকাল সাড়ে এগারোটায় নোম্যান্স ল্যান্ডে পৌঁছই। আর পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন থেকে যখন বের হয়েছি, তখন সন্ধ্যা ছ’টা। সাথে আমার স্ত্রী ছিলেন। তাঁকেও একইভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে ১৪টি কাউন্টার রয়েছে। অথচ আমি যেদিন এসেছি, সেদিন খোলা ছিল মাত্র তিনটি। ৫০ জন করে ইমিগ্রেশনের লাইনে ঢোকানো হচ্ছে। তার পর বাংলাদেশ থেকে আসা ভারত-বাংলাদেশ সব যাত্রীর জন্য একটাই লাইন। নোম্যান্স ল্যান্ডে অপেক্ষা করার সময় জল, খাবার কিছুই নেই। আমার যা মনে হল, এটা যেন ঘুরিয়ে বলে দেওয়া হচ্ছে, পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে যাওয়া-আসা বন্ধ করো। না হলে এই দুর্ভোগ পোহাও। এটা কখনওই কাম্য নয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here