দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আজ শুক্রবার, ১ মার্চ রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

দু’দিনের বঙ্গ সফরে রাজ্যে আসছেন মোদী। হুগলির আরামবাগ সফর দিয়েই বাংলায় লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর শুক্রবারের পূর্ব নির্ধারিত জনসভা এমন সময় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে যখন রাজ্য রাজনীতিতে সন্দেশখালি নিয়ে তোলপাড় চলছে। বৃহস্পতিবারই সন্দেশখালি কাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানকে পুলিশ গ্রেফতার করে। স্বভাবতই রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছে আরামবাগ থেকে প্রধানমন্ত্রী সন্দেশখালি নিয়ে নজিরবিহীন আক্রমণ শোনাবেন রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনকে।

আরামবাগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জোড়া কর্মসূচি। বেলা ৩টে নাগাদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথমে সরকারি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। বাংলার জন্য একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ৩ টে বেজে ৪৫ মিনিটে সরকারি অনুষ্ঠান স্থলের কাছেই আরামবাগে দলীয় সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নরেন্দ্র মোদী। হুগলির আরামবাগের হাত ধরেই এ রাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম নির্বাচনী সভা হতে চলেছে। 

২০১৯ সালে খুবই অল্প ভোটে আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রটি হারাতে হয়েছিল বিজেপিকে। সেই কেন্দ্র থেকেই বিজেপির ‘হেভিওয়েট’ প্রচার শুরু হচ্ছে ২০২৪-এর আগে। বিজেপির রাজ্য সভাপতির কথায়, “তৈরি থাকুন। ঐতিহাসিক দৃশ্য দেখতে পাবেন। অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখবেন আরামবাগে।”

কিন্তু লোকসভা ভোটের প্রচারে শুরুতেই আরামবাগ, কৃষ্ণনগরকে বেছে নিলেন কেন প্রধানমন্ত্রী? রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, গত লোকসভা ভোটে আরামবাগ থেকে সামান্য ব্যবধানে জিতেছিল তৃণমূল। তৃণমূল ভোট পেয়েছিল ৪৪.১৯%, আর বিজেপি পেয়েছিল ৪৪.০৩%। অর্থাৎ ব্যবধান খুব সামান্যই। আর এই আরামবাগের জেলা হুগলিতেই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে একাধিক তৃণমূল নেতা। একইসঙ্গে হুগলিতে কৃষকদের সংখ্যাও রয়েছে প্রচুর। ফলে আরামবাগ সহ হুগলি জেলায় আলাদা নজর রয়েছে বিজেপির।

২০১৯ সালে লোকসভায় ভালই চমক দিয়েছিল বিজেপি। ১৮টি আসনে জয়, কয়েকটিতে লড়াই হয়েছে কাঁটায় কাঁটায়। যেমন আরামবাগ লোকসভা আসনে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র ১ হাজার ১০০। এরপর ২০২১ সালে আরামবাগের ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৪টি জেতে বিজেপি। বিজেপির অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট বলছে, ২০২৪-এ আরামবাগে তাদেরই পাল্লা ভারী।

সুকান্ত মজুমদার বৃহস্পতিবার রাতেই বলেন, “আগের বার অল্পের জন্য আরামবাগ ফস্কে গিয়েছে। এবার লক্ষাধিক ভোটে জিতে এই কেন্দ্র উপহার দেব নরেন্দ্র মোদীকে। শুক্রবার আপনারা দেখবেন ম্যাজিক কাকে বলে। এর নাম মোদী ম্যাজিক।”

আরামবাগ থেকেই বাংলায় লোকসভা ভোটের মূল পর্বের প্রচার শুরু করতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বঙ্গ সফরে এসেছিলেন মোদী। সেটি ছিল পুরোপুরি সরকারি কর্মসূচি। এবার সরকারি অনুষ্ঠানের সঙ্গে ভোটপ্রচারও। লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে এই সভা ঘিরে, আত্মবিশ্বাসী বিজেপি।

অপরদিকে, ২ মার্চ কৃষ্ণনগরে সভা করবেন নরেন্দ্র মোদী। ওই লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ মহুয়া মৈত্র ক্যাশ ফর কোয়ারি কাণ্ডে সাসপেন্ড হয়েছেন সংসদ থেকে। একইসঙ্গে, কৃষ্ণনগর সহ নদিয়ার বিপুল অংশে প্রভাব রয়েছে মতুয়াদের। ফলে মতুয়া ভোট টানতে কৃষ্ণনগরে মোদির সভা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ২৪-এর লোকসভা ভোটের আগেই সিএএ লাগু হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মোদী কি এ নিয়ে কোনও বার্তা দেবেন? এখনও পর্যন্ত সিএএ কার্যকর না হওয়ায় মতুয়াদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। সেই ক্ষোভ প্রশমনেই বিজেপির বাজি সেই মোদীই।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আসছেন। উনি রাত্রিবাসও করবেন। ১ এবং ২ তারিখ এখানে সভা তাঁর। ১ তারিখ আরামবাগে সভা করবেন। দুপুর ৩টে থেকে সেই সভার সময় দেওয়া আছে। পরদিন সকালে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে সভা আছে প্রধানমন্ত্রীর। আমার কাছে যা খবর উনি আবার ৫ তারিখে আসবেন। কলকাতায় রাত্রিবাস করতে পারেন। ৬ তারিখ বারাসতে সভা।”

এদিকে, সন্দেশখালি নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতেও লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল কংগ্রেস এবং রাজ্য সরকারকে নিশানা করে ইস্যু করতে চাইছে গেরুয়া শিবির। সেই সূত্রেই ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সন্দেশখালিতে সভা করবেন মোদী। সন্দেশখালির ‘নির্যাতিতা’ মহিলাদের সঙ্গেও আলাদা করে কথা বলতে পারেন মোদি। সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলিতে মহিলাদের একটা বড় অংশের সমর্থন পেয়েছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে সন্দেশখালিকে হাতিয়ার করে মহিলাদের মন পেতে খোদ প্রধানমন্ত্রীর বারাসতে সভা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ইতিমধ্যে সন্দেশখালি কাণ্ডকে হাতিয়ার করে লোকসভা ভোটের আগে কলকাতা সহ রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করার পরিকল্পনা নিয়েছে বঙ্গ পদ্ম শিবির।

শুক্রবার দিল্লি থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিমান দুর্গাপুরের অন্ডালে অবতরণ করবে। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে তার আরামবাগে আসার কথা। শনিবার কৃষ্ণনগরের সভা করে তিনি চলে যাবেন বিহারে। ওই রাজ্যে নীতীশ কুমার ফের বিজেপি হাত ধরার পর এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী ওই রাজ্য সফরে যাচ্ছেন। নীতিশের সঙ্গে ইতিমধ্যে তাঁর দিল্লিতে দেখা হয়েছে। শনিবার বিহারে এক মঞ্চ দেখা যাবে দুই নেতাকে ।’

বিজেপি এবার বাংলায় লোকসভার ৪২টি আসনের মধ্যে ৩৫টি টার্গেট করেছে, সন্দেশখালি ঘটনাকে হাতিয়ার করে তারা মনে করছে এই লক্ষ পূরণ সম্ভব। সেই কারণেই ইস্যু তাজা থাকতেই প্রধানমন্ত্রীর সফরের ব্যাপারে উদ্যোগী হয় বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। সন্দেশখালীর কথা বিবেচনায় রেখেই প্রধানমন্ত্রী সভাস্থল হিসেবে বারাসতকে বেছে নেওয়া হয়েছে। একই উদ্দেশে শুক্রবার থেকে কারণে টানা দুদিন রাজ্যে দুই সভা করবেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দুই সভা লোকসভার লড়াইয়ে আমাদের অনেক এগিয়ে দেবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here