দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কলকাতা পুরসভায় ছিল তিন জন। শেষ পর্যন্ত দিদির পাড়ার রতন মালাকারকে মনোনয়ন তোলাতে পেরেছিল তৃণমূল। কিন্তু প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায় এবং সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বহিষ্কার করেছিল শাসকদল। কিন্তু ১০৮ পুরসভায় সংখ্যাটা অজস্র। টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়া সেই নেতাদের উদ্দেশেই কড়া বার্তা গেল জেলায় জেলায়।

তৃণমূল সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার জেলায় জেলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি বার্তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলা সভাপতিরা এবার নির্দলদের সেই সার্কুলার পাঠিয়ে দেবেন।

জানা গিয়েছে, ওই সার্কুলারে বলা হয়েছে, যাঁরা তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছে তাঁদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। কী ভাবে? বলা হয়েছে, লিফলেট বিলি করে সেই প্রার্থীদের বলতে হবে সেই কথা। নইলে দল বহিষ্কার করবে।

দলের বিভীষণদের শায়েস্তা করতে ও গোঁজ প্রার্থীর সমস্যা এড়াতে দলের মহাসচিবের নির্দেশকে কার্যকর করতে উঠে পড়ে লেগেছে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। পুরভোটে টিকিট না পেয়ে দলকে বিপাকে ফেলতে যারা দলের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন, সেইরকম ২৩ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করল নদীয়া জেলা তৃণমূল কংগ্রেস। একইসঙ্গে ৮ জন দলবিরোধী নেতাকে বহিষ্কার করল পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল কংগ্রেস।

এদিন বহিষ্কারের নির্দেশের পরই সুর নরম তৃণমূলের বিক্ষুব্ধদের। ‘নির্বাচনে লড়বেন না, জানিয়ে দিলেন তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ ২৮ নির্দল’। উত্তর ২৪ পরগনার ২৫ পুরসভায় ৫৭ জন তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নির্দল। ৫৭ জনের মধ্যে ২৮ জন বিক্ষুব্ধর ভোটে না লড়ার সিদ্ধান্ত। দাবি তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের।

তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য অথচ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নির্দল বা অন্য দলের হয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন এরকম যে প্রার্থীরা রয়েছেন তারা যদি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিজেদের প্রচার ছেড়ে  দলীয় প্রার্থীর সমর্থন না করেন তাহলে তাদেরও বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা তৃণমূল কংগ্রেস। বারাসত লোকসভার সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য দু’জনেই যৌথভাবে দলের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন।

অন্যদিকে, নদিয়া জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের পৌর নির্বাচনের প্রস্তুতি সভার মঞ্চ থেকে নির্দল প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, যারা দলের তরফে বারবার বলা সত্ত্বেও দলের কথা শোনেননি, নির্দল হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেসের পরিচিত মুখ যারা তাদের তালিকা তৈরি হয়ে গিয়েছে। “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে তারা দল করতেন কিন্তু তাদের নিজেদের প্রতি আনুগত্য এবং নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করবার জন্যই নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাদের সকলকেই বহিষ্কার করার তালিকা তৈরি হয়েছে এবং আজ সন্ধ্যা থেকেই তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে,” বলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

নির্দল হিসেবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর অনেক বিক্ষুব্ধ নেতাকেই সতর্ক করেছিল দল। শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে বারবার বার্তা দেওয়া হয়েছিল যাতে তাঁরা মনোনয়ন তুলে নেন ও তৃণমূলের হয়ে প্রচার করেন। অন্যথায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও বার্তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরই যাঁরা মনোনয়ন তোলেননি, তাঁদের বহিষ্কার করার কাজ শুরু হয়ে গেল। একাধিক জেলায় ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজনকে সরানো হয়েছে দল থেকে। তাঁদের ৬ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা নেতৃত্ব। পুরুলিয়া, দুবরাজপুর, ঝাড়গ্রাম, নদিয়ায় বহিষ্কার করা হচ্ছে নেতাদের।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার দলের ‘গোঁজ’ প্রার্থীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে সদ্য প্রাক্তন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় দলীয় কর্মীদের হয়ে প্রচারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর অন্যথা হলে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। দলকে যারা চাপ দিয়ে বেকায়দায় ফেলতে চান যারা ও দলে থেকে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন তাদের ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়ার হয়েছিল।

ঝাড়গ্রাম
ঝাড়গ্রাম থেকে দুজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একজন, নবু গোয়ালা, ঝাড়গাম জেলা কমিটির সদস্য। ১৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন তিনি। এছাড়া বহিষ্কার করা হয়েছে রবীন মাহাতোকেও, তিনি প্রাক্তন কাউন্সিলর। বর্তমানে ১৩ নম্বরের নির্দল প্রার্থী তিনি।

পুরুলিয়া
পুরুলিয়ায় মোট আটজনকে একসঙ্গে বহিষ্কার করা হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁদের নাম ঘোষণা করেছেন তৃণমূল  সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া। সেই তালিকায় রয়েছেন, চিকু চন্দ্র, সোমনাথ কর্মকার, কার্তিক বাউরি, দোলন ঘোষ, দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়, রঞ্জিত দত্ত, রুমকি কর্মকার ও মৌসুমী ঘোষ।

দুবরাজপুর
মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা এ দিন দুবরাজপুরে জানিয়েছেন, যাঁরা তৃণমূলে থেকে নির্দল প্রার্থী হয়ে লড়াই করছেন, তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হল। ১ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী ফকির বাউরি, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী ভূতনাথ মণ্ডল, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী শেখ নুরমহম্মদকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এ দিন। মন্ত্রী বলেন, ‘তাঁরা যদি জিতে ভাবে তৃণমূলে যোগদান করবে তাহলে সে গুড়ে বালি। আর কোনও নেতা যদি ভাবেন তাঁদের দলে ঢুকবেন তাহলে সেই নেতার জন্য ভাবতে হবে।’

পশ্চিম মেদিনীপুর
মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র এ দিন সাংবাদিক সম্মেলন করে ভানুপদ সাহা সহ তাঁর চার জন অনুগামীকে দল বিরোধী কার্যকলাপের জন্য তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করেন। এই ব্যাপারে ভানুপদ সাহা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের তিন বারের কাউন্সিলর। চার নম্বর ওয়ার্ডের ভূমি পুত্র হিসেবে তিনি সবসময় মানুষের পাশে থাকেন বলে জানিয়েছেন। তাঁকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও দল টিকিট দেয়নি বলে অভিযোগ।

কিন্তু স্থানীয় স্তরের নির্বাচনে এই শৃঙ্খলার বাঁধুনি তৃণমূল কতটা রাখতে পারবে তা নিয়েও কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কারণ দু’দিন ধরে ববি হাকিম সহ শীর্ষ নেতৃত্ব একই কথা বলছেন। তাতে খুব একটা কাজ হয়েছে বলে মনে করছেন না অনেকে। এখন দেখার দিদির ধমকে শেষ পর্যন্ত কী হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here