দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ ১০৮ টি পুরসভার ভোটে দুটি প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হয়েছিল তৃণমূলের। শুধু বিভ্রান্তি তৈরিই নয়, মনোনয়নও জমা পড়েছিল সেই দুই তালিকার ভিত্তিতেই। এ বার দলের স্বীকৃত তালিকার বাইরে যাঁরা নির্দল হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ শুরু করল তৃণমূল কংগ্রেস।

যাঁরা লড়াইয়ে আছেন, সরে দাঁড়ান! কড়া ব্যবস্থা সত্ত্বেও কিছু জায়গায় শাস্তি ঘোষণা করা হলেও বহু জায়গায় তা করতে পারেননি জেলা নেতৃত্ব। দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলির এই অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরে।

এদিকে উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক পুরসভায় গোঁজ রয়েছে।

জেলায় জেলায় দলীয় শৃঙ্খলার প্রশ্নে গোঁজ প্রার্থীদের বহিষ্কার শুরু করল তৃণমূল কংগ্রেস৷ দলের নজরে কলকাতার পাশ্ববর্তী দুই জেলা উত্তর ২৪ পরগণা ও হুগলি । ইতিমধ্যেই দুই জেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কো-অর্ডিনেটররা জেলা সভাপতিদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চলেছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর।

ইতিমধ্যেই তৃণমূলের তরফে প্রতিটি জেলায় দলীয় সিদ্ধান্তের কপি পাঠানো হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরে না দাঁড়ালে, দলীয় প্রার্থীর হয়ে ভোট প্রচারে না নামলে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু জেলায় এই পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মনোনয়ন প্রত্যাহারের সরকারি সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে তৃণমূলের তরফে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে গোঁজ প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলা হয়েছিল। তা না করলে দল যে কড়া পদক্ষেপ করবে সে কথাও জানিয়েছিলেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেই মতো বৃহস্পতিবার একাধিক জেলায় বহু ‘ নির্দল’ প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূলের সংশ্লিষ্ট জেলা নেতৃত্ব। পার্থবাবু এ দিন বলেন, ‘‘এটা শৃঙ্খলার প্রশ্ন। জেলায় জেলায় বহিষ্কার শুরু হয়েছে। এখনও যাঁরা লড়াইয়ে আছেন, তাঁদের বলব, সরে দাঁড়ান। দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নেমে পড়ুন।’’

বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ায় ৮ জন, বীরভূমে তিনজন এবং নদিয়ায় ২৩ জনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। নদিয়ার শুধু কৃষ্ণনগর পুরসভার ভোটেই দলের শাস্তির কোপে পড়েছেন একডজনের বেশি স্থানীয় নেতা-কর্মী। দোর্দণ্ডপ্রতাপ অনুব্রত মণ্ডলের জেলা বীরভূমের দুবররাজপুরে তিন বিক্ষুব্ধ প্রার্থীকে এ দিন বহিষ্কার করা হয়েছে। এ দিন একটি কর্মিসভায় দলের এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন জেলার নেতা তথা মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ।

কিন্তু দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলির অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরে। যদিও এদিন বহিষ্কারের নির্দেশের পরই সুর নরম তৃণমূলের বিক্ষুব্ধদের। ‘নির্বাচনে লড়বেন না, জানিয়ে দিলেন তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ ২৮ নির্দল’। উত্তর ২৪ পরগনার ২৫ পুরসভায় ৫৭ জন তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নির্দল। ৫৭ জনের মধ্যে ২৮ জন বিক্ষুব্ধর ভোটে না লড়ার সিদ্ধান্ত। দাবি তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের।

দলের বিভীষণদের শায়েস্তা করতে ও গোঁজ প্রার্থীর সমস্যা এড়াতে দলের মহাসচিবের নির্দেশকে কার্যকর করতে উঠে পড়ে লেগেছে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। বারাসত লোকসভার সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য দু’জনেই যৌথভাবে দলের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন।

উত্তর ২৪ পরগণায় দলের অন্যতম কো-অর্ডিনেটর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, “দলের কড়া নির্দেশের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করি যারা গোঁজ হয়ে দাঁড়িয়েছেন তারা দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন।”

তবে প্রকৃত চিত্র বলছে অন্যকথা৷ উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক পুরসভায় গোঁজ রয়েছে। দমদম অঞ্চলের এক প্রাক্তন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ থাকায় দল তাঁকে প্রার্থী করেনি। বৈভব সংক্রান্ত অভিযোগেই তাঁকে এ বার প্রার্থী করেনি তৃণমূল। কিন্তু নির্দল হিসেবে তিনি স্বমহিমায় রয়েছেন ‘দলেরই একাংশে’র সাহায্যে। তিনিও মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি, দলও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।

এই জেলার বনগাঁ, হাবড়া, অশোকনগর এবং বারাসাত পুরসভার গোঁজ সম্পর্কেও এখনও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে দলের ভিতরেই। এ দিন এ সব নিয়ে জেলার নেতারা বৈঠক করলেও সমাধানসূত্র মেলেনি।
হুগলির দলের তালিকার বাইরে প্রার্থীর সংখ্যা অনেক। জেলার ১২টি পুরসভার মধ্যে উত্তরপাড়ায় ১২, ডানকুনিতে ৫, বৈদ্যবাটিতে ১৩, চাপদানিতে ২, শ্রীরামপুরে ১ এবং আরামবাগে ৩ জন নির্দল প্রার্থী রয়েছেন। দলের তরফে কড়া বার্তা দেওয়া সত্ত্বেও তাঁদের মধ্যে মাত্র ২ জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

দলীয় সূত্রে খবর, গোঁজ প্রার্থীর সমস্যা তীব্র হলেও বহু জেলায় তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও করেননি জেলা দলের নেতারা। পার্থবাবু অবশ্য দলের অবস্থান জানিয়ে ফের এ দিন বলেন,দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “এখনও যাঁরা লড়াইয়ে আছেন তাদের বলব সরে দাঁড়ান৷ দলের মনোনীত প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নেমে পড়ুন। দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলুন।” প্রসঙ্গত আজ তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্যদের বৈঠক।

তৃণমূল সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবারই জেলায় জেলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি বার্তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলা সভাপতিদের মাধ্যমে৷

প্রসঙ্গত, কলকাতা পুরসভায় ছিল তিন জন। শেষ পর্যন্ত দিদির পাড়ার রতন মালাকারকে মনোনয়ন তোলাতে পেরেছিল তৃণমূল। কিন্তু প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায় এবং সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বহিষ্কার করেছিল শাসকদল। কিন্তু ১০৮ পুরসভায় সংখ্যাটা অজস্র। টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়া সেই নেতাদের উদ্দেশেই কড়া বার্তা গেল জেলায় জেলায়।

কিন্তু স্থানীয় স্তরের নির্বাচনে এই শৃঙ্খলার বাঁধুনি তৃণমূল কতটা রাখতে পারবে তা নিয়েও কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কারণ দু’দিন ধরে ববি হাকিম সহ শীর্ষ নেতৃত্ব একই কথা বলছেন। তাতে খুব একটা কাজ হয়েছে বলে মনে করছেন না অনেকে। এখন দেখার দিদির ধমকে শেষ পর্যন্ত কী হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here