দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দু’দিনের সফরে বৃহস্পতিবার ফ্রান্সে গিয়েছেন (Modi in France)। মোদীকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্নে। শুক্রবার তিনি সেখানে বাস্তিল উৎসবে বিশেষ অতিথি হিসাবে যোগ দেবেন। তার আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘লেজিয়ঁ দ্য নর’ (Legion of Honour) প্রদান করেছেন।

বেসামরিক সম্মান হলেও সামরিক-অসামরিক দুই ক্ষেত্রেই বিশেষ কৃতিত্বের জন্য এই পুরস্কার দিয়ে থাকে ফরাসি সরকার। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে এই সম্মান দেওয়া হল তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন এবং জনসেবার কারণে। সম্মান প্রদানের প্রতীকি হিসাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে গ্র্যান্ড ক্রশ পরিয়ে দেন ইমানুয়েল মাকরঁ।

রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে অতীতে এই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, কিং চার্লস, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, জার্মানির প্রাক্তন চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল প্রমুখ। ফরাসি সম্মানটি নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঝুলিতে যুক্ত হল ১৪টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার।

এর আগে চলচ্চিত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসাব প্রবাদপ্রতিম দুই বাঙালি সিনেমা ব্যক্তিত্ব সত্যজিৎ রায় ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে এই সম্মান দিয়েছে ফরাসি সরকার। ১৮০২ সাল থেকে ফরাসি সরকার এই সম্মান প্রদান করে আসছে, যার সূচনা করেছিলেন সম্রাট নেপোলিয়ন।


প্রধানমন্ত্রীর এবারের ফ্রান্স সফরের মূল বিষয় দু-দেশের সম্পর্কের ২৫ বছর উদযাপন। তবে দু’দিনের সফরে সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে প্রতিরক্ষা।

ফ্রান্সের কাছ থেকে ২৬টি মেরিন রাফাল যুদ্ধ বিমান কেনা নিয়ে প্রাথমিক নথিপত্র স্বাক্ষরিত হতে পারে। আগেই ৬০ হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে ভারত ৩৯টি রাফাল যুদ্ধ বিমান কিনেছে। সেই বিমান চুক্তি নিয়ে দেশে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা মোদী সরকারকে চেপে ধরেছিল। বিরোধীদের অভিযোগ, বিমান কেনার বিনিময়ে অনিল আম্বানির সংস্থার সঙ্গে ফ্রান্সের বিশেষ বোঝাপড়া হয়েছে ভারতে বিমান তৈরি করার বিষয়ে।

প্রধানমন্ত্রীর গতমাসের মার্কিন সফরেও গুরুত্ব পেয়েছিল প্রতিরক্ষা। আসলে ভারত মহাসাগরকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চিনের ক্রমবর্ধমান সামরিক প্রভাব বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তিত ভারত। তাই প্রতিরক্ষার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ জোর দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমলে, গত কয়েক বছরে ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতের অংশিদারিত্ব ক্রমেই বাড়ছে। প্রতিরক্ষা থেকে বাণিজ্য – বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠছে। তবে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে ফ্রান্সের সম্পর্ক প্রায় চার দশকের পুরনো। বৃহস্পতিবারই (১৩ জুলাই), দুই দিনের সফরে ফ্রান্সের প্যারিসে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সফরের প্রথমদিনই সেখানে প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।

প্রবাসীদের সামনে ভাষণ দিতে গিয়েই ফ্রান্সের সঙ্গে তাঁর এই পুরোনো সম্পর্কের কথা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি জানান, প্রায় ৪০ বছর আগে ভারতের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে আহমেদাবাদের ‘অ্যালিয়াঁস ফঁসে’র সদস্যপদ গ্রহণ করেছিলেন। গোটা বিশ্বেই ফরাসী ভাষা ও সংস্কৃতির প্রচার করে থাকে ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ‘অ্যালিয়াঁস ফঁসে’।

প্যারিসের ‘লা সেইন মিউজিকাল’ প্রেক্ষাগৃহে, ফ্রান্সে বসবাসকারী ভারতীয়দের সামনে বক্তৃতাদিতে গিয়ে, প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে ফ্রান্সের প্রতি আমার ভালবাসা দীর্ঘদিনের। প্রায় ৪০ বছর আগে গুজরাটের আহমেদাবাদে ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ‘অ্যালিয়াঁস ফঁসে’র যাত্রা শুরু হয়েছিল। আজ সেই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রথম ভারতীয় সদস্য আপনাদের সামনে বক্তৃতা দিচ্ছেন। কয়েক বছর আগে, ফরাসি সরকার আমাকে সেই পরিচয়পত্রের একটি ফটোকপি দিয়েছিল। আমার কাছে এটি আজও মূল্যবান। ”

প্রধানমন্ত্রী তাঁর আলিয়াঁস ফঁসের সদস্যপদ গ্রহণের কাহিনি জানানোর পরই, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সেই পরিচয়পত্রের একটি ছবি প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, পরিচয়পত্রটি ১৯৮১ সালের ৫ ডিসেম্বরের। ১২৫ টাকা দিয়ে সদস্যপদ নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী।

১৪ জুলাই ফ্রান্সের জাতীয় দিবস। ফরাসি বিপ্লবের সময় এই দিনেই ধ্বংস হয়েছিল বাস্তিল দুর্গ। ফ্রান্সের জাতীয় দিবসের আগে সেই দেশের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনিই এই অনুষ্ঠানের মূল অতিথি। তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ফ্রান্সকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।

ফ্রান্সের জাতীয় দিবসের কুচকাওয়াজে যোগ দিতে পারার সুযোগ পাওয়ায়, এই সফর তাঁর কাছে বিশেষ সম্মানের বলে জানিয়েছে তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি বেশ কয়েকবার ফ্রান্সে এসেছি। কিন্তু, আমার এবারের সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ফ্রান্সের জাতীয় দিবস উপলক্ষে তিনি ফ্রান্সের জনগণকে অভিনন্দন জানান ৷ আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য তাঁদের ধন্যবাদ। বন্ধু ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর সঙ্গে আগামীকাল জাতীয় দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নেন৷ এটা ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে অটুট বন্ধুত্বের প্রতিফলন বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here