দেশেরসময়, কলকাতা: শুক্রবার বৃষ্টিস্নাত একুশের জুলাইয়ের মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে বললেন, “আমাদের চাওয়ার কিছু নেই। ইন্ডিয়া লড়বে। পাশে থাকবে তৃণমূল। জয় বাংলার মতো এবার জয় ইন্ডিয়া স্লোগানকে জনপ্রিয় করে তুলতে হবে”।

সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর বৈঠকে ২৬টি বিরোধী দলের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সেখানে বিজেপি নেতৃত্বাধীন NDA-র বিরুদ্ধে INDIA জোট তৈরি করেছে ২৬টি বিরোধী দল। ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে সেই নিয়ে মুখ খুলছেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী।

লাখ লাখ তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ও দলীয় নেতাদের সাক্ষী রেখে মমতা বলেন, ‘আমি খুশি, ২০২৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে আমরা INDIA নামে একটি জোট তৈরি করতে পেরেছি। গোটা ভারতবর্ষে এই ব্যানারে লড়াই হবে। আমরা কোনও চেয়ারকে কেয়ার করি না। আমরা চাই গোটা দেশ থেকে বিজেপি রাজনৈতিকভাবে বিদায় নিক।’

মমতা আরও বলেন, ‘বিজেপিকে আর সহ্য করা যাচ্ছে না। বিজেপি সব সীমা পার করে ফেলেছে। আমি বক্তৃতা দিতে বেশি পছন্দ করি না। মণিপুরে কী ঘটনা ঘটল! আমি এখান থেকে বলছি আমরা এবং গোটা দেশ মণিপুরে পাশে রয়েছি। বেটি বাঁচাও বেটি পড়াওয়ের নামে স্লোগান দিচ্ছে, আর এদিকে এমন লজ্জাজনক ঘটনা ঘটছে।’

পর্যবেক্ষকদের মতে,বিরোধী জোটকে যেন নেতৃত্ব দিতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী। জোটের ভবিষ্যৎ কর্মসূচীর সুর যেন বেঁধে দিতে চেয়েছেন তিনি। এদিন একুশের মঞ্চে মণিপুরে মা বোনেদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তার পর মমতা বলেন, “অরবিন্দের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।

আমরা কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী মিলে মণিপুরে যেতে পারি কিনা তা দেখতে বলেছি। ওখানে গিয়ে ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করব আমরা। সেখানকার মানুষের পাশে দাঁড়ব।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগে এদিন একুশের মঞ্চে দেওয়া বক্তৃতায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বারবার জয় ইন্ডিয়া স্লোগান তুলেছেন। সেই সঙ্গে বলেছেন, গোটা বাংলায় ইন্ডিয়া জিতবে। যা থেকে বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে বৃহত্তর জোটের সম্ভাবনাও তিনি উস্কে দিয়েছেন বলে অনেকের মত।


পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, মমতা-অভিষেকের এই অবস্থান কৌশলগত। একুশের ভোটের পর থেকে বাংলায় সংখ্যালঘু ভোটের বিভাজনের একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল বোঝাতে চাইল নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে ফেলতে ইন্ডিয়ার লড়াইয়ে তৃণমূলও শরিক। অর্থাৎ মোদীকে হারাতে বাংলায় সংখ্যালঘু ভোট যাতে ভাগাভাগি না হয় তা নিশ্চিত করার চেষ্টাও হল।


রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ এও মনে করছেন, আগামী দিনে ‘ইন্ডিয়া’র লড়াইতে বড় ভাবে দেখা যাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সর্বভারতীয় স্তরে বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার কর্মসূচিতে তাঁকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাবে তাঁকে।

২০২২ সালের ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ শেষের পরই রাতে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রীর বাড়িতে অভিযান চালায় ইডি। দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে পার্থকে গ্রেফতার করা হয়। রাশি রাশি টাকা উদ্ধার হয় পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে। এদিনের মঞ্চ থেকে ২১ জুলাইয়ের সভা শেষে ইডি-সিবিআই ‘তৎপরতা’ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তৃণমূলনেত্রী।

মমতা এদিন আরও বলেন, ‘সভা শেষের দু-তিন দিন পর থেকে আবার সিবিআই-ইডি ঘুরে বেড়াবে। আমরা এগুলো জানি। এইসব জেনে বুঝেই আমরা এই লড়াইয়ে নেমেছি। এই লড়াইয়ে হয় আমাকে জেলে পুড়বে নয় আপনাকে গ্রেফতার করবে। কিন্তু এসব আমরা ভয় পাই না। বিজেপির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি থাকবে… ১০০ দিনের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের রাজ্য পরপর পাঁচবার ১০০ দিনের কাজে প্রথম হয়েছে। বাংলার নেতাদের কথায় টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here