দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ১৫ মিনিটের ঝড়ে তছনছ হয়েছে উত্তরবঙ্গের একাংশ। বিপর্যয়ের দিন রাতেই জলপাইগুড়ি পৌঁছেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বর্তমানে উত্তরবঙ্গেই রয়েছেন।

বুধবার চালসার চা বাগান পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষুদ্র চা চাষীদের সমস্যার বিষয়ে চিন্তা প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুমতির আবেদনও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

১ এপ্রিল থেকে উত্তরবঙ্গের বটলিফ ফ্যাক্টারিগুলি ক্ষুদ্র চা চাষীদের থেকে চা পাতা কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। ক্ষুদ্র চা চাষীদের উৎপাদিত কাঁচা পাতায় বিপজ্জনক কীটনাশক নেই এই মর্মে ল্যাবরেটরির শংসাপত্র না থাকলে তাঁরা কাঁচা চা পাতা কিনবেন না বলে জানিয়েছিলেন। কাঁচা পাতায় নিষিদ্ধ কীটনাশক থাকলে উৎপাদিত চায়েও তা থেকে যাবে, ফলে কাঁচা পাতা উৎপাদনে তাঁদের ভূমিকা না থাকলেও বটলিফ ফ্যাক্টারিগুলি এর জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এই আশঙ্কাতেই তাঁরা কাঁচা পাতা কেনা বন্ধ করে দিয়েছে, এরফলে ক্ষুদ্র চা চাষীরা সমস্যায় পড়েছেন। এই বিষয়েই চিন্তা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

বুধবার জনসংযোগ সেরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, প্রকাশ চিকবড়াইক ও নির্মল চন্দ্র রায় তাঁকে জানান উত্তরবঙ্গের প্রায় দশ লক্ষ ক্ষুদ্র চা চাষী রয়েছে, এদের চা বাগানের জমির পরিমান ৫ বিঘা পর্যন্ত। এই সমস্ত ক্ষুদ্র চা চাষীদের চা শ্রমিকও বলা যায়, এরা নিজেরা কাঁচা চা পাতা উৎপাদন করে তা বটলিফ ফ্যাক্টারিতে বিক্রি করে। এই চা বাগানগুলিতে পোকামাকড়ের উপদ্রব আটকাতে ২০১৫ সালে টি বোর্ড একটি নির্দেশ দিয়েছিল যা বাস্তবায়নের কোনও সময়সীমা দেওয়া ছিল না।

এখন এদের উৎপাদিত কাঁচা পাতা কেনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ক্ষুদ্র চা চাষীদের নিজেদের সংশোধন করার একটা সুযোগ দেওয়া হোক বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এখন যাতে ক্ষুদ্র চা চাষীরা কর্মহীন না হয়ে পড়ে, সেটি দেখার জন্য জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা বটলিফ ফ্যাক্টারি গুলোকে অনুরোধ করবেন যাতে তাঁরা চা পাতা কেনা বন্ধ না করে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভোটের পর কৃষি দপ্তর, পরিবেশ দপ্তর, স্বাস্থ্য দপ্তর ও সেচ দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান খোঁজা। আগে সুন্দরবন এলাকায় নোনা জলে ধান চাষ করতে সমস্যা হত, বৈজ্ঞানিকেরা স্বর্ণ ধান বানিয়েছেন, যা নোনা জলেও ভালো হয়, ফলে এখন ভাল ধান উৎপাদন হচ্ছে। তেমনই চা গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতে বিজ্ঞানীরা কাজ করবেন। তবে সেই সময়টুকু দরকার।

এদিন নিরাপত্তা বেষ্টনী সরিয়ে ফের জনতার মাঝে মিশে যেতে দেখা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বুধবার চালসার চা বাগান পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে ঢুকে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে নিজে হাতে চাও বানান।

এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে রাস্তা ও পানীয় জলের বিষয়ে নিজেদের সমস্যার কথা জানান গ্রামবাসীরা। সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, ‘এখানে পঞ্চায়েতের কোনও অফিসার উপস্থিত রয়েছেন কিনা’। এরপরই সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে দ্রুত সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেন তিনি। এরপরই ফেরার সময় একটি চা দোকানে ঢুকে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্ত্রীকে দেখে রীতিমতো শশব্যস্ত হয়ে পড়েন চা দোকানের কর্মী। মুখ্যমন্ত্রীকে চেয়ার দেওয়ার জন্য দৌড়াদোড়ি শুরু হয়। ইশারায় সকলকে থামিয়ে একেবারে দোকানের উনুনশালে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী। নিজে হাতে চা বানান। দিনের শেষে কী রকম রোজগার হয়, তার খোঁজখবরও নেন। 

এদিন ফের বঞ্চনার অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবাসের টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। মু্খ্যমন্ত্রীর এও অভিযোগ, যাদের ঘর ভেঙে পড়েছে তাদের নাম ছিল তালিকায়। কিন্তু কেন্দ্র না বাড়ির টাকা দিচ্ছে, না রাস্তার। 

পাহাড়ের উন্নয়নেও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কোনও ভূমিকা নেই বলে দাবি মমতার। তবে রাজ্য সরকার পাহাড়ের উন্নয়নে সদা তৎপর বলেই জানান মুখ্যমন্ত্রী। সাধারণের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ভোটের সময়ে কোনও রাজনৈতিক দল অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করতেই পারে। তাদের যেন কেউ ক্ষমা না করে। মমতার পরামর্শ, কেউ কোনও উস্কানি বা প্ররোচনায় পা দেবেন না। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here