পৌলমী ব্যানার্জী

মাতৃত্বের অনুভূতি অনন্য, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু অনেক সময়েই সন্তান পেটে নিয়ে নানা অস্বস্তির মুখোমুখি হতে হয় মেয়েদের। বিশেষত ভারতের মতো দেশে গরমকালে, এমনিতেই যখন অস্বস্তি থাকে চরমে, তখন প্রেগনেন্সির ঝঞ্ঝাটও বেড়ে যায় অনেকটাই। বৈশাখ মাসের আগেই জ্বালাপোড়া গরম পড়েছে।

আবহাওয়াবিদদের অনুমান, এ বারে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রিতে উঠতে পারে। কাজই বেলা বাড়লেই লু বইবে। এই গরমে সবচেয়ে বেশি কষ্ট অন্তঃসত্ত্বাদের। কীভাবে গরমের প্রেগনেন্সিতেও একেবারে ফিট অ্যান্ড ফাইন থাকা যায়, জানিয়েছেন ডাক্তারবাবুরা।

ডাঃ সুনির্মল মিত্র

চিকিৎসকদের মতে,  যখন কোনও মহিলা সন্তানসম্ভবা হন, তখন তাঁর শরীরে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে। আর সেই পরিবর্তনগুলিই নানা শারীরিক অস্বস্তির কারণ হতে পারে। তাপমাত্রার পারদ চড়লে পরিস্থিতি হয়ে ওঠে আরও খারাপ। প্রেগনেন্সির সময় ঠিক কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হন মহিলারা? আগে চোখ রাখা যাক সেই তালিকায়।

*প্রেগনেন্সির শুরুর দিকেই থাকে বমি বমি ভাব। এমনকী বমিও হয় মাঝে মাঝেই।


*বদহজম, খিদে না পাওয়া কিংবা গ্যাসের সমস্যা


* প্রেগনেন্সির প্রথম তিন মাস পর পা, পায়ের পাতায় জল জমতে শুরু করে, ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে ইডিমা।


* গর্ভাশয়ের আকার বাড়তে থাকায় প্রেগনেন্সির সময় মাঝে মাঝেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়।


* প্রচণ্ড গরম লাগে।


*একটানা গরমে থাকলে বা অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা যদি বাইরে কাজ করেন আর সেখানে গরমের মধ্যে কাজ করতে হয়, তাহলে রক্তচাপ আচমকা বেড়ে যেতে পারে। এতে ক্ষতি হতে পারে গর্ভস্থ সন্তানের।


গরমকালের প্রেগনেন্সির এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় বাতলে দিয়েছেন ডাক্তারবাবুরা।

*প্রচণ্ড দাবদাহে জল খাওয়ার বিকল্প নেই। গরমে প্রেগনেন্সির সময়ও প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। দিনে অন্তত ৩ লিটার করে জল খাওয়াই বাঞ্ছনীয়। এর পাশাপাশি নারকেলের জল কিংবা তাজা ফলের রস (চিনি ছাড়া) খাওয়া যেতে পারে। জল না খেলে হিট স্ট্রোক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


*প্রেগনেন্সির সময় প্রচুর সবজি, ফল (বিশেষত তরমুজ) খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। দইও খেতে হয় বেশি করে। বিশেষ করে গরমে প্রবায়োটিক খাবার বেশি খেতে বলছেন ডাক্তারবাবুরা। তবে তেল মশলা ঘি-যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল। কমাতে হবে নুন খাওয়াও।


*গরমকালে ঠান্ডা ও সতেজ থাকার অন্যতম সহজ উপায় হল সাঁতার। এছাড়া প্রতিদিন নিয়ম করে সকালে বা সন্ধ্যায় ব্যায়াম করলে শরীর ভাল থাকে। তবে কোনওটাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া করা উচিত নয়। বারবার স্নান করুন, পরিচ্ছন্ন থাকুন ।

*পায়ের দিকে যে রস জমে যায় তার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা দরকার। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে বালিশের উপর পা রেখে বেশ কিছুক্ষণ ব্যায়াম করতে হবে।

*প্রেগনেন্সির সময় বাইরে যাতায়াত করতে হলে গরমকালে সানগ্লাস ব্যবহার করতেই হবে। তাছাড়া রোদের তাপ যাতে সরাসরি গায়ে না লাগে তার জন্য ব্যবহার করতে হবে বড় ছাতা। এক্ষেত্রে সাধারণত সানস্ক্রিন মেখে বেরোনোর পরামর্শই দেন চিকিৎসকরা।


*দুপুরের দিকে অন্তত আধঘণ্টা ঘুম দরকার প্রত্যেক হবু মায়ের। দিনের মধ্যে ওই সময়েই তাপমাত্রা থাকে সবচেয়ে বেশি।

ডাঃ পেভেল মিত্র 

গরমে নজর দিতে হবে পোশাকআশাকে
হালকা, আরামদায়ক, হাওয়া চলাচল করতে পারে এমন পোশাকই এই সময় পরা উচিত। তাই প্রথমেই মাথায় রাখুন ফ্যাব্রিকের ওড়না। গরমে সুতি, লিনেনের পোশাকই পরুন। সন্ধেবেলা অনুষ্ঠান থাকলে পরতে পারেন হ্যান্ডলুম সিল্ক।

হালকা রঙের পোশাক পরাই উচিত এই সময়ে। হলুদ, সাদা, পিচ বা হালকা নীল রঙের পোশাক পরতে পারেন। একরঙা পোশাক পরলে চেহারার বেঢপ ভাবও অনেকটা ঢাকতে পারবেন। সুতির কেপ্রি, প্যান্ট, লং স্কার্ট এই সময় পরার জন্য খুব ভাল। শপিং মল বা যে কোনও বড় দোকানে প্রেগন্যান্সি পোশাক পাবেন। না হলে একটু বড় সাইজের ঢিলেঢালা পোশাক কিনুন। হালকা সুতির ড্রেস বা ম্যাক্সি ড্রেসও কিন্তু প্রেগন্যান্সির জন্য আদর্শ। যদি আপনি ড্রেস পরতে পছন্দ করেন এবং কমফর্টেবল হন তা হলে নানা রকম ম্যাক্সি ড্রেস দিয়েই ভরিতে তুলতে পারেন আপনার প্রেগন্যান্সি ওয়ার্ডরোব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here