বিজেপি থেকে তাঁরা যোগদান করেছিলেন তৃণমূলে। এমনই কিছু মুখের উপর ভরসা রাখল তৃণমূল। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্বজিৎ দাস , কৃষ্ণ কল্যাণী, মুকুটমণি অধিকারী, এবং বিপ্লব মিত্র। রবিবার ব্রিগেডে জনগর্জন সভা থেকে লোকসভা নির্বাচনের জন্য ৪২ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করল তৃণমূল। এই তালিকায় রয়েছে একাধিক চমক।

বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বিধানসভা নির্বাচনের পর যোগদান করেছিলেন তৃণমূলে। তাঁকে বনগাঁ থেকে প্রার্থী করল রাজ্যের শাসক দল।

পার্থ সারথি নন্দী ,দেশের সময় : মূল মঞ্চের সামনে ৩২০ ফুট লম্বা ব়্যাম্প। সামনে তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পিছনেই দলের ৪২ জন প্রার্থী। দলের সুপ্রিমোর সঙ্গে ব়্যাম্পে হেঁটে জনসাধারণের মাঝে পৌঁছলেন তৃণমূল প্রার্থীরা। রবিবাসরীয় দুপুরে এভাবেই একের পর এক চমকে ব্রিগেড সমাবেশে রীতিমতো ঝড় তুলল শাসক দল।

ব্রিগেডের মঞ্চে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম ঘোষণা পর্বেই মমতার সঙ্গে ব়্যাম্পে হাঁটেন রচনা ব্যানার্জি, দেবাংশু ভট্টাচার্য, জুন মালিয়া, সায়নী ঘোষ, মালা রায়, সুদীপ বন্দোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্র, প্রসূন ব্যানার্জি, শত্রুঘ্ন সিনহা, ইউসুফ পাঠান, শতাব্দী রায়ের সঙ্গে পা মেলালেন বনগাঁর বিশ্বজিৎ দাস। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় সবচেয়ে বড় চমক  বিশ্বজিৎ দাস। বনগাঁ কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছেন তিনি। তাঁর নাম ঘোষণা হতেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন জনসাধারণ।

বনগাঁর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়েছে বিশ্বজিৎ দাসের। বর্তমানে তিনি বাগদার বিধায়ক তথা তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি।

বনগাঁর বিভিন্ন এলাকায় সবুজ আবির খেলতে শুরু করেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। সেই সঙ্গে মিষ্টি বিতরণ  করা হয়।

এদিন ব্রিগেড সমাবেশের পর সদ্য প্রার্থীপদ পাওয়া বিশ্বজিৎ দাসকে প্রশ্ন করা হয় ,বনগাঁর বর্তমান  সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরকে দ্বিতীয় বারের জন্য প্রার্থী করেছে বিজেপি । আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কী ভাবে তাঁকে দেখছেন ?

এই প্রশ্ন শুনতেই পিছনের দিকে মূল মঞ্চের ৩২০ ফুট লম্বা ব়্যাম্পের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন,আসন্ন লোকসভা নির্বাচন এ বনগাঁ  কেন্দ্র থেকে তাঁকে প্রার্থী করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কে  আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই । তারপরই কটাক্ষের সুরে বলেন ,” ঘরকুনো ব্যাঙ , জনসংযোগ বিচ্ছিন্ন প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করিনা শান্তনু কে ।”

লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হতে আরও কিছু দিন বাকি। রবিবার দুপুরে ব্রিগেডের মঞ্চে তৃণমূলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

এখনও সব রাজনৈতিক দলগুলি প্রার্থী ঘোষণা  করেনি।

তবে বলা বাহুল্য ,বনগাঁ লোকসভা আসনে জোরকদমে প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস প্রার্থী হিসেবে  তাঁর নাম ঘোষণার বেশ কিছু দিন আগে থেকেই জোরকদমে জনসংযোগ কর্মসূচি চালিয়ে গেছেন বিভিন্ন  এলাকায়।

পাশাপাশি  বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরকেও তাঁর এলাকায় নানা জনসংযোগ কর্মসূচিতে দেখা গেচ্ছে ইতি মাধ্যেই। দুই দলের দুই নেতার কর্মসূচি ঘিরে সরগরম বনগাঁর রাজনীতি।

লোকসভা ভোটে দুই নেতার রাজনৈতিক লড়াই যে  দেখা যাবে তার আঁচ আগেই পেয়েছে বনগাঁর মানুষ ।

গত বছর থেকে বিশ্বজিৎ এক নাগাড়ে জনসংযোগ চালাচ্ছেন। প্রথমে দিদির দূত হিসাবে গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন। মানুষের অভাব-অভিযোগ, সমস্যার কথা শুনেছেন। কিছু সমস্যার সমাধানও করেছেন।

এরপরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নবজোয়ায় কর্মসূচিতে গাইঘাটার ঠাকুরনগরে এসেছিলেন। এই কর্মসূচি সফল করতেও বেশ কিছু দিন ধরে বিশ্বজিৎ গ্রাম ও পুর এলাকায় ঘুরেছেন। দুর্গা, কালীপুজোর দিনগুলিতে বিশ্বজিৎ পুজোমণ্ডপে গিয়ে, শহরের পথে হেঁটে জনসংযোগ চালিয়ে গিয়েছেন। পুজোর মরসুম শেষ হতেই পঞ্চায়েত ধরে ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসংযোগ করছেন তিনি।

বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার এক একটি পঞ্চায়েতে ঘুরছেন জেলা সভাপতি। সঙ্গে দেখা গেছে স্থানীয় নেতানেত্রীরা। কেন্দ্রের একশো দিনের কাজ প্রকল্পের টাকা আটকে রাখা, আবাস যোজনার টাকা না দেওয়া-সহ নানা বঞ্চনার কথাও তুলে ধরছেন। দুপুরে গ্রামের মানুষের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করছেন। উদ্বাস্তু ও মতুয়া সমাজকে নাগরিকত্ব নিয়ে আশ্বস্ত করছেন।

বিশ্বজিতের অবশ্য দাবি, এর সঙ্গে ভোটের সম্পর্ক নেই। তাঁর কথায়, “আমরা ভোটের কথা ভেবে মানুষের সঙ্গে থাকি না। বছরভর মানুষের পাশে থাকি। তাঁদের সমস্যা মেটাই।” বিশ্বজিতের দাবি, “গত পাঁচ বছর শান্তনু ঠাকুরকে দেখা যায়নি। এলাকায় কোনও উন্নয়ন করেননি। এখন ভোটের সময়ে বসন্তের কোকিলের মতো মানুষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে কোনও লাভ হবে না।”

অন্য দিকে, শান্তনু ঠাকুরও জোরকদমে জনসংযোগ শুরু করেছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচি, সরকারি কর্মসূচির সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছেন। নিজের সাংসদ তহবিলের টাকায় হোক বা সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন। রোজই রাজনৈতিক, সামাজিক, সরকারি বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগদান করছেন। মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করছেন। সমস্যা, অভাব-অভিযোগের কথা শুনছেন।

শান্তনুর দাবি, বনগাঁ লোকসভা এলাকায় ইতিমধ্যেই তিনি ৬টি অ্যাম্বুল্যান্স দান করেছেন। একশোর উপরে হাইমাস্ট আলো বসিয়েছেন। সাড়ে এগারো হাজার প্রতিবন্ধী মানুষকে ট্রাই সাইকেল-সহ নানা সরঞ্জাম তুলে দিয়েছেন। স্নানের ঘাট নির্মাণ করেছেন। ইছামতী নদী সংস্কারের কাজ শুরু করিয়েছেন। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষদের আশ্বাস দিয়ে শান্তনু জানাচ্ছেন, লোকসভা ভোটের আগে নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন (সিএএ) কার্যকর হবে বলে তিনি আশাবাদী। কর্মসূচিতে শান্তনুর সঙ্গে থাকছেন বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল-সহ বিজেপি নেতারা। তবে স্থানীয় বিধায়কদেরকে তাঁর সঙ্গেদেখা যাচ্ছে না।

বিশ্বজিতের অভিযোগের বিষয়ে শান্তনু বলেন, “কোভিডের সময়ে তো আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসংযোগ করব না। তৃণমূল নেতারা দেখে নিন, কোভিডের আগে আমার জনসংযোগ। সর্বক্ষণই মানুষের সঙ্গে ছিলাম। এখনও আছি। ভবিষ্যতেও থাকব।”

পর্যবেক্ষকদের মতে বনগাঁয় এবার লড়াই হবে জমজমাট । শান্তনু বনাম বিশ্বজিৎ ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here