দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ নেত্রীর নির্দেশের পরও জেলায় জেলায় শাসক দলের প্রার্থী বিক্ষোভ চলছেই। কোথাও বিক্ষোভ। কোথাও আবার দলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়ার ঘটনা। নেত্রী স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর বা তাঁর সংস্থা আইপ্যাকের সঙ্গে যে ‘সম্পর্ক’ তা দলীয় বিষয় নয় বলেই নিজেই জানিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পাশাপাশি এও জানিয়েছেন, প্রার্থীতালিকা নিয়ে বেশ কিছু জটিলতা দেখা গিয়েছিল। তবে সেসব দ্রুত মিটিয়ে ফেলা হচ্ছে। তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর ঘোষিত প্রার্থীতালিকাই চূড়ান্ত বলে জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু বিরোধ থামছে কই?

প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধানের উপস্থিতিতে বৈঠক করলেন ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মীরা। মঙ্গলবার বনগাঁ পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দাবি ওঠে, যাকে প্রার্থী করা হয়েছে, তাঁকে আগে ওয়ার্ডের মানুষের পাশে কখনও দেখা যায় নি। প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন ওয়ার্ডের কর্মীরা।

বনগাঁ পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডটি মূলত শিমুলতলা এলাকা নিয়ে গঠিত। এই ওয়ার্ড থেকে নির্বাচনে জিতে আসছেন তৃণমূলের জ্যোৎস্না আঢ্য। সেখানথেকেই তিনি পুরপ্রধানও হয়েছেন। এই আসনটি এবার তপশিলি মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় জ্যোৎস্না আঢ্য এবার এই ওয়ার্ড থেকে দাঁড়ানোর সুযোগ পান নি। তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। 

এই ওয়ার্ডে দল এবার প্রার্থী করেছে প্রীতিকণা মন্ডল নামে এক তৃণমূল কর্মীকে। আর তাতেই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার তৃণমূল কর্মীদের একটি বড় অংশের দাবি, প্রীতিকণা মন্ডলকে এর আগে কখনও ওয়ার্ডের মানুষের পাশে দেখা যায় নি। তাঁকে ওয়ার্ডের মানুষ সেইভাবে চেনেন না। তাই এলাকার তৃণমূল কর্মীদের দাবি, অবিলম্বে প্রার্থী বদল করতে হবে।

নিজেদের দাবির সমর্থনে এদিন আয়রণ গেট ক্লাবের মাঠে বৈঠক করেন তৃণমূল কর্মীরা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন প্রধান এবং ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা শঙ্কর আঢ্য। এব্যাপারে তিনি বলেন, ‘নেতা নয়, দলের শেষ কথা বলেন কর্মীরাই। এই ওয়ার্ডে কে প্রার্থী হবেন, সেব্যাপারে দল ওয়ার্ডের কর্মীদের কোনও মতামত নেয় নি। স্বাভাবিকভাবেই কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাঁরা দলের কাছে অবিলম্বে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন।’‌ 

প্রার্থী বদল না হলে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করানো হবে ? ‌এই প্রশ্নের উত্তরে শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন কর্মীরা।’‌ অন্যদিকে, তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী আলোরাণী সরকার জানান, ‘‌বড় দলে ক্ষোভ বিক্ষোভ থাকবে। ২২ টি ওয়ার্ডে ২২ জনের বেশি দাঁড় করানো যাবে না। দু একদিন পর সব ক্ষোভ মিটে যাবে। আর এই ক্ষোভ বিক্ষোভে দলের কোনও ক্ষতি হবে না।’

এদিকে,টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন বনগাঁ পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর কবিতা বালা। এই ঘটনায় তৃণমূলের আভ্যন্তরিন কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এলো। এব্যাপারে বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়ার কটাক্ষ, ‘শুধু একটি নয়, বনগাঁয় তৃণমূলের যা গোষ্ঠীকোন্দল আমার ধারণা বনগাঁ পুরসভার ২২ টি ওয়ার্ডেই নিঅর্দল প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধরা মনোনয়ন জমা দেবেন।’‌

এব্যাপারে এদিন কবিতা বালা জানান, ‘২২ বছর ধরে তৃণমূল করছি। ২০০৫ সালে আমার স্বামী এই ওয়ার্ড থেকে জয়ী হযে পুরপ্রধান হয়েছিলেন। ২০১০ আমি দাঁড়িয়ে জয়ী হই। ২০১৫ সালে’ ফের আমার স্বামী দাঁড়িয়ে জয়ী হন। দলের অসময়েও আমরা দল ছেড়ে যাই নি। এবারে নেতারা বার বার আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, আমার স্বামীকে প্রার্থী করা হবে। কিন্তু তালিকা প্রকাশের পর দেখলাম নাম নেই।’

আশ্বাস পেয়েও টিকিট না পেয়ে শেষ পর্যন্ত এলাকার কর্মীদের দাবি মেনে, তাঁদের চাহিদাকে মান্যতা দিতে কবিতা বালা এদিন নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিলেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা তৃণমূলেই আছি। তৃণমূলেই থাকবো। মন সবসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছে। শুধু আমাদের সঙ্গে সঠিক বিচার না হওয়ায় অন্য প্রতীকে ভোটে দাঁড়ালাম।’‌‌

আর এই পরিস্থিতিতে চরম আতান্তরে পড়েছেন দলের দ্বিতীয় শ্রেণির নেতারা। কী পদক্ষেপ করা উচিত, কীভাবে বিরোধের নিষ্পত্তি তা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (Jyotipriya Mallick) পুরভোটের সমন্বয়কারী কমিটির অন্তর্গত। তাঁর দাবি, দলের কর্মীদের আকাঙ্ক্ষা থাকতেই পারে, তবে সকলের চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়।

জ্যোতিপ্রিয়র কথায়, “দাবি করা অন্যায় নয়। চেষ্টা করেছি যে সকলের কথা মাথায় রেখে সেই মতো সবটা শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো। সেই মতো দল মান্যতা দিয়েছে। সেই ভাবেই প্রার্থীপদ দেওয়া হয়েছে। ৯২% মনোনয়ন দেওয়া হল। পার্থ ভৌমিক, নির্মল ঘোষরাও দায়িত্বে রয়েছেন। উত্তর ২৪ পরগনায় কোনও নির্দল নেই। ক্ষোভ মিটিয়ে দিয়েছি। সবাই রাস্তায় নামছে। পুরোদমে কাজ করতে বলা হয়েছে। দলের কথা সবাইকে মান্যতা দিতে হবে। এখানে আপোষ নয়। মিষ্টি খেতে চান খাওয়াব। কিন্তু দলের কথা শুনতে হবে। নির্দল হিসাবে কেউ জমা দেবে না। আমি এই জেলাকে দীর্ঘদিন ধরে চিনি৷”

কিন্তু তাতেও স্বস্তি হচ্ছে কই? দিন দুই আগেই নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেল থেকে একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেছেন কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র। প্রকাশ্য জনসভায় নাম না করে দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি। এমনকী, মঙ্গলবার একটি সর্বভারতীয় বাংলার নিউজ চ্যানেলের বিশেষ অনুষ্ঠানে লাইভে এসেছিলেন মদন। স্পষ্ট জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কান ভাঙানোর চেষ্টা করছেন অনেক নেতা। যদিও তিনি অভিষেকের পাশে রয়েছেন। তাঁর নেত্রী মমতাই। কার্যত মদনের এই খোলা মন্তব্য ভাল চোখে নিচ্ছে না দল। খোদ ফিরহাদ হাকিম কামারহাটির বিধায়ককে দলের শৃঙ্খলার কথা স্মরণ করিয়েছেন।

অন্যদিকে জ্যোতিপ্রিয়র কথায়, “মদনের সঙ্গে কথা হয়েছে। ও দলের কথায় সম্মতি দিয়েছে। সব প্রার্থীকে জেতাতে হবে। পরিবারতন্ত্রের কোথাও কোনও অভিযোগ নেই। স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, টিকিট একজন করেই পাবে, স্বামী প্রার্থীপদ পেলে স্ত্রী পাবেন না, স্ত্রী প্রার্থীপদ পেলে স্বামী পাবেন না। সমস্ত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে। আমি দলের সৈনিক। যাঁরা জেলার দায়িত্বে আমি তাঁদের সাহায্য করব। মদন-সহ সকলেই সন্তুষ্ট। পরশু থেকেই আমরা প্রচারে নামব।”

বস্তুত, রাজ্যের সর্বত্র পুরভোটের প্রার্থী তালিকা নিয়ে শাসক শিবিরের অন্দরে বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে। পুরসভার ভোট কার্যত মিনি বিধানসভা ভোটের মতো। তাই সকলেই প্রার্থী হতে চান। কিন্তু দলের পক্ষে সকলকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। তবে সকলে যাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে ভোটের ময়দানে সমন্বয়ের পথেই কাজ করেন সে আহ্বানও জানান পার্থ। 

অন্যদিকে, খোদ তৃণমূল নেত্রী স্পষ্টই জানিয়ে দেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সির নির্ধারিত তালিকাই চূড়ান্ত। একইসঙ্গে সোমবারই ভোটকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন জেলার সঙ্গে সমন্বয়কারী নেতার নাম ঘোষণা করা হয়। সেই তালিকায় যদিও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ছিল না। তাতে বিরোধীরা অবশ্য দাবি করেন,  তৃণমূল কার্যত অভিষেক-মমতা এই দুই শিবিরে বিভক্ত। যদিও সে অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

এদিকে বুধবার সকাললে বনগাঁ মহকুমা শাসকের অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হাজির হয়েছেন বনগাঁ পুরসভার ২২ জন তৃণমূল প্রার্থী বলে জানান ৩ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী তথা পুরপ্রশাসক গোপাল শেঠ ৷ তিনি উদ্দিপনার সঙ্গে বলেন ২২টি ওয়ার্ডেই জিতবে তৃণমূল বাকি সব নির্মূল৷

বনগাঁ মহকুমা শাসকের অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন 8 নং ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী তথা প্রাক্তন পুর প্রাধান শঙ্কর আঢ্য-র স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্য ৷ তিনি শঙ্কর আঢ্য-র টিকিট না পাওয়ার ব্যপারে বলেন আমাকে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টিকিট দিয়েছেন মানুষের জন্য কাজ করার জন্য আর শঙ্কর বাবুর জন্য আমাদের মাথার উপরে আছেন মুখ্যমন্ত্রী তিনিই ভাববেন৷

বুধবার সকালে মিছিল করে মহকুমা শাসকের অফিসে আসেন তৃণমূলের প্রাক্তন প্রশাসক গোপাল শেঠ সহ বনগাঁর ২২ টি ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীরা৷তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা বনগাঁ শহরে মিছিল করে প্রার্থীদের নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here