পার্থ সারথি নন্দী, বনগাঁ: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বনগাঁ পুরসভা পরিচালিত মিলনপল্লী ট্রাক পার্কিংয়ের দায়িত্ব নিয়েছে পরিবহণ দফতর৷ এখন পার্কিংয়ের পরিস্থিতি এবং পণ্য বাহী ট্রাক চলাচলের জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা কেমন , তা খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার এলাকা পরিদর্শন করলেন জেলা ও রাজ্যের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকেরা।

পরিদর্শক দলে ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলা শাসক সুমিত গুপ্তা,  রাজ্য পুলিশের এডিজি ট্রাফিক অজয় কুমার এবং ডিআইজি( ট্রাফিক) সুকেশ কুমার জৈন। উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ পুলিশ জেলার সুপার তরুন হালদার, বনগাঁর মহকুমা শাসক প্রেমবিভাস কাঁসারী প্রমুখ। মঙ্গলবার তাঁরা বনগাঁয় আসেন মিলনপল্লিতে ট্রাক পাকিংয়ের পরিকাঠামো ও ট্রফিক পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখেন৷

উল্লেখ্য, রাজ্যের ৮ টি সীমান্তবর্তী স্থলবন্দর সংলগ্ন এলাকায় রাজ্য সরকারের যেসব ট্রাক পার্কিং জোন রয়েছে, সেগুলি এখন থেকে রাজ্যের পরিবহন দপ্তর দেখভাল করবে। মুখ্যমন্ত্রীর এব্যাপারে সাম্প্রতিক নির্দেশের পরে অন্যান্য সীমান্তের মতো বনগাঁ সীমান্তের মিলনপল্লী পার্কিংটিও এখন থেকে পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে রাজ্য পরিবহন দপ্তর। সূচনালগ্ন থেকে এই পার্কিং পরিচালনার দায়িত্বে ছিল বনগাঁ পুরসভা। 

সোমবার বনগাঁ পুরসভার কাছ থেকে দায়িত্বভার গ্রহন করে পরিবহন দপ্তর। এর ফলে বনগাঁ পুরসভার একটি বড় তথা অন্যতম উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেল। দায়িত্ব হস্তান্তরের পর মঙ্গলবার বনগাঁর এই পার্কিং এলাকা পরিদর্শনে আসেন রাজ্যের পদস্থ আধিকারিকেরা। এই পার্কিং এলাকায় কিভাবে কাজ হয়, তা দেখার পাশাপাশি গোটা পার্কিং এলাকা ঘুড়ে দেখেন তাঁরা।

পার্কিংয়ের দায়িত্ব পুরসভার কাছ থেকে হস্তান্তরের পরে পরিবহণ দফতর থেকে কয়েকটি নির্দেশ জারি করা হয়েছে৷ তাতে বলা হয়েছে , আন্তার্জাতিক সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোন জায় গায় ব্যবসায়ীক ভাবে ট্রাক পার্কিংয়ের জন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবেন না ৷ কাউকে তা করতে হলে পরিবহণ দফতর বা জেলাশাসকের অনুমতি লাগবে৷

বনগাঁ শহর এবং সংলগ্ন এলাকা জুড়ে ট্রাক পার্কিং গজিয়ে উঠেছে৷ এর ফলে যানজট সমস্যা হুহু করে বাড়ছে শহরে৷ এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের৷

এখন থেকে পরিবহণ দফতরের পার্কিংয়ে ট্রাক রাখতে হলে তিন হাজার কেজি পণ্যের জন্য ২৪ ঘণ্টায় পার্কিং ফি দিতে হবে ১৫০ টাকা৷ তিন হাজার কেজি থেকে সাড়ে সাত হাজার কেজি পণ্যরাখার জন্য পার্কিং ফি লাগবে ২৪ ঘন্টায় ২০০ টাকা৷ তার বেশি , সাড়ে ষোল হাজার কেজি পণ্যের জন্য পার্কিং ফি দিতে হবে ২৪ ঘণ্টায় তিনশ টাকা৷ব্যবসায়ীদের দাবি আগে ট্রাকের চাকার সংখ্যা অনুযায়ী পার্কিং ফি নেওয়া হত। এখন যে ভাবে ফি ধার্য হল তাতে টাকার অঙ্ক অনেকাই বাড়বে৷ এর ফলে তাঁরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন৷

পেট্রাপোল এক্সপোর্টার্স এ্যান্ড ইমপোর্টার্স ওয়েল ফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ দে বলেন, রফতানি পণ্য পার্কিংয়ে রাখলে তার খরচ আমাদের দিতে হয় ৷ পার্কিংয়ে ট্রাক রাখার পরে পেট্রাপোল বন্দরে আসতে ৩০-৪০ দিন সময় লাগে৷ এই পরিস্থিতিতে পার্কিং ফি বাড়ানোর ফলে আমরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ব। প্রশাসনের কাছে আবেদন, ফি কমানো হোক৷ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা শাসক৷

জেলা শাসক সুমিত গুপ্তা আরও জানান, পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলের জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা কী আছে, তা দেখা হয়েছে৷ পরিবহণ দফতরের পার্কিংয়ে ট্রাক ঢোকা এবং বেরোনোর সব তথ্য পোর্টালে আপলোড করা হবে৷ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে , সেখানে সরাসরি পার্কিং ফি জমা করতে হবে৷এই পার্কিং এর কাজ আরও কিভাবে সহজ এবং স্বচ্ছ করা যায়, তার ভাবনা চলছে।

পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পণ্য রফতানির জন্য রোজ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শ’য়ে শ’য়ে ট্রাক বনগাঁ শহরে আসে৷ ট্রাকগুলি এতদিন পুরসভার পার্কিংয়ে এন্ট্রি করিয়ে সিরিয়াল অনুযায়ী পেট্রাপোল বন্দরে যেত৷ সেই ব্যবস্থা আরও উন্নত এবং সরলীকরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here