দেশের সময় কেন্দ্র সরকারের সিএএ(CAA ) বিজ্ঞপ্তি জারির পরেই বিরোধিতার সুর চড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বিজ্ঞপ্তির বৈধতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের পাশাপাশি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করলেই অনুপ্রবেশকারী হয়ে যাবেন বলেও সতর্ক করেছেন মতুয়াদের। এদিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের পাল্টা দাবি, মতুয়া মহাসঙ্ঘের কার্ড করলেই নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে।

শান্তনুর এই দাবি নতুন করে সংশয় তৈরি করেছে। বনগাঁর মতুয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের কথায়, সে জন্যই সম্ভবত অনেকে শান্তনুদের কার্ড নিয়ে নিজেদের স্তোক দিতে চাইছেন।

সিএএ-র ফলে নতুন করে জটিলতা তৈরি হবে না তো? এখন এমনই প্রশ্ন ঘুরছে মতুয়া তথা নমঃশূদ্রদের একাংশের মনে। নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা তো বটেই, কোচবিহারের মতো উত্তরবঙ্গের রাজবংশী প্রধান জেলার নমঃশূদ্রদের অনেকের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

বুধবার শান্তনু ঠাকুরদের সংগঠন ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের’ দেওয়া একটি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় ঠাকুরবাড়িতে ভিড় দেখা যায়। উপস্থিত লোকজনের অধিকাংশই জানান, নতুন আইনের কিছু বিষয় নিয়ে সংশয় এবং সেই নিয়ে উদ্বেগের জন্যই তাঁরা কার্ড সংগ্রহ করতে এসেছেন।

শান্তনু ঠাকুর নিজে এ দিন প্রশ্নের জবাবে বলেন, “১৯৭১ থেকে ২০১৪ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে যাঁরা এ দেশে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্বের আবেদন করতে হবে। কারণ, ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী, এ দেশে আসা মানুষ উদ্বাস্তু ও শরণার্থী। তাঁরা ভোট দিলেও ভারতের প্রকৃত নাগরিক নন।” শান্তনুর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাঁরা নাগরিক বলে নথি নেই। কেন্দ্রের নিয়মমতো তাঁরা উদ্বাস্তু। তাই ভোটার বা আধার কার্ড থাকলেও মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষ পাসপোর্ট তৈরি করতে গেলে পুলিশ (ডিআইবি) ১৯৭১ সালের আগের জমির দলিল দেখতে চায়।

শান্তনুর এই দাবি নতুন করে সংশয় তৈরি করেছে। বনগাঁর মতুয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের কথায়, সে জন্যই সম্ভবত অনেকে শান্তনুদের কার্ড নিয়ে নিজেদের স্তোক দিতে চাইছেন। মতুয়াভক্ত বনগাঁ পুরসভার হেল্থ অফিসার সজল বিশ্বাস বলেন, শান্তনুদের কার্ড সরকারি নথি নয়। তাঁর মতে, এই কার্ড কেউ  নিয়ে নিজের মতো করে সন্তুষ্ট হলে সমস্যা নেই। তবে এর কোন ভিত্তি আছে বলে আমার জানা নেই ।

 “সিএএ বাতিল হোক। কারণ, এখানে নিঃশর্ত নাগরিকত্বের কথা নেই। আবেদন করলে নাগরিকত্ব চলে যাওয়ার আশঙ্কা বরং থাকছে।” সজলের কথায়, “আমরা চেয়েছিলাম, ২০১৪ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষ যাঁরা এ দেশে এসেছেন, তাঁদের কোনও রকম শর্ত ছাড়া নাগরিক ঘোষণা করা। সিএএ-তে নিঃশর্ত নাগরিকত্বের কথা নেই।” উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার মতুয়াভক্ত বিশ্বরঞ্জন রায় বলেন, “উদ্বেগের মধ্যে আছি। জানি না আবেদন করব কি না! সকলে মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। আবেদন না করলে যদি পরে কোনও সমস্যা হয়!” 

তৃণমূলের মমতাবালা ঠাকুর বলেন, “ওঁরা (অমিত শাহেরা) বলছেন, নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দিচ্ছি। তা হলে এত শর্ত কেন? ন’রকম নথি দিতে হবে। এত নথি কার কাছে আছে?”

গত সোমবার থেকেই হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরের সামনে ডংকা, কাঁসর বাজিয়ে কীর্তন করছেন। জয়ধ্বনি দিচ্ছেন। এমনিতেই সারা বছর ঠাকুরবাড়ি সংলগ্ন বিজেপি প্রভাবিত অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে সঙ্ঘের সদস্যপদের জন্য মতুয়া কার্ড নিতে দেখা যায় মতুয়াদের। কেউ কেউ আবার মতুয়া কার্ড রিনুয়াল করাতেও আসেন।

সদস্যপদের কার্ডের জন্য টাকা দিতে হয় মতুয়াদের। সিএএ চালুর বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পর সেই মতুয়া কার্ড করার প্রবণতা বেড়েছে। বুধবার যেমন বিজেপি প্রভাবিত অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নতুন কার্ড করা এবং কার্ড রিনুয়ালের জন্য অনেককে দেখা গেল।

মতুয়া কার্ড থাকলে নাগরিকত্ব পাওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না বলে কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের বক্তব্যের পর বিজেপি প্রভাবিত সংগঠনের কার্ড করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে মতুয়াদের একটা অংশের মধ্যে। এর বাইরে মতুয়াদের একটা বড় অংশও আবার নতুন করে নাগরিকত্বের জন্য আবেদনে অনীহা প্রকাশ করছেন। আবেদন করলেই চিহ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করেছেন তাঁরা।

বিজ্ঞপ্তির বিরোধিতায় ঠাকুরবাড়িতে অনশন করার ভাবনাও রয়েছে তাঁদের। তৃণমূলের অভিযোগ, বনগাঁর সাংসদ হওয়ার পরেই মতুয়া কার্ড করানোর জন্য সাধারণ মতুয়াদের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন শান্তুনু ঠাকুর। এই প্রসঙ্গে শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘মতুয়া কার্ড করার প্রবণতা বৃদ্ধি বড় কথা নয়। আমি তো গ্যারান্টি দিয়েই বলছি কোনও নথি আমার মতুয়া ভাই-বোনেদের লাগবে না।

কারও যদি কোনও ডকুমেন্টস না থাকে, সেক্ষেত্রে সেলফ ডিক্লারেশন দেবেন আপনারা। আমি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে, একজন মন্ত্রী হিসেবে এ কথা বলছি। মতুয়া মহাসঙ্ঘ থেকে কার্ড করুন। এই কার্ড থাকলে আপনি সংগঠনের একজন সদস্য হলেন। আপনাকে দেখি কে নাগরিকত্ব পাওয়া আটকায়?’

মুখ্যমন্ত্রীর বাজে কথা বলছেন বলেও কটাক্ষ করেন শান্তনু। শান্তনুকে নিশানা করেছেন তৃণমূল প্রভাবিত অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। তিনি বলেন, ‘মতুয়া কার্ড থাকলেই নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কি কিছু বলেছে? আসলে মতুয়াদের ভাঁওতা দিচ্ছে শান্তনু ঠাকুর। মতুয়া কার্ড করে আসলে নিজের আয় বাড়াচ্ছে।’
বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘ধর্মীয় কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র হতে পারে না। বিজ্ঞপ্তিতেও নেই। মতুয়া কার্ড করিয়ে এর আগেও শান্তনু ঠাকুর কোটি কোটি টাকা তুলেছেন। ফের শুরু করেছেন।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here