অর্পিতা বনিক : সকালে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দিন শুরু করেন অনেকে। এরপর কাজের ফাঁকে নিজেকে সতেজ রাখতে এক-দুই কাপ লিকার অথবা দুধ চা খান। সন্ধ্যায় বন্ধুদের আড্ডায় কিংবা সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে চায়ের জুড়ি মেলা ভার।

চা জড়িয়ে আছে বাঙালির প্রতিটিক্ষণে।সারাদিন নানান স্বাদের চায়ে তৃষ্ণা মেটান চা প্রেমীরা। দুধ, চিনি দিয়ে চা খান অনেকে। বাঙালির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে যাওয়া এই লাল চা, দুধ চা, সবুজ চা-র কথা – চা প্রেমীরা সবাই জানেন।

কিন্তু নীল রঙের চা-ও যে রয়েছে, তা কি কেউ জানেন? এই চা এখন বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠছে। যাঁদের চা থেকে উপকার পেতে গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে, তাঁরা চাইলেই এখন অভ্যাস একটু পরিবর্তন করে নীল চা খাওয়া শুরু করতে পারেন।  দেখুন ভিডিও –

স্বাস্থ্যগুনে নাকি সবার উপরে নীল অপরাজিতা ফুল দিয়ে তৈরি নীল চায়ের মধ্যেই নাকি আছে নানা রোগ থেকে মুক্তির পথ ৷

নীল চায়ের অনেক উপকারিতাও রয়েছে। যেমন, হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায়, চর্বি কমাতে, মেদ ঝরাতে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে, শরীরের কোলাজেনের মাত্রা বাড়াতে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এই চা অনেক কার্যকরী। 

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণে যকৃতের যেসব সমস্যা দেখা দেয়, সেগুলো প্রতিরোধে নীল চা বেশ উপকারী। নীল চায়ে থিয়ানাইন থাকায় নিয়মিত এই চা খেলে শরীরে মেটাবোলিজম বৃদ্ধি পায়। দিনে অন্তত দু’বার এই চা খেলে শরীরে হেপাটিক মেটাবোলিজম বৃদ্ধি পায় ও কোলেস্টেরল কমে যায়। 

বিশেষজ্ঞদের কথায়, এই নীল চায়ে প্রচুর পরিমাণ আন্টি অক্সিডেন্ট থাকে। যা শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় ক্লান্তি বোধ দূর করতেও সাহায্য করে৷

যে কারণে এই চায়ের চাহিদা ও দামও একটু বেশি ৷ ভিয়েতনাম সহ বেশ কয়েকটি দেশে নীল চায়ের জনপ্রিয়তা রয়েছে বহুদিন আগে থেকেই ৷ ভারতেও এই চায়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে ৷

এই রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার গ্রামেই তৈরী হচ্ছে বিশেষ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ব্লু টি৷ এই নীল চা বা ব্লুটি দিশা দেখাচ্ছে গাইঘাটা ব্লকের ফুল চাষীদের ৷
এই চা তৈরী করে একদিকে যেমন বাড়ছে কর্মসংস্থান। অন্য দিকে অপরাজিতা ফুল শুকিয়ে স্বনির্ভর হচ্ছেন এই গ্রামের মহিলারাও৷

২০১৮ সালে বাড়িতে নীল চা তৈরি করার কাজ শুরু করেন গাইঘাটার বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা, গোবিন্দ বিশ্বাস৷ গড়ে তোলেন কলকাতা ফার্মার্স নামে একটি সংস্থা এই সংস্থার অধীনে জনা চল্লিশ চাষীদেরকে নিয়ে নীল ফুল চাষে নেমেছেন গোবিন্দ বাবু ৷ তাঁদের গাছের ফুল দিয়েই তৈরি হচ্ছে ব্লু টি৷

বর্তমানে দিল্লি, মুম্বাই ও গোয়ায় বিভিন্ন কোম্পানিতে এই নীল চা বা ব্লুটি সরবরাহ করছেন গোবিন্দ বাবু। ভবিষ্যতে এই চা রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর৷

গোবিন্দ বাবুর এই উদ্যোগে ভর করে স্বনির্ভর হচ্ছেন গ্রামের মহিলারাও অপরাজিতা ফুল শুকিয়ে লাভবান হচ্ছেন তাঁরা৷ এক কেজি ফুল শুকানোর জন্য তিন টাকা দেওয়া হয়। এই কাজে বাড়ির মহিলারা বেশি করে এগিয়ে আসছেন ৷ এলাকার বহু বাড়িতেই ফুল শুকানোর কাজ করছেন মহিলারা ৷

গোবিন্দ বিশ্বাস জানান, আগামী দিনে এভাবে আরো মানুষের কর্মসংস্থান করতে চান তিনি ৷ এভাবেই ফেলে দেওয়া অপরাজিতা ফুল শুকিয়ে নীল চা বা ব্লুটি তৈরীর কাজে যুক্ত করে এই গ্রামের আরও মহিলাদেরকে স্বনির্ভর করতে চান তিনি ৷ পাশাপাশি তিনি আরও জানান , সরকারের সহযোগিতারও বিশেষ প্রয়োজন ৷

কলকাতার এক ব্যাবসায়ী রামকুমার সুরাত জানান, তিনি এই নীল চা এই রাজ্য থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্রি করছেন, সাধারণ মানুষের কাছে যথেষ্ঠ গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে এই ব্লুটি৷ তাঁর কথায় এখন খ্যাতির শীর্ষে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার বিষ্ণুপুরে গোবিন্দ বাবুর তৈরী ব্লু টি বা নীল চা৷ চাহিদা বাড়ছে দিনদিন ফলে নীল চায়ের চাষে সেখানকার চাষিরা আরও সমৃদ্ধ হবে ভবিষ্যতে ,বলে তাঁর ধারনা৷

যদি বাজারে নীল বা অপরাজিতার চা খুঁজে না পান, তবে বাড়িতেও এই চা তৈরি করে নিতে পারেন। এর জন্য গ্যাস ওভেনে একটি সসপ্যানে ৪ কাপ জল দিন। জল ফুটে উঠলে ২টি এলাচ, এক টুকরো আদা, ছোট আকারের ২টি দারচিনি ও ৭টি অপরাজিতা ফুল জলে দিয়ে দিন। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ফুলের নিচের সবুজ অংশ ফেলে দেবেন। 

মৃদু আঁচে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ৭ মিনিট ফুটিয়ে নিন। ব্যস, তৈরি হয়ে যাবে অপরাজিতার নীল চা। মধু মিশিয়ে এই চা পরিবেশন করতে পারেন। চায়ে লেবু মিশিয়ে নিলে এই চায়ের রং নীলের বদলে বেগুনি রং ধারণ করবে। 

নীল চায়ে ক্যাটেচিন থাকে, যার কারণে পেটের চর্বি বার্ন করতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়। উষ্ণ জলে সিদ্ধ অপরাজিতা ফুল দিয়ে পান করলে পরিপাকতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করার একটি কার্যকর উপায় বলে মনে করা হয়। নীল রঙের এই চায়ের রয়েছে বিশেষ গুণ, দেখে নিন একনজরে…

চা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এটিকে আপনার ডিটক্স ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল অ্যাকশন থেকে রক্ষা করে।

নীল চা ত্বকের জন্য দুর্দান্ত।এর অ্যান্টি-গ্লাইকেশন প্রভাবের কারণে ত্বকের অকাল বার্ধক্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে। নীল চায়ে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েডগুলি কোলাজেন উত্পাদনকেও উদ্দীপিত করতে পারে।অপরাজিতা ফুলের চায়ের মাটির গন্ধকে মেজাজ বৃদ্ধিকারী বলা হয়। বলা হয় যে চায়ের স্ট্রেস বাস্টিং প্রভাব রয়েছে । উদ্বেগের লক্ষণগুলি কমাতেও সাহায্য করে।

অপরাজিতা ফুলের চায়ের মাটির গন্ধকে মেজাজ বৃদ্ধিকারী বলা হয়। বলা হয় যে চায়ের স্ট্রেস বাস্টিং প্রভাব রয়েছে । উদ্বেগের লক্ষণগুলি কমাতেও সাহায্য করে।নীল চা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক পানীয়।

নীল চা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক পানীয়।রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে নীল চা-এর ভূমিকা রয়েছে বলেও বলা হয়। যদিও এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক বলে খুব বেশি বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে নীল চা-এর ভূমিকা রয়েছে বলেও বলা হয়। যদিও এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক বলে খুব বেশি বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here