দেশের সময়: ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি নিত্যানন্দ-পুত্র বীরভদ্রের প্রবল ইচ্ছা, খড়দহে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করবেন।
কিন্তু বিগ্রহের পাথর মিলবে কোথায়।


এমন সময় একদিন বীরভদ্র দৈবাদেশ পান, মালদহের নবাব সোলেমান খাঁর রাজপ্রাসাদের তোরণে একটি কালো পাথর রয়েছে। কিংবদন্তি, পাথরটিকে ওই তোরণে স্থাপন করেন রাজা পরীক্ষিৎ। যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞের সময় শ্রীকৃষ্ণ ওই পাথরের উপর দাঁড়িয়ে যজ্ঞে আগত ব্রাহ্মণদের পা ধুইয়ে দেন।

দৈবাদেশ, ওই পাথর দিয়ে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পরদিনই সপার্ষদ নাম সংকীর্তন করতে করতে মালদহের উদ্দেশে রওনা দেন বীরভদ্র। খবর পেয়ে গৌড়ের নবাব বন্দি করেন বীরভদ্রকে। ষড়যন্ত্র করেন গো-মাংস ভক্ষণ করিয়ে জাত নষ্ট করবেন তাঁর।

কিন্তু সেসময় এক অলৌকিক ঘটনা ঘটে।
সাংবাদিক-লেখক ব্রতীন দাস তাঁর ‘বিশ্বম্ভর চৈতন্যের নিত্যানন্দ’ বইয়ে লিখছেন, রাজসভায় বীরভদ্রের সামনে ঢাকা দেওয়া একটি খাবারের থালা আনা হয়। সেই ঢাকনা সরাতেই দেখা যায়, থালায় রয়েছে ফুলের মালা। যা দেখে চমকে ওঠেন নবাব। কিন্তু তিনি দমলেন না। ফের ফন্দি আঁটা হল। সুরার পাত্র আনিয়ে পান করতে বললেন বীরভদ্রকে। এবারেও দেখা গেল, পাত্রে সুরার বদলে রয়েছে দুধ। কাণ্ড দেখে এবার ভয় পেয়ে গেলেন নবাব। বীরভদ্রের কাছে ক্ষমা চাইলেন তিনি। অনুরোধ করলেন, তিনি যদি অলৌকিক ক্ষমতাবলে তাঁর রুগ্ন জামাইকে সুস্থ করে দেন। বীরভদ্র শর্ত দেন, জামাইয়ের সুস্থতার বদলে তাঁর রাজপ্রাসাদে রাখা কালো পাথরটি নিয়ে যাবেন তিনি। রাজি হয়ে গেলেন নবাব। সম্মতি দিলেন সোলেমান খাঁ। বীরভদ্রের অলৌকিক ক্ষমতাবলে সুস্থ হয়ে উঠল নবাবের জামাই।


এবার রাজপ্রাসাদ থেকে কষ্টিপাথর নিয়ে যাওয়ার পালা।
কিন্তু নবাব ভেবে পেলেন না, ওই পাথর কীভাবে নিয়ে যাবেন বীরভদ্র।

ফের অবাক করা ঘটনা। মেঘ করল আকাশজুড়ে। বিদ্যুতের তীব্র ঝলকানি। মেঘের গর্জন। বজ্রপাত। দেখা গেল, তোরণ থেকে খুলে পড়েছে পাথর।

অন্য একটি জনশ্রুতি, নবাবের রাজপ্রাসাদ থেকে পাথর নিয়ে এসে বিগ্রহ তৈরির দৈবাদেশ পান সেসময় গঙ্গার পশ্চিমপাড়ে বল্লভপুর গ্রামের রুদ্র ব্রহ্মচারি। তিনি মালদহে নবাবের রাজপ্রাসাদে যান। কিন্তু শিলাখণ্ডটি দিতে অরাজি হন নবাব। এর পরই পাথরের গায়ে ঘাম দেখা দেয়। যা দেখে জনৈক মন্ত্রী নবাবকে বলেন, এ অশুভ লক্ষ্ণণ। সঙ্গে সঙ্গে রুদ্র ব্রহ্মচারিকে পাথর দিয়ে দেন নবাব। ভারী সেই পাথর নৌকায় ওঠাতে গিয়ে পড়ে যায় জলে। কিন্তু দৈব প্রভাবে সেই পাথর গঙ্গায় ভাসতে ভাসতে চলে আসে শ্রীরামপুরের কাছে রুদ্র ব্রহ্মচারির বসতভিটা বল্লভপুর ঘাটে।

ব্রতীন তাঁর গবেষণামূলক গ্রন্থে লিখছেন, শ্রীপাট খড়দহের শ্যামসুন্দর মন্দিরে রয়েছেন অনন্তদেব শালগ্রাম, নীলকণ্ঠেশ্বর শিবলিঙ্গ ও ত্রিপুরাসুন্দরী। অনন্তদেব শালগ্রাম চতুর্দশ চক্রযুক্ত। নীলকণ্ঠেশ্বর, গৌরীপট্টসমন্বিত সুদর্শন প্রস্তরীভূত শিবলিঙ্গ। ত্রিপুরাসুন্দরী সিঁদুরলেপা, তাম্রময়ী যন্ত্ররূপা। বলা হয়, এগুলি নিত্যানন্দের কাছে সবসময় থাকত। নিত্যানন্দর বৃদ্ধপ্রপিতামহ, বৃষকেতু ছিলেন দেবীমন্ত্রের উপাসক। তাঁরই প্রতিষ্ঠিত অনন্তদেব আদি বিগ্রহ সমূহ। বৃষকেতু ঠাকুরের পুত্র চন্দ্রকেতুর থেকেই বাকিরা বিষ্ণুমন্ত্রে উপাসনা শুরু করেন।

বীরভদ্র পাথরটি চান রুদ্র ব্রহ্মচারির কাছে। কিন্তু তিনি সেটি দিতে অসম্মত হন। পরে কোনও এক সময়ে রুদ্র ব্রহ্মচারির পিতৃশ্রাদ্ধ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হলে বীরভদ্র অলৌকিক ক্ষমতায় বারিবর্ষণ থেকে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের মণ্ডপ রক্ষা করেন। কৃতজ্ঞ রুদ্র ব্রহ্মচারি পাথরখণ্ড থেকে তৈরি করা শ্যামসুন্দর বিগ্রহটি দান করেন বীরভদ্রকে।

শ্যামসুন্দর মন্দিরে রয়েছে নিত্যানন্দর সংকীর্তনে ব্যবহৃত খুন্তি। অবাধ নগর ভ্রমণের অধিকারের প্রতীক হিসেবে এই খুন্তি তিনি ব্যবহার করতেন। চৈতন্যভাগবতে পাওয়া যায়, নিত্যানন্দর হাতে একটি দণ্ড থাকত। কখনও বলা হয়েছে সেটি লৌহদণ্ড। কোথাও বলা হয়েছে, সেটি কাঠের দণ্ড। শ্যামসুন্দর মন্দিরে একটি দণ্ড রাখা আছে, যা নিত্যানন্দ হাতে রাখতেন বলে দাবি করা হয়। এখানেই রয়েছে তুলট কাগজের শ্রীমৎ ভাগবতের একটি পুঁথি। এটি নিত্যানন্দ লিখেছিলেন বা পড়েছিলেন বলে দাবি করা হয়। অনেকে আবার বলেন, এই পুঁথিটি বীরচন্দ্রের কীর্তি। এনিয়ে অবশ্য তেমন কোনও গবেষণা হয়নি।

বিশ্বম্ভর চৈতন্যের
নিত্যানন্দ
সহজিয়া বৈষ্ণব আন্দোলনের বিদ্রোহী পুরুষ
লেখক: ব্রতীন দাস

প্রাপ্তিস্থান:
লেখক: ব্রতীন দাস (9733552427)
কলেজ স্ট্রিট:
👉 দে’জ পাবলিশিং
👉 ভারতী বুক স্টল (৬বি, রমানাথ মজুমদার স্ট্রিট)
👉 দে বুক স্টোর (দীপুদা)
👉 আদি দে বুক স্টোর
👉 বুক ফ্রেন্ড
👉 বইচই
👉 অরণ্যমন
👉 বৈভাষিক
👉 মান্দাস
জলপাইগুড়ি:
👉 বইচই
বর্ধমান:
👉 শ্রী গণেশ ক্রিয়েশনস্ (হোয়াটস্ অ্যাপ): 7001877312
👉 নবনী বুক স্টল: 9474785338
নিজস্ব অনলাইন: https://shalidhan.com/…/bishwambhar-chaitanyer-nityananda/
7001877312নম্বরে মেসেজ করে হোয়াটসঅ্যাপেও প্রি-বুক করতে পারেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here