দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: রামপুরহাট কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ। ৭ এপ্রিলের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রামপুরহাট-কাণ্ডে সরগরম রাজ্য-রাজনীতি। মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে । কাল, বৃহস্পতিবার দুপুরে এই মামলার শুনানি ছিল প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে।

শুনানির শুরুতেই আবেদনকারীর পক্ষ থেকে আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেন,  আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও  সিসিটিভি লাগানো হয়নি। যেখানে তদন্ত চলছে সেখানে মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই ক্ষতিপূরণের প্যাকেজ ঘোষণা করে দিয়েছেন। এর ফলে তদন্ত প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হবে। শুনানির সময় নন্দীগ্রামের প্রসঙ্গ টেনে সওয়াল করেন আইনজীবী রবি শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, নন্দীগ্রামে গুলিচালনার ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। বগটুইয়ের ঘটনাতেও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিক আদালত।

তবে প্রাথমিক ভাবে রাজ্য সরকারকে তদন্তের একটা সুযোগ দিয়েছিল আদালত। বৃহস্পতিবার আদালত বলে, রাজ্যকে একটা সুযোগ দেওয়া হবে। দ্রুত তদন্ত করে সত্যিটা সামনে আনা দরকার। সেই সঙ্গে এও নিশ্চিত করতে হবে ঘটনাস্থল থেকে কোনও তথ্যপ্রমাণ যে নষ্ট না হয়। ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলিতে সব কোণ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে হবে। সেই নজরদারি চলবে সর্বক্ষণ। সিসিটিভি ক্যামেরাতে যাতে পর্যাপ্ত মেমরি থাকে এদিন তা নিয়েও সতর্ক করে দিয়েছে উচ্চ আদালত। আদালতের পরবর্তী নির্দেশ ছাড়া ক্যামেরা বন্ধ করা যাবে না। জেলা আদালতের বিচারকের নজরদারিতে সিসিটিভি মনিটরিং করা হবে। একদিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা করতে হবে বলেও জানিয়েছিল আদালত।

আবেদনকারী পক্ষ যদিও সিবিআই তদন্তের দাবিতে অনড় ছিল। আইনজীবী শামিম আহমেদ বলেন, রাত সাড়ে ৮টায় উপপ্রধান খুন হন। রাত ন’টা নাগাদ সমর্থকদের থানা এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছিল। ৫০০ মিটারের মধ্যে রামপুরহাট থানা, তাদের ফোনে জানানো সত্ত্বেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। এখনও পর্যন্ত সাক্ষীদের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়নি। আজীবীর দাবি, শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। এলাকার দখল নিয়ে ঝামেলা চলছিল। এই ঘটনার পেছনে প্রকৃত কারণ হচ্ছে অবৈধ বালি খাদান ও পাথর খাদানে তোলাবাজি।

গতকাল শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রাখে আদালত। আজ, শুক্রবার সকালেই রায় ঘোষণা হল হাইকোর্টে। সিবিআই তদন্তেরই নির্দেশ দিল ডিভিশন বেঞ্চ।

অন্যদিকে .রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে ৮ জনকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় আারুলের পরে এবার গ্রেফতার করা হল ভাদু শেখের শ্যালক রাজেশ শেখকে। ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যোগ আছে তার, এমনটাই অভিযোগ।

জানা গেছে, গতকাল রাতেই ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে রাজেশকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে তোলা হবে আজই। বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হবে।


এদিকে গতকাল মুখ্যমন্ত্রী বগটুইয়ে গিয়ে ঘটনার তদন্তের কড়া নির্দেশ দেওয়ার পরেই নজিরবিহীন নিরাপত্তা গোটা এলাকায়। রাতভর সেখানে পাহারা দিয়েছেন ৫৮ জন পুলিশকর্মী। রাজ্য পুলিশের ডিজি অমিত মালব্য নিজে পুরো নিরাপত্তার তদারকি করেছেন। আজই সেখানে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক দল।

ইতিমধ্যে রামপুরহাট থানার আইসিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। শাস্তির কোপে পড়েছেন এসডিপিও। সিটের তদন্ত চলছে নিয়ম মেনে। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যেই চলছে পুলিশি কর্তব্য। গতকাল বগটুইতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আনারুলকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ইমিডিয়েট আনারুলকে গ্রেফতার করতে হবে। ও সব জানত। তবু পুলিশকে খবর দেয়নি। দায়িত্ব পালন করেনি। আনারুল হোসেনের বিরুদ্ধে এমনভাবে ‘কেস সাজাতে’ বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী যাতে কোনওভাবে তিনি জামিন না পেয়ে যান।

মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই দেখা যায় আনারুলের বগটুইয়ের বাড়ি পৌঁছে গেছে পুলিশ। কিন্তু সেখানে আনারুল ছিলেন না। তারপর দেখা যায় সেই বাড়ির সামনে জমায়েত করেছেন আনারুলেন অনুগামীরা। সকলের মুখে একটাই কথা, আমাদের মতো দশ হাজার ছেলেকে গ্রেফতার করে তবে দাদাকে ছোঁয়া যাবে। সহজে আনারুলকে ধরতে দেবেন না অনুগামীরা যেন সেকথাই বোঝাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষমেশ তারাপীঠ থেকে ধরা পড়ে রামপুরহাটের ব্লক সভাপতি।

তৃণমূল ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনকে গ্রেফতার করার পরে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, এই তৃণমূল ব্লক সভাপতির কথায় কি তাহলে এলাকার পুলিশ প্রশাসন চলত! এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে কিনা, সময়ই বলতে পারবে। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here