দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বিড়ম্বনা বাড়ল তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের । গরু পাচার মামলায় তদন্তের জন্য কেষ্ট মণ্ডলকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পেল কেন্দ্রীয় এজেন্সি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট । সোমবার দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট ইডি-কে অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট দিয়েছে।

সূত্রের খবর, এই নির্দেশ পেতেই যুদ্ধকালীন তৎপরতা শুরু ইডির অন্দরে। এমনও শোনা যাচ্ছে সোমবার রাতেই অনুব্রতকে নিয়ে দিল্লির পথে রওনা হতে পারে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ইডি নিঃসন্দেহে আজ রাতেই তৎপরতা বাড়াবে। কারণ, দিল্লির বিশেষ আদালতের নির্দেশকে সামনে রেখে মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করতে পারেন অনুব্রত। তেমনটা হলে দিল্লির বিশেষ আদালতের নির্দেশে স্থগিতাদেশের সম্ভাবনায় একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ফলে ইডি আগেই অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে। এই সম্ভাবনা যদি সত্যি হয় তা হলে সোমবার রাতেই দিল্লি রওনা দিতে পারেন অনুব্রত মণ্ডল। সূত্রের খবর, ইডির যে সমস্ত আধিকারিকরা আসানসোলে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যেও চরম তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে।

শনিবার এই মামলার শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রেখেছিল দিল্লি আদালত। সোমবার ছিল চূড়ান্ত শুনানি। তারপর আদালত অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে। ফলে আসানসোল জেল থেকে এবার রাজধানীতে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতিকে।

অনুব্রত মণ্ডলের হয়ে এই মামলায় সওয়াল করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল সিব্বল। তিনি দিল্লির আদালতের এই মামলা শোনার এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বলেছিলেন, বাংলার মামলা হঠাৎ দিল্লির নিম্ন আদালত শুনবে কেন? পাল্টা সওয়ালে ইডি-র তরফে বলা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় এজেন্সি দেশের যে কোনও প্রান্তে, যে কোনও আদালতে মামলা করতে পারে।

সোমবার চূড়ান্ত শুনানিতে ইডি-র আর্জিতেই সায় দিল রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট। গরু পাচার মামলায় আগেই অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে দিল্লি নিয়ে গিয়েছিল ইডি। এখন সায়গল তিহার জেলে বন্দি রয়েছেন। এবার অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে জেরা করবেন ইডি অফিসাররা।

তৃণমূল অনেক দিন ধরেই বলছে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে অনুব্রত মণ্ডলকে বাংলা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিসন্ধি চলছে। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, আদালতের নির্দেশে সামগ্রিকভাবে বীরভূম তৃণমূল হয়তো ধাক্কা খাবে। কারণ, আসানসোলে জেলে থাকার সময়ে যেদিন যেদিন অনুব্রতকে কোর্টে পেশ করা হতো সেদিন সেদিন বীরভূমের নেতারা আসতেন দাদার সঙ্গে দেখা করতে। গাড়ি থেকে নেমে ঢুকতে ঢুকতে কিংবা বেরনোর সময়ে জেলার নেতাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন কেষ্ট। কখনও বলতেন, মুরারইতে ভাল করে নজর দে, আবার কখনও তাঁকে বলতে শোনা যেত মহম্মদ বাজারে রোজ কর্মসূচি চাই। কেষ্ট মণ্ডলকে দিল্লি নিয়ে গেলে সেই সুযোগ আর থাকবে না বলেই মত তাঁদের।

অনুব্রত মণ্ডল চিরকালই স্থানীয় নেতা হিসাবে থাকতে চেয়েছেন। তাঁর দলের নেতারাই বলেন, সে কারণে বিধায়ক অথবা সাংসদ হওয়ার ভোটে পর্যন্ত লড়েননি অনুব্রত। দিল্লি যাওয়ার কোনও বাসনাই তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ছিল না। সেই অনুব্রতকে দিল্লি যেতেই হচ্ছে। তবে গরু পাচার মামলায় অভিযুক্ত হিসাবে। এমনও শোনা যাচ্ছে তিহাড় জেলে থাকতে হতে পারে বীরভূমের বেতাজ বাদশাকে। এই দিল্লি যাওয়া রুখতে কপিল সিব্বলের মতো দুঁদে আইনজীবীকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তবে শেষ রক্ষা হল না। কপিল সিব্বল সওয়াল করেছিলেন, পশ্চিমবাংলার ঘটনা, সেই মামলার জেরাপর্ব দিল্লিতে কেন? রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন আইনজীবী সিব্বল। তবে সেসব খুব একটা আমল পায়নি আদালতে।

সূত্রের খবর, ইডির তরফে চেষ্টা করা হবে মঙ্গলবার সকাল ১০টার মধ্যে অনুব্রত মণ্ডলকে যেভাবেই হোক এ রাজ্যের সীমানার বাইরে নিয়ে যাওয়ার। এত দ্রুত পৌঁছতে গেলে এমনও হতে পারে অনুব্রতকে বিমানে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হতে পারে রাজধানীতে। দিল্লি হাইকোর্টেরও ভ্যাকেশন শুরু হয়ে যাচ্ছে এরপর। অনুব্রত চাইবেন যেভাবেই হোক দিল্লি যাওয়া আটকাতে। সূত্রের খবর, ইডি প্রথম থেকেই আসানসোলে অফিসারদের একটা টিম তৈরি করে রেখেছে। কোর্টের নির্দেশ এলে যাতে বিলম্ব না হয় সে কারণেই এই ব্যবস্থাপনা

তবে এমনও শোনা যাচ্ছে, জেল কোড অনুযায়ী, বিকেল ৫টার পর অভিযুক্তকে নিয়ে যাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে রাউস অ্যাভিনিউয়ের অর্ডার ৫টার আগে আসানসোল সংশোধনাগারে এসে পৌঁছনোর প্রয়োজন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here