দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ বগটুইকাণ্ডে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের যোগ রয়েছে। আদালতে হলফনামা পেশ করে জানাল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই)।

বগটুই কাণ্ডের অন্যতম মূল অভিযুক্ত লালন শেখের হেফাজতে মৃত্যুর হলফনামায় কোর্টে বিস্ফোরক দাবি করল সিবিআই। তারা জানিয়েছে, যে রাতে বগটুইয়ে লাইন দিয়ে বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছিল সেই রাতে আনারুল হক এবং অনুব্রত মণ্ডলের ফোনে কথা হয়েছিল। সিবিআই সময় নির্দিষ্ট করে হলফনামায় লিখেছে, ২১ মার্চ রাত ৮টা ৫০ মিনিটে কথা হয়েছিল আনারুল ও অনুব্রতর। ২২ মার্চ ফের দু’জনের কথা হয়।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২১ মার্চ বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু শেখ খুনের পর একের পর এক বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। জীবন্ত পুড়ে মৃত্যু হয় ১০ জনের। এর পর ওই ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হয় সিবিআইকে। তদন্তভার নেওয়ার প্রায় তিন মাসের মধ্যে গত সোমবার ভাদু-খুন মামলা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মুখবন্ধ খামে চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। তাতে আনারুলের নাম উঠে আসে মূল অভিযুক্ত হিসেবে। আনারুলের বিরুদ্ধে ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। যার অর্থ, অপরাধে সাহায্য এবং প্ররোচনা দেওয়া। তবে আনারুলের দাবি, তিনি নির্দোষ। জেল যাওয়ার আগে আনারুল বলেছিলেন, সময় এলে তিনি ‘সবার’ নাম বলবেন। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর দাবি ছিল, ‘‘ঘটনাস্থল থেকে আমার বাড়ি পাঁচ কিলোমিটার দূরে। এর মধ্যে চক্রান্ত রয়েছে। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। সময় এলে সবার নাম বলব।’’

মঙ্গলবার গরুপাচার মামলায় অনুব্রতের জামিনের মামলার শুনানি রয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে। তার আগে তৃণমূল নেতার জামিনের বিরোধিতা করে হলফনামায় বগটুই ঘটনার উল্লেখ করল সিবিআই।

তৃণমূলের রামপুরহাটের ব্লক সভাপতি ছিলেন আনারুল। তিনি বগটুই হত্যা মামলায় অন্যতম ষড়যন্ত্রী হিসেবে জেলবন্দি রয়েছেন। অনুব্রতও জেলবন্দি, তবে গরু পাচার মামলায়। এবার বগটুই মামলাতেও বড় করে তাঁর নাম জড়িয়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে।

২১ মার্চ সন্ধে নাগাদ বাড়ির অদূরেই খুন হয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা তথা বগটুয়ের উপপ্রধান ভাদু শেখ। সেই খুনের বদলা নিতেই বাড়ি বাড়ি আগুন লাগানো হয় বলে অভিযোগ। আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে প্রায় মধ্যরাতে। অর্থাৎ সিবিআইয়ের দাবি অনুযায়ী, আনারুল ও অনুব্রতর ফোনে কথা হয়েছিল ভাদু খুন ও গণহত্যার মাঝামাঝি সময়ে।

২২ মার্চ সকালেও অনুব্রত-আনারুলের কথা হয়েছে বলে দাবি সিবিআইয়ের। ২২ তারিখ সকালে অনুব্রত আবার সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেছিলেন, টিভি ফেটে আগুন লাগে।

২৪ মার্চ বগটুই গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে দাঁড়িয়েই মুখ্যমন্ত্রী আনারুলকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন মমতা। বিকেলে তারাপীঠ থেকে গ্রেফতার করা হয় আনারুলকে। সেদিন মমতার পাশে দাঁড়িয়ে অনুব্রতকে পুলিশের উদ্দেশে বলতে শোনা গিয়েছিল, এমনভাবে কেস ডায়েরি সাজাতে হবে যাতে বেরোতে না পারে। উদাহরণ দিয়ে অনুব্রত বলেছিলেন, নানুরের সূচপুরের মতো কেস সাজাতে হবে।

এখন প্রশ্ন হল, তাহলে কি অনুব্রতর সঙ্গে কথা বলেই সবটা করানো হয়েছিল সেদিন? বিরোধীরা গোড়া থেকেই বলেছে, বীরভূমে কেষ্ট মণ্ডলই ‘মুখ্যমন্ত্রী।’ তাঁর কথা ছাড়া এত বড় ঘটনা ঘটা সম্ভব নয়। এদিন সিবিআইয়ের হলফনামাতেও সেই গন্ধ রয়েছে বলে করছেন অনেকে।

মঙ্গলবার বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে অনুব্রতের জামিনের মামলার শুনানি রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here