দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ১ জানুয়ারি তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্ট করে বলেছিলেন, তৃণমূল করে খাওয়ার জায়গা নয়। দুর্নীতি করলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে দল থেকে বের করে দেওয়া হবে। মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে সাংগঠনিক বৈঠকের আগে ভিন্ন শব্দবন্ধে প্রায় একই কথা বললেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।

এদিন দিদি বলেন, ‘একটা ধানে পোকা লাগলে সেটাকে সমূলে বিনাশ করতে হয়। নইলে ওই একটা ধান সব ধানকে নষ্ট করে দেয়।’ অর্থাৎ দুর্নীতি বা অনিয়ম যদি কেউ করে তাহলে তাকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা নাহলে তা সমগ্র সংগঠনে সংক্রমিত হতে পারে।

ইতিমধ্যে নদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুরে দু’জন পঞ্চায়েত প্রধানকে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন অভিষেক। সরাসরি বলেছিলেন, অমুক দিনের মধ্যে আপনারা আমার টেবিলে রেজিগনেশন লেটার পাঠিয়ে দেবেন।
পঞ্চায়েত ভোট যখন দরজায় কড়া নাড়ছে তখন এদিন সাংবাদিকরা মমতাকে প্রশ্ন করেন, এবার কি আরও এই ধরনের ঘটনা দেখা যাবে? জবাবে মুখ্যমন্ত্রী ওই সাংবাদিককে বলেন, ‘দেখুন, ভিজিলেন্স (নজরদারি) সবসময় রাখতে হয়। আপনাদের উপর ম্যানেজমেন্টের ভিজিলেন্স থাকে না? একটা প্রোগ্রাম মিস করলেই ইওর চাকরি উইল গো।’

সেইসঙ্গে মমতা বলেন, সাংগঠনিকভাবে এই নজরদারি চালানোর সিস্টেমের ক্ষেত্রেও অনেক প্রতিকূলতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও এটা করা হচ্ছে। মমতা বোঝাতে চেয়েছেন, এটা ধারাবাহিক ও নিরন্তর প্রক্রিয়া।

পর্যবেক্ষকদের মতে, ক্ষমতায় থাকলে সব দলে বেনোজল ঢোকে। তবে সাংগঠনিক কাঠামোর উপরে যাঁরা থাকেন তাঁদের কাজ ছাঁকনি রাখা। তৃণমূল সেটাই করতে চাইছে বল মত অনেকের।

অন্যদিকে, সোমবার নজরুল মঞ্চে সাংগঠনিক বৈঠকের আগে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বড় কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। তাতে বলা হয়েছে, আগামী দু’মাস ধরে দলের রাজ্য স্তরের সাড়ে তিনশো নেতা গ্রামে গ্রামে যাবেন। তাঁরা সেখানে ১০ দিন থাকবেন। রাতেও থাকতে হবে সেখানে। খাওয়াদাওয়া করবেন এলাকার কোনও মানুষের বাড়িতে বা কোনও সাধারণ কর্মীর বাড়িতে। কিন্তু তাতে যাতে কোনও বৈভব না থাকে সে ব্যাপারে বৈঠকে সতর্ক করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।   

এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মধ্যহ্নভোজ করা মানে এলাহি আয়োজন নয়। ডাল, ভাত, তরকারি, বড় জোর একটু ডিমের ঝোল! কিংবা গ্রামে অনেক কুচো মাছ পা

ওয়া যায়। তা দিয়েই খাওয়াদাওয়া সারতে হবে।’
মূলত মানুষের কথা শোনার জন্যইও নেতাদের গ্রামে গ্রামে পাঠাচ্ছে তৃণমূল। মমতা এদিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, খাওয়াদাওয়ার আয়োজন রাজকীয় হলে মানুষ সেটা ভালভাবে নেবেন না। বরং সাধারণের সঙ্গে গিয়ে আর পাঁচজনের মতোই কাটাতে হবে।

পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, একজন নেতা অঞ্চলে যাওয়া মানে সেই এলাকার কর্মী সমর্থকরাও জড়ো হবেন। ফলে অত্যুৎসাহীদের প্রবণতা থাকে গোটাটাকে একটা উৎসবের মোড়ক দেওয়া। অনেকে এক জায়গায় হলে পিকনিকের মুড তৈরি হয়। মমতা এদিন বোঝাতে চেয়েছেন, তা হোক, তবে তাতে যেন আতিশয্য না থাকে।

অনেকের মতে, বাংলায় গ্রামে গিয়ে অমিত শাহের মধ্যাহ্নভোজকে বিজেপি প্রচারের মোড়ক দিয়েছে বারবার। যতবারই তা করা হয়েছে মমতা বলেছেন, ফাইভ স্টারের খাবার এনে দাওয়ায় বসে খেয়ে নাটক করছে। ফলে তৃণমূলের কর্মসূচি ঘিরে যেন সেই কথা কেউ না বলতে পারে সেটাও সতর্ক করে দিয়েছেন দিদি।   

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here