দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শিয়রে সঙ্কট ঘনিয়ে আসছে। হাতে আর মাত্র ৩১ বছর। সমুদ্রের জলস্তর বিপদসীমা ছাড়াবে। নিউ ইয়র্ক থেকে সাংহাই— উপকূলবর্তী শহরগুলো নিয়মিত বন্যার কবলে পড়বে। বিশ্বের উপকূলবর্তী শহরগুলিকে গ্রাস করবে সর্বগ্রাসী ঢেউ।

পৃথিবীর মানচিত্র থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে দক্ষিণ ভিয়েতনামের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যনগরী হো-চি মিন সিটি, চিনের সাংহাই, থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্কক, ভারতের মুম্বই, মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া. ইরাকের বাসরা। মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘নেচার কমিউনিকেশন’ জার্নালে এমনই আশঙ্কার কথা লিখেছে নিউ জার্সির পরিবেশ গবেষণা সংস্থা ক্লাইমেট সেন্ট্রাল।

ক্লাইমেট কন্ট্রোলের রিপোর্ট বলছে, বিশ্ব উষ্ণায়ণের জেরে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উত্তর মেরুতে বরফ গলছে। হিমালয় ও দক্ষিণ মেরুতেও হিমবাহ ও বরফের স্তর অত্যন্ত দ্রুত হারে গলতে শুরু করেছে। বাড়ছে সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা।

তারই ভযাবহ প্রভাব পড়ছে জলজ প্রাণীদের উপর। কমছে মাছের ভাণ্ডার, যার ফলে খাদ্য সঙ্কটও অবশ্যম্ভাবী। একদিকে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি, অন্যদিকে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনে ২০৫০ সালের মধ্যে এক সাঙ্ঘাতিক ধ্বংসলীলা দেখবে বিশ্ব।

সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধির প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে বিশ্বের যে সমস্ত দেশে:

ক্লাইমেট কন্ট্রোলের পরিবেশবিদ, গবেষক স্কট এ কাল্প জানিয়েছেন, অ্যান্টার্টিকা আর গ্রিনল্যান্ডে বরফ গলার হার আরও বাড়ছে। আরও উষ্ণ হচ্ছে পৃথিবী। সেই সঙ্গে দূষণের হার বাড়ায় কার্বন নির্গম দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে ২০৩০-এর মধ্যে এই তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। এই তাপমাত্রা বাড়লে কী কী হতে পারে? স্কট বলেছেন, অ্যান্টার্কটিন্টা ও গ্রিনল্যান্ডে আরও দ্রুত গলবে বরফ। দক্ষিণ গোলার্ধে উষ্ণতা বাড়লে তার প্রভাব পড়বে গোটা বিশ্বেই। পাহাড়প্রমাণ হিমশৈল তথা বরফের চাঁই গলে সমুদ্রের জলে মিশবে। আয়তন বাড়বে জলভাগের। ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে বাস্তুতন্ত্র।

পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমান হারেই যদি কার্বন গ্যাস নির্গমন চলতে থাকে, তা হলে ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রের জলস্তর তিন ফুটেরও বেশি বেড়ে যাবে। উপকূলবর্তী শহরগুলিতে এর প্রভাব পড়বে মারাত্মক। ক্লাইমেট কন্ট্রোলের পরিবেশবিদ হিয়েবার গিরারজেট জানিয়েছেন, থাইল্যান্ডের রাজনীতি ও অর্থনীতির মূল কেন্দ্র ব্যাঙ্কক ভয়ানক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে বেশ কয়েকবার বন্যার কবলে পড়বে ব্যাঙ্কক। ভেসে যাবে শহরের অর্ধেকেরও বেশি অংশ। বন্যার কবলে পড়বে সাংহাই, মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া, ভারতের মুম্বইয়ের মতো শহর।

ক্লাইমেট সেন্ট্রালের চিফ একজিকিউটিভ বেঞ্জামিন স্ট্রস জানিয়েছেন, উপকূলীয় এলাকায় জলস্তরের এই বৃদ্ধি যে জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, ভূমিক্ষয়, সুনামির বিপদ বাড়াচ্ছে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে মুম্বই, গুজরাতের কান্ডলা ওখা বন্দরে। ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের মুখে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকায় ৪০ লক্ষেরও বেশি মানুষ। ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আয়লার দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল সুন্দরবন। ফের কোনও বড় মাপের ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়লে তার পরিণতি কী হতে পারে ভাবলেই শিউরে উটছেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা।

বিশ্ব উষ্ণায়ণের প্রভাবে মেরুপ্রদেশে গলছে বরফ

গত ৫০ বছরে ভারতে সমুদ্রের জলস্তরের সার্বিক গড় বৃদ্ধির বার্ষিক পরিমাণ ১.৩ মিলিমিটার

ক্লাইমেট কন্ট্রোল ও ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, গত ৪০-৫০ বছরে দেশে সমুদ্রের জলস্তরের সার্বিক গড় বৃদ্ধির বার্ষিক পরিমাণ ১.৩ মিলিমিটার। ২০০৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত হিসেব করলে দেখা যাবে, এই বৃদ্ধির পরিমাণ বছরে প্রায় ১২ মিলিমিটার!

দাবানলের আঁচ ছড়াচ্ছে হুহু করে। বাড়ছে তাপপ্রবাহ।

পৃথিবীতে যে কয়েকটি বরফের চাদরে (আইস শিট)ঢাকা অঞ্চল রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম গ্রিনল্যান্ড। যেটি ইতিমধ্যেই গলতে শুরু করেছে। গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদর যদি বেশি মাত্রায় গলে যায়, তা হলে চারপাশের জলস্তর কুড়ি ফুটেরও বেশি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যেই দাবানলের আঁচে পুড়ছে ছাই উত্তর সাইবেরিয়া, উত্তর স্ক্যান্ডিনেভিয়া, আলাস্কা, গ্রিনল্যান্ড, মেরুপ্রদেশের একটা বিশাল অংশ। ব্রিটেন, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, জার্মানিকে পুড়িয়ে তাপপ্রবাহ এগিয়ে চলেছে মেরুপ্রদেশের দিকে। উষ্ণায়ণের কারণে ৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধি মানেই সমুদ্রের জলস্তর আধ মিটার উঁচু হবে, মেরুপ্রদেশের বরফ গলে নির্গত হবে মিথেন। বরফ না-থাকায় সূর্যের তাপ আর রশ্মি শুষে নেওয়ার উপায় থাকবে না। সুতরাং ধ্বংসের প্রাথমিক লীলা শুরু হয়ে গেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here