দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সবরকম খবর ও প্রস্তুতি নিয়েই তার ডেরায় পৌঁছেছিল পুলিশ। কিন্তু পাল্টা খবর পেয়ে তার প্রস্তুতি ছিল আরও বেশি। তাই পুলিশকে বাধা দেওয়ার জন্য রাস্তায় আগে থেকেই সার দিয়ে দাঁড় করানো ছিল বড়বড় ক্রেন-গাড়ি। সে সব পার করে পুলিশ নির্দিষ্ট গলিতে এসে পৌঁছতেই অতর্কিতে হামলা চলে ছাদ থেকে।

রীতিমতো গুলির বৃষ্টি। সামাল দিতে পারেনি পুলিশ। তাঁরা লুটিয়ে পড়তে থাকেন মাটিতে। ছাদ থেকে গুলির সঙ্গে সঙ্গে উড়ে আসতে থাকে বিশাল বিশাল পাথরের খণ্ড। এক জন বা দু’জন নন, প্রাণ হারিয়েছেন আট-আট জন পুলিশকর্মী। এমনকি দুঁদে ডেপুটি কমিশনারও মারা গেছেন গুলিবিদ্ধ হয়।

শুক্রবার ভোররাতে কানপুরের এই ঘটনা এখন সারা দেশে আলোচিত। সেইসঙ্গেই আলোচিত আরও একটি নাম। বিকাশ দুবে। কুখ্যাত এই অপরাধীকে ধরতে গিয়েই এমন চরম বিপর্যয় ঘটে উত্তরপ্রদেশ পুলিশবাহিনীর।

বিকাশ যে সহজে হাতে আসার নয় তা বিলক্ষণ জানা ছিল পুলিশের। তাই যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশকর্মী নিয়েই গ্রামে হাজির হয় বাহিনী। কিন্তু গ্রামে কিছুটা ঢুকতেই পথ আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছে দেখে পুলিশ বুঝতে পারে তারা যে আসছে তা আগেই দুবের দলের কাছে খবর রয়েছে। তার পরে আর সময় মেলেনি। অতর্কিত আক্রমণে সব ঝাঁঝরা হয়ে যায়। বিকাশের গোটা দল রক্তাক্ত পুলিশকর্মীদের কাছ থেকে বন্দুক ও গুলি ছিনিয়ে সেখান থেকে রাতের অন্ধকারে চম্পট দেয়।

উত্তরপ্রদেশের মাফিয়া জগৎ রীতিমতো কাঁপে গ্যাংস্টার বিকাশ দুবের নামে। আর উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের কাছে এই নামটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খুন, অপহরণ, ডাকাতি– কোন অভিযোগ নেই তার বিরুদ্ধে! গত ২০ বছর ধরে নয়-নয় করে রুজু হয়েছে ৬০টি মামলা! তার হাতে যে কত মানুষ খুন হয়েছেন, সেই সংখ্যাটা বোধহয় নিজেই জানে না বিকাশ। অন্ধকার হিংসার জগতে যেন মাকড়সার মতো জাল বিছিয়েছে সে।

শোনা যায়, একসময়ে অপরাধ জগৎ থেকে নাম সরিয়ে রাজনীতিতেও নাম লেখানোর চেষ্টা করেছে বিকাশ। তার নিজের এলাকার পঞ্চায়েত নির্বাচনেও দাঁড়িয়েছিল। একটি খুনের মামলায় পুলিশ ধাওয়া করলে ফের গা ঢাকা দেয় সে।

ঘটনার শুরু প্রায় দু’দশক আগে। আজ থেকে ১৯ বছর আগে পুলিশ স্টেশনে ঢুকে উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী সন্তোষ শুক্লাকে খুনের অভিযোগ ওঠে বিকাশের বিরুদ্ধে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ অভিযুক্ত বিকাশকে গ্রেফতারও করে। তখন ‘শিবালি ডন’ নামে কানপুর কাঁপাচ্ছে শিবরাজপুরের দুবে। নাটকীয় ভাবে তাকে গ্রেফতার করতে পেরে পুলিশ সামান্য স্বস্তি পায়।

কিন্তু আইনের ফাঁকফোকর গলে বেরিয়ে আসে সে। তথ্যপ্রমাণ মেলাতে পারেনি পুলিশ। কয়েক মাস পরেই সে এই হাইপ্রোফাইল খুনের মামলায় ছাড়া পায়। এর পরে যতবারই বিকাশ জেলে গিয়েছে, ততবারই ঠিক কোনও না কোনও ভাবে ছাড়া পেয়ে গিয়েছে! শুধু তাই নয়, শিবরাজপুরে তার বিকারু গ্রামের বাড়িতে গোটা এলাকার যুব সম্প্রদায় তার অঙ্গুলিহেলনে কাজ করে। ফলে সেখানে গিয়ে লুকিয়ে থাকলে তাকে ধরে আনা পুলিশের কাছে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ।

ইতিমধ্যেই কানপুর পুলিশ ঘোষণা করেছে, বিকাশকে খোঁজার বিষয়ে কোনও তথ্য দিলেই ২৫ হাজার টাকার পুরস্কার মিলবে। কিন্তু তাতে লাভ ছাড়া ক্ষতি হল না। এত চেষ্টা ও সতর্কতার পরেও ৮-৮ জন পুলিশকে স্রেফ গুলি করে মেরে হাওয়া হয়ে গেল বিকাশ। যদিও উত্তরপ্রদেশের সমস্ত সীমানা সিল করে দেওয়া হয়েছে ঘটনার পরে, যাতে বিকাশ কোনও ভাবেই পালাতে না পারে। কিন্তু ঘটনার পরে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় কেটে গেলেও, এখনও কোনও সূত্র পায়নি পুলিশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here