দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কৌশলগত কারণে এতদিন কোভিডের ভ্যাকসিন কেনার অনুমতি রাজ্য সরকারগুলোকে দেয়নি কেন্দ্র। কিন্তু এ বার সেই অনুমতিও দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সোমবার কোভিড মোকাবিলায় একাধিক পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল ১৮ বছরের বেশি বয়স হলে ১ মে থেকে ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে। সেই সঙ্গে কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্যগুলিও এ বার ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির থেকে সরাসরি টিকা কিনতে পারবে।

কেন্দ্র যাতে রাজ্য সরকারগুলিকে ভ্যাকসিন কেনার অনুমতি দেয় সে ব্যাপারে বিভিন্ন রাজ্য দাবি তুলছিল। রাহুল গান্ধীও সেই দাবি জানিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু সেই দাবি গোড়ায় মানতে চায়নি কেন্দ্র। কারণ, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুক্তি ছিল দেশজুড়ে ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্য কর্মীদের টিকা দেওয়া অগ্রাধিকার।

রাজ্যগুলিকে টিকা কেনার অনুমতি দিলে হুড়োহুড়ি পড়ে যাবে। বরং কেন্দ্রই রাজ্যগুলিকে প্রয়োজন অনুপাতে বন্টন করাই বাঞ্ছনীয়। দিল্লি সেটাই করে। ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের পর প্রথমে ষাটোর্ধ্ব নাগরিক, পরে ৪৫ বছরের বেশি বয়সীদের টিকাকরণের কথা বলা হয়। তাতে অগ্রগতি হওয়ার পর এ বার রাজ্য সরকারগুলিকে টিকার কেনার ছাড়পত্র দেওয়া হল।

তবে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিকে তাদের মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশ কেন্দ্রকে দিতে হবে। কেন্দ্র সেগুলি বিনামূল্যে বিভিন্ন রাজ্যে পাঠাবে। বাকি ৫০ শতাংশের মধ্যে থেকে তারা রাজ্যগুলিকে বা খোলা বাজারে টিকা বিক্রি করতে পারবে। তবে টিকার দাম নির্ধারণ করে আগে জানাতে হবে। টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি থেকে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিও সরাসরি টিকা কিনতে পারবে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, টিকার চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের যে সামঞ্জস্য নেই সে ব্যাপারে কোনও সংশয় নেই। ১৩০ কোটি মানুষের দেশ। সেই তুলনায় মাত্র দুটি সংস্থাই টিকা প্রস্তুত করছে। সেরাম ও ভারত বায়োটেক যাতে তাদের উৎপাদন আরও বাড়াতে পারে সে জন্য আর্থিক উৎসাহ ও সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্তও সোমবার হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক অফিসারের কথায়, প্রবীণ নাগরিক, কোমর্বিডিটি রয়েছে এমন ব্যক্তি ও ফ্রন্ট লাইন ওয়ার্কারদের টিকাকরণ অনেকটাই সফল ভাবে হয়েছে। তা ছাড়া এও দেখা গিয়েছে, কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভ আসার আগে অনেকে ভ্যাকসিন নিতে রাজি হচ্ছিলেন না। এখন তাঁরাই বলছেন ভ্যাকসিন পাচ্ছি না। শুধু সাধারণ মানুষ কেন, বহু ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্য কর্মী টিকা নিতে চাননি। ঠ্যালায় পড়ে তাঁরাই এ বার হুড়োহুড়ি করছেন। টিকাকরণ নিয়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে যে সমস্যা হচ্ছে তার জন্য এটাও একটা কারণ।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেশে টিকাকরণ শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে ভারতে অক্সফোর্ডের কোভিশিল্ড ও ভারত বায়োটেকের কো-ভ্যাক্সিন দেওয়া হচ্ছে। যে হারে করোনা বাড়ছে তাতে দেশের কোথাও কোথাও ভ্যাকসিনের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে রুশ ভ্যাকসিন স্পুটনিক ভি-কে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

কয়েকদিন আগেই দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন মোদী। বৈঠক শেষে মোদী বলেছিলেন, ‘ফের কঠিন সময় আসছে। টিকা নেওয়ার পরও সতর্ক থাকতে হবে। উপসর্গহীন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। করোনা মোকাবিলায় সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হবে। মাইক্রো কনটেনমেন্ট জোনে নজর দিতে হবে। করোনা কার্ফু বজায় রাখা হোক। রাত ৯টা বা ১০টা থেকে ভোর ৫টা বা ৬টা পর্যন্ত করোনা কার্ফু করা হোক।’

সোমবারের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮১০ জন । একদিনে মৃত্যু হয়েছে ১৬১৯ জনের। একদিনে কোভিড মুক্ত হয়েছেন ১ লাখ ৪৪ হাজার ১৭৮ জন। এদিকে, এই মুহূর্তে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ১৯ লাখ ২৯ হাজার ৩২৯। ক্রমশই জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি। অপ্রতুল হাসপাতালের বেড, অক্সিজেন। ফুরিয়ে আসছে জীবনদায়ী ওষুধ। এক একটি কোভিড বেড পিছু ৫০ জন করে কোভিড রোগীর লাইন পড়ছে। প্রায় প্রতিটি রাজ্যের চিত্রই সমান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here