দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির সূচনা পর্বে শতবর্ষের ভারত কেমন হবে তার একটা ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি ভবিষ্যৎদ্রষ্টা নই। কর্মের ফলে বিশ্বাস করি। আমার বিশ্বাস রয়েছে দেশের মহিলা ও যুব সমাজের প্রতি। স্বাধীনতার শতবর্ষে যিনিই প্রধানমন্ত্রী হোন, তিনি যে ভাষণ দেবেন তা হবে আজকে যা বলা হচ্ছে তা বাস্তবায়নের বক্তৃতা। এই আমার বিশ্বাস।”

শুধু তাই নয়। স্বাধীনতার শতবর্ষে ভারত যাতে আক্ষরিক অর্থে জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসনে অধিষ্ঠিত হয় তার জন্য এখন থেকেই সমস্ত কাজ করার ডাক দিলেন মোদী। অর্থাত্‍ ২৫ বছর পর দেশকে কোথায় তিনি দেখতে চান তার রূপরেখা দিয়ে এখন থেকেই তা বাস্তবায়ন করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদীর কথায়, “স্বাধীনতার ১০০ বছরের মাথায় যাতে দেশ হয়ে ওঠে বিশ্বের সেরা তার জন্য এখন থেকেই কাজ শুরু করে দিতে হবে।”

কোভিড পরিস্থিতি সারা বিশ্বের অর্থনীতিতেই সঙ্কট নামিয়ে এনেছে। লকডাউন, মানুষের কাজ হারানোর নিদারুণ ছবি ভারতের ক্ষেত্রেও ভয়াবহ। এদিন মোদী বলেছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেমন সারা দুনিয়ার ছবি বদলে গিয়েছিল তেমনই হবে কোভিড পরবর্তী বিশ্ব। তাঁর কথায়, “দ্বিতীয়ত বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী বদলে গেছিল। কোভিডের পরেও দুনিয়া বদলে যাবে।”

কিন্তু এত সঙ্কটের মধ্যেও অগ্রগতির উপাদান মজুত রয়েছে বলে এদিন লালকেল্লায় তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাকে ব্যবহার করেই ভারতের অগ্রগতিকে সুনিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “ভারত বদলাচ্ছে। কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগোচ্ছে দেশ। কিন্তু আমাদের থেমে গেলে চলবে না। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।”

লালকেল্লায় বড় ঘোষণা মোদীর:

দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে ১০০ লক্ষ কোটি টাকার গতিশক্তি মাস্টার প্ল্যান শিগগিরই ঘোষণা করা হবে বলে লালকেল্লার বক্তৃতা থেকে জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্পষ্ট করেই এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দিলে তবেই অর্থনীতির গতিতে নতুন শক্তি সঞ্চারিত হবে।

এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অদূর ভবিষ্যতে আমরা গতিশক্তি প্রকল্প আনব। পরিকাঠামোগত উন্নয়নে ১০০ লক্ষ কোটির প্রকল্প হল এই গতিশক্তি। সরকারের এই মাস্টারপ্ল্যানে এগিয়ে যাবে দেশের অর্থনীতি।”

পর্যবেক্ষকদের মতে, কোভিড পরিস্থিতিতে দেশের কোটি কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন। বিরাট অংশের মানুষের রোজগার ধাক্কা খাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই অর্থনীতিও ধাক্কা খেয়েছে। সেটাকেই অক্সিজেন দিতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তা ছাড়া, কাজ হারানো নিয়ে ক্ষোভও রয়েছে। অনেকের মতে, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে যাতে তার যাতে কোনও প্রভাব না পড়ে তার জন্য এখন থেকেই দৌত্য শুরু করে দিলেন মোদী।


এ প্রসঙ্গে কেউ কেউ শের শাহের উদাহরণও দিচ্ছেন। মহামারীর পরে শের শাহ জিটি রোড নির্মাণ করেছিলেন। দীর্ঘ সড়কপথ নির্মাণে বিপুল শ্রমশক্তির প্রয়োজন হয়েছিল। যা তৈরি করেছিল কর্মসংস্থানের সুযোগ। পরিকাঠামো উন্নয়নে ১০০ লক্ষ কোটি টাকার মাস্টার প্ল্যানের কথা বলে আসলে কর্মসংস্থানকেই সুনিশ্চিত করতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

গত বছর কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময়ে যখন কাজ হারানো পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ঢল নেমেছিল, সেই সময়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ রেগার কাজে অতিরিক্ত ৮৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন। উদ্দেশ ছিল একটাই, কাজ হারিয়ে ভিন রাজ্য থেকে ঘরে ফেরা শ্রমিকরা যাতে ঘরের কাছেই কাজ পান।

হতে পারে মোদী সরকার বুঝতে পেরেছে তা দিয়ে এই সঙ্কট মোকাবিলা সম্ভব নয়। তাই ১০০ লক্ষ কোটি টাকার মাস্টারপ্ল্যানের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্দেশ্য, পরিকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে বিপুল কর্মসংস্থান তৈরি করা। যা অর্থনীতিকে গতিশীল করবে। গতিশক্তি ন্যাশনাল প্ল্যান্ট খোলার কথাও জানিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘এই প্রকল্প যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করবে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here