দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শহর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরেই কমলাবাড়ি হাইস্কুল। মাধ্যমিকে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৮০। করোনা আবহে স্কুল খুললেও ক্লাসে গরহাজির ছিল অধিকাংশ পড়ুয়াই। সেই তালিকাতেই ছিল ক্লাসের ফার্স্ট গার্লও। 

লকডাউনের দীর্ঘ বিরতির পর অবশেষে রাজ্যের সব স্কুল কলেজ খুলেছে ডিসেম্বরে। টেস্ট পরীক্ষাও সামনেই। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা কই? তারা কি আর আগের অবস্থায় আছে?

বাধ্য হয়েই পরীক্ষার আগে পড়ুয়াদের খুঁজতে বেরিয়েছেন শিক্ষকরা। মালদহের এক স্কুলের শিক্ষকরা স্কুলের ‘ফার্স্ট গার্ল’কে খুঁজতে গিয়ে চমকে উঠেছেন। যে ছাত্রী নিয়মিত স্কুলে প্রথম হত, সেই ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। পাত্র? স্কুলেরই আরেক ছাত্র, সেই ছাত্রীরই সহপাঠী সে। ফার্স্ট গার্ল এখন ঘোমটা মাথায় দেওয়া নতুন বউ হয়ে বসে আছে। পড়াশোনার পাট চুকে গেছে অনেকদিন।

এক শিক্ষক জানান, “স্কুল বন্ধের সময়ে অ্যাক্টিভিটি টাস্ক নিয়মিত জমা দিত মেয়েটি। তাই ক্লাসে আসছে না দেখে কিছু মনে হয়নি। কিন্তু টেস্টেও না আসায় সন্দেহ হয়।’’

তারপর সহপাঠীদের থেকে ঠিকানা নিয়ে মেয়েটির বাড়িতে পৌঁছে যান তাঁরা। তখনই জানাতে পারেন, গ্রামেই বিয়ে হয়েছে মেয়েটির। সে এখন বিবাহিত।

গ্রামবাংলার দিকে তাকালে ছবিটা শিউরে ওঠার মতোই। বেশিরভাগ স্কুলপড়ুয়া লকডাউনেই এই দীর্ঘ বিরতিতে লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে ফেলেছে। পেটের দায়ে কেউ গেছে কাজ খুঁজতে, কেউ আবার বসেছে বিয়ে করে। এক মাথা সিঁদুর, শাখা-পলা হাতে স্কুলের ছাত্রীকে যেন চেনাই যাচ্ছে না আর। টেস্ট পরীক্ষায় ক্লাসরুম পড়ে আছে ফাঁকা, শুনশান।

ওই ছাত্রীকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেছেন শিক্ষকরা। অনেক বলে কয়ে বর-বউ দুজনকেই পরীক্ষার বসতে রাজি করিয়েছেন তাঁরা। টেস্ট পরীক্ষা দেবে দুজনই। কিন্তু ভবিষ্যৎ কী? প্রশ্ন উঠেছে।

করোনা আবহে এমন ঘটনা যে জেলা জুড়ে হয়েছে, তা অবশ্য মেনে নিচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা। নাবালিকার বিয়ে রোধে প্রচারে এর পর থেকে আরও জোর দেওয়া হবে ও সচেতনতা জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন মালদহের অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) শম্পা হাজরা।

দুজনেই নাবালক। কীভাবে আইনের চোখ এড়িয়ে তাঁদের বিয়ে হল? মালদহের এই ঘটনা নানা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সম্প্রতি এদেশে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স বাড়িয়ে ছেলেদের সমান করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে তার প্রভাব পড়ছে কই? সেখানে এখনও ছোট্ট মেয়ের গলাতেই মালা দিচ্ছে ছোট্ট ছোট্ট ছেলেরা। কড়াভাবে এই নাবালিকা বিয়ের রেওয়াজ বন্ধ না করলে আগামীদিনে অন্ধকার ভবিষ্যৎ দেখছেন শিক্ষকরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here