রাজ্যের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপির ধরাশায়ী হওয়ার কারণ হিসেবে অনেকেই বলছেন মানুষের মধ্যে এনআরসি ভীতি বা বেনাগরিক হয়ে যাওয়ার যে আশঙ্কা কাজ করেছে তারই প্রতিফলন হয়েছে উপনির্বাচনের ফলে।অনেকে বলছেন এই উপনির্বাচনে তৃণমূল জেতেনি,বরং হেরেছে বিজেপি,হেরেছে মানুষকে বেনাগরিক করে দেওয়ার ভয় দেখানো ঔদ্ধত্য।

হেরেছে যাদের ভোটে জিতে মন্ত্রী তাদেরই অবৈধ বলে ঘোষণা করার চক্রান্ত।হেরেছে মানুষে মানুষে ধর্মীয় বিভাজন ঘটিয়ে ভোট সংগ্রহের অসভ্যতা।এসব কথা যারা বলছেন তারা নিশ্চয়ই বিজেপির প্রতি একটু বেশী রকম কড়া,কিন্তু তার পরেও কিছু কথা থাকে বিজেপি নেতারা সেই কথাগুলি ভেবে দেখলে তাদেরই ভাল হবে বলে মনে হয়।এনআরসি ভীতি যে উপনির্বাচনের ভোটের ফলে বেশ ভাল রকম প্রভাব ফেলেছে তা অস্বীকার করছেন না বিজেপি নেতারাও।

কালিয়াগঞ্জের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী কমলচন্দ্র সরকার পরিষ্কার জানিয়েছেন এনআরসির জন্যই তাঁকে হারতে হয়েছে।এ কথা স্বীকার করেছেন বিজেপির রাজ্য সহসভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারও।বিজেপির রাজ্য নেতারা যখন মানছেন যে এনআরসি এ রাজ্যে তাদের সাজানো বাগান ক্রমশ শুকিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট তখন কেন এই সর্বনেশে নীতি থেকে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সরে আসার জন্য চাপ দিচ্ছেন না?কেন বলছেন না এ রাজ্যে এনআরসি করার চেষ্টা হলে মানুষ তাদের বর্জন করবেন?জানি বিজেপি নেতারা বলবেন এনআরসি নিয়ে বিরোধীরা মিথ্যে আতঙ্ক তৈরি করছে।

তারা বলতে পারেন এনআরসি হলে অনেক বেনাগরিক নাগরিকতার পর্যায় উন্নিত হতে পারেন।আমরা বলবো যারা নাগরিকতার প্রমাণ এখনও সংগ্রহ করতে পারেন নি তাদের সেই প্রমান সংগ্রহের কাজে সহযোগিতা করুক সরকার।তার জন্য সব মানুষকে এরকম হ্যাপা ও ঝামেলার মধ্যে ফেলার কী দরকার?বিজেপি নেতারা বলতে পারেন বাইরে থেকে যারা এসে এখানে রয়েছেন তাদের জন্য এ দেশের অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠাতে হবে।

আমাদের প্রশ্ন কোথায় পাঠাবেন,কনশেনট্রেশন ক্যাম্পে?আমরা বলবো মানুষের অস্তিত্ব কখোন অবৈধ হতে পারে না।মানুষকে মানুষের মত থাকতে দেওয়া উচিত।যারা আমাদের দেশের লোক নয় তারা বাঁচুক বা মরুক আমাদের কিছু যায় আসে না এ কথা ভেবে দেখুন খুব মানবিকতা বা মনুষ্যত্ববোধের পরিচয় নয়।

আইন তৈরি হয় মানুষের জন্য আবার আইন বাতিলও হয় মানুষের জন্য তাই আমরা বলবো এনআরসি বাতিল ঘোষণা করুক কেন্দ্রীয় সরকার।এ রাজ্যের মানুষ আতঙ্ক ও আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে তারা বিজেপিকে ভোট দেয় নি এই কারণে যে তাদের দেশ ছাড়া করার প্রয়াস করছে বিজেপি।সাধারণ মানুষের এই প্রতিক্রিয়া সংবাদ মাধ্যমে উঠেও এসেছে।মানুষ জানিয়ে দিয়েছে তারা তৃমমূলকে ভোট দিয়েছেন এটা জেনেই যে তৃণমূল ভাল নয়,তৃণমূলের নেতারা টাকা চুরি করে,তারা গুন্ডামি করে ভোট লুঠ করে,সিন্ডিকেট রাজ চালায় তবু তৃণমূলের তো আর মানুষকে দেশ ছাড়া করার ক্ষমতা নেই বিজেপির সেই ক্ষমতা আছে তাই বিজেপিকে হারাতে তৃমমূলকে ভোট দিয়েছেন বলে অনেকে প্রকাশ্যে বলছেন।

এই জন্যই আমরা বলছি উপানির্বাচনে এ রাজ্যে তৃমমূল জেতেনি কিন্তু মানুষ হারিয়ে দিয়েছে বিজেপিকে।বিজেপি নেতারা এই বাস্তবটা বুঝুন।মানুষ সব সইতে পারে কিন্তু ভিটে মাটি হারা হওয়ার ভয় বয়ে বেডাতে পারে না।এ দেশের সাধারণ মানুষকে সব রাজনৈতিক দলই ঠকিয়েছে।ভোটের সময় গণতন্ত্রের কথা বলেছে আর ভোট মিটতেই ক্ষমতার চেয়ারে বসে দলতন্ত্রের নির্লজ্জ প্রকাশ দেখিয়েছে।তবু বার বার ঠকে যাওয়া মানুষ ভেবেছেন হয়তো রাজনীতি এমনটাই হয়।

তাই সাারণ মানুষ সব রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে রেখে নিজের হাড় ভাঙা পরিশ্রম দিয়ে নিজের ছোট্ট ঘরে নিজের মত করে অস্তিত্ব টিঁকিয়ে রাখতে ব্যস্ত থেকেছে।আর এখন তারা দেখছেন বিজেপি নামক দলটা সেটুকুও কেড়ে নিতে উদ্যত হয়েছে।তাই বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষ এত সোচ্চার এত এক কাট্টা।দেখতে যতোই অশ্লীল লাগুক বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারের পষ্চাদদেশে উপনির্বাচনের দিন যে লাথিটা পডেছিল সেটা আসলে সিম্বলিক-প্রতীক।

এনআরসির মুখে সাধারণ মানুষের লাথি।এ রাজ্যের বিজেপি নেতারা এই সরল সত্যটা বুঝতে না পারলে এ রাজ্যে বিজেপির ভবিষ্যত কিন্তু অন্ধকার তা বলাই বাহুল্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here