দেশের সময়, বনগাঁ: লকডাউন উপেক্ষা করে হেঁটেই বনগাঁ থেকে বিহারের বাড়িতে ফিরেযাবেন মন স্থির করে ফেলে ৩৯ জনের একটি দল।আর সেই মত তাঁরা মুখে মাস্ক,পীঠে প্রয়োজনীয় জিনিস বোঝাই ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বুধবার সকালেই পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে রেল পথ ধরে রওনা দেন ৷পাঁচ কিলোমিটার পথ হেঁটে তাঁরা পৌঁছেছেন প্রথমে বনগাঁ শহরের রেল ষ্টেশনএলাকায়। সেখান থেকে ফের রেললাইন ধরে তাঁরা শিয়ালদহের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। পরে পুলিশ গিয়ে ওই মানুষদের বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার বিভূতিভূষণ হল্ট স্টেশনে আটকায়।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এরা সকলেই শ্রমিক। বাড়ি বিহারের বিভিন্ন এলাকায়। তাঁরা সকলেই পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় সুসংহত চেকপোস্টে ঠিকা শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে এসেছিলেন অনেক দিন আগেই। লকডাউনের জেরে তাঁদের কাজকর্ম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁরা সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে আটকে রয়েছেন। শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, তাঁদের হাতে টাকা নেই। ঠিক মতো খাওয়া জুটছে না। সে কারণেই তাঁরা বিহারে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন।
পুলিশ তাঁদেরকে বিভূতিভূষণ হল্ট স্টেশন থেকে উদ্ধার করে তাঁদের বুঝিয়ে ফের পেট্রাপোল বন্দরে নিয়ে আসে। নিয়ে আসার সময় শারীরিক দূরত্ব মেনে আনা হয়েছে। পুলিশের তরফে তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, শ্রমিকেরা জানতেন না লকডাউন এখনও চলছে। তাঁরা ভেবেছিলেন শিয়ালদহ থেকে বাড়ি ফেরার ট্রেন পাওয়া যাবে। তাই তাঁরা এ দিন হেঁটেই শিয়ালদহ পৌঁছতে চেয়েছিল।

পুলিশ সুপার জানান, ‘‘ওই শ্রমিকদের ফের পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় বুঝিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যতদিন লকডাউন থাকবে তাঁদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় পুলিশ তার উপর নজর রাখা হয়েছে।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ঠিকাদারের অধীনে শ্রমিকেরা কাজ করছিলেন তাঁকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের বেতন দিতে এবং তিনবেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে। তিনি রাজি হয়েছেন। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ঠিকাদার খেতে না দিলে পুলিশের তরফেই খাওয়ানো হবে। শ্রমিকদের বলা হয়েছে কোনও অসুবিধা হলে পেট্রাপোল থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করতে। থানার তরফেও সকাল বিকেল শ্রমিকদের পরিস্থিতি দেখে আসা হবে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন ৩৯ জন শ্রমিক ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন,পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় ট্রাক থেকে পণ্য ওঠানো নামানোর কাজে যুক্ত রয়েছেন প্রায় দেড়শো শ্রমিক। বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়াতে তাঁদের রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া ভিন রাজ্য থেকে পণ্য নিয়ে বন্দরে এসে আটকে পড়েছেন ৩৫ জন ট্রাক চালক-খালাসি। সকলেই কমবেশি খাবারের সমস্যা রয়েছে।


আটকে পড়া কাজ হারানো ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের সেন্ট্রাল ওয়্যার হাউজ কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের তরফে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ ১৯৭০ সাল থেকে বিহারের শ্রমিকেরা এখানে পণ্য ওঠানো নামানোর কাজ করেন। অনেকই পেট্রাপোল-বনগাঁয় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। অনেক শ্রমিক পরিবার নিয়েও বসবাস করেন। সকলের এখন রোজগার বন্ধ।

বনগাঁর পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘বনগাঁয় থাকা ভিন রাজ্যের প্রায় ৩০০ শ্রমিককে আমরা পুরসভার তরফে চাল, ডাল, আলু, তেল দিয়ে সাহায্য করেছি। আগামীদিনেও করব।’’ পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘জেলা পুলিশের তরফে রোজ পেট্রাপোল থানাকে ১০০ প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। আটকে পড়া চালক-খালাসি শ্রমিকদের খাওয়ার অসুবিধা হবে না।’’ বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার বাইরে থাকা শ্রমিকদের উদ্দেশ্য বলেছেন, ‘‘যে যেখানে রয়েছেন থাকুন। এখন ফিরতে হবে না।’’ এ দিন ফেরার চেষ্টা করা শ্রমিকেরা অবশ্য সে কথা জানেন না বলেই জানিয়েছেন তাঁরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here