পিয়ালী মুখার্জী, কলকাতা: ‘কুমোরটুলিতে বেশির ভাগ প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ’৷ রবিবারই মন্ডপে পৌঁছেগেছে বেশ কিছু প্রতিমা ৷ হাতের কাজ মিটিয়ে রোদে বসে কারিগরদের কাজ তদারক করতে করতে জানালেন এক প্রতিমা শিল্পী । বেশির ভাগ স্টুডিওতে মাটির কাজ শেষ , এখন কোনওটিতে চলছে রং করার পর্ব, কোথাও আবার সাজ-পোশাক পরানোর কাজ। বেশিরভাগ স্টুডিওতেই ঠাকুর প্রায় তৈরি। আবার অনেক প্রতিমা মণ্ডপেও রওনা দিয়েছে এদিন।

ছবিতুলেছেন – ধ্রুব হালদার

হাতে বাকি আর মাত্র দু’একটা দিন । সকাল থেকে রাত অবধি তাই কাজ চলছে কুমোরটুলিতে । দুপুরে শুধু খাওয়ার পরে ক্ষনিকের বিশ্রাম। শেষ মুহূর্তে কুমোরটুলির অধিকাংশ গোলারই একই চিএ। রবিবার থেকেই বেশিরভাগ কালী ঠাকুরের যাত্রা শুরু হয়েছে মণ্ডপের দিকে। তাই সেইসব মূর্তির কাজ এদিন সকালেই শেষ করেছেন৷ তারই সঙ্গে একেবারে শেষ মুহুর্তের কিছু অর্ডারের .মূর্তির কাজও চলছে পুরোদমে ৷

উত্তর কলকাতার রবীন্দ্র সরণির বিখ্যাত জায়গা কুমোরটুলি ঘুরলেই চোখে পড়বে বিভিন্ন কালী ঠাকুরের থরে থরে সাজানোর চিত্র। গোলা ভর্তি শুধু নানা রঙের, নানা রূপের কালী। শ্যামা কালী, দক্ষিনেশ্বরী কালী, ধূমা কালী নানান রূপে মা ধরা দিয়েছে কলকাতার এই স্টুডিও পাড়ায়।

চোখে দেখেই বোঝা গেল করোনার ধাক্কা সামলে ভালোই অর্ডার ঢুকেছে এবার কুমোরটুলিতে। ২০২০ সালের মতো আক্ষেপ নেই শিল্পীদের গলাতেও। তুলনামূলক ভালো কাজ হওয়ায় খুশি তাঁরাও। “আগের বছরের থেকে এবার অনেক ভালো। আগের বছর যেমন খদ্দের-পত্তর ছিল না, বিক্রি হয়নি, সেই তুলনায় এবছর ভালো অর্ডার এসেছে”, জানালেন এক শিল্পী।

শিল্পীদের খুশি হওয়ার আরও একটি কারণ হল বড় ও মাঝারি কালী ঠাকুরের অর্ডার আসায়। আগের বছর বড় কালীর অর্ডার ছিল না বললেই চলে। এবার সেই খরা কাটিয়ে বড় কালীর চাহিদা বেড়েছে ভালোই। এক প্রতিমা শিল্পী নিজেই আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন , “এবার বড় কালীর খদ্দের এসেছে। আগেরবার যেমন শুধু ছোট কালী বিক্রি হয়েছিল, এবছর সে তুলনায় বড় কালীর অর্ডার বেশি এসেছে।”

কথার কথা নয়, কুমোরটুলির চিত্রটাও তাই বলছে। সব গোলার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে বড় বড় কালী মূর্তি। কারোর উচ্চতা ৮ ফুট, তো কারোর ১০। ষোলো-সতেরো ফুটের কালীও তৈরি হচ্ছে কুমোরপাড়ায়। একটি স্টুডিওর সামনেই দেখা মিলল এমন একটি বড় কালী মূর্তি। ১৬ ফুটের কালী মূর্তিকে মন্ডপের পথে নিয়ে চলেছেন এক পুজো কমিটির সদস্যরা।

শিল্পীর কথায়, “গত বছর ১০-১২ ফুটের কালীর সেইরকম চাহিদা একদমই ছিল না। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এবছর বড় কালী ঠাকুরের অর্ডার ভালোই এসেছে।”
তবে কি লাভ হচ্ছে তেমন? “এবছর সেভাবে লাভের কথা বলতে পারব না। গতবছর যে হারে দাম নেমে গিয়েছিল, সে হারে এবছর অত দাম নামেনি ঠিকই তবে ২০১৯-এর দাম পাচ্ছি না। আগেরবার মতো বাজার নেই লাভের পরিমাণটা কমই।’ বললেন আর এক শিল্পী।

কালী ঠাকুরের বাজার ভালো হওয়ায় কুমোরটুলির বহু শিল্পীর গলাতেই একটা খুশির ছোঁয়া মিলেছে এবার।

কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সংস্কৃতি সমিতির এক সদস্য জানান, “আটফুট-নয়ফুটের কালীর চাহিদা বেশি। ৫-৬ ফুটের কালী আছে এখনও। বড় কালীর চাহিদা বেশি আগের বছরের তুলনায়। এবার কালীর বাজার অনেকটাই ভালো”৷


কলকাতা ও তাঁর পার্শ্ববর্তী এলাকার মণ্ডপেও কালী যায় এই কুমোরটুলি থেকে। ইতিমধ্যেই চলে এসেছেন প্রতিমা বাহকেরা। বাজার ভালো হওয়ায় খুশি মনে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা কুমোরটুলিতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here