তপন দাশ

এবার আরেক আলোকচিত্র সাংবাদিক এর কথা লিখবো যিঁনি এক্কেবারে সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টাতে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন নিজেকে। হয়েছিলেন নামী চিত্র সাংবাদিক। রোজ আনন্দ বাজারের “কলকাতার পাতায়” থাকতো বড় লিড ছবি। নিজের চেষ্টায় ও যোগ্যতায় ঐ পাতাটি দখল করেছিল।


এর আগে ওর সম্বন্ধে লিখেছিলাম ফটোগ্রাফি ছাড়া ভয়ঙ্কর সংকটময় পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাঁড়ালেন শুধুই সেবা করার উদ্দেশ্যে। এই মহৎ কাজ করার যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে আমার কাছে তা ছিল অকল্পনীয়।
সেই আলোকচিত্র শিল্পী অশোক মজুমদার।

যাঁকে এই নামে পাঠক ছাড়াও অনান্য আলোকচিত্র সাংবাদিক ও রিপোর্টারদের কাছে প্রিয় হতে পেরেছে। যে মুহুর্ত গুলো মনের ভেতর বেঁচে আছে চলুন সেগুলো লেখার চেষ্টা করি।
এবার তার উত্তরনের গল্পে আসি।


প্রথমেই বলা ভালো আমাদের প্রফেশন টা হোল টাইমারের মতন যে যত বেশি পরিশ্রমী সে তত সাকসেসফুল। অশোক মজুমদারের সাকসেস লুকিয়ে ছিল অবিরাম কাজ করে যাওয়ার সুবাদে। দিন নেই রাত নেই কোনো রবিবার নেই।শুধুই কাজ।

অসম্ভব পরিশ্রম আর নেশা না হলে প্রেস ফটোগ্রাফি হয় না। এর সবটাই ছিল অশোক মজুমদারের।


আশির দশকে আনন্দ বাজারে আজকাল থেকে সবে এসেই নিউজ ছবিতে স্কোর। সংবাদ পত্রে আলোক ঢিত্রিদের বেশির ভাগ সময়ে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। আশির দশকের বৌবাজারে তোলা রোমহর্ষক ছবিটি তুলতে তাঁকে পড়তে হয়েছিল বিপদে। আটকে থাকতে হয়েছিল রাজনৈতিক দুষ্কৃতীদের কাছে।
ইলেকশন এর দিন পিস্তল ও বোমা হাতে দৌড়ের ছবি। এই একটা নিউজ ছবি বলে দিয়েছিল ইলেকশনের গতি প্রকৃতি। পশ্চিম বাংলায় এই ভাবেই ভোট চলে আসছে।

সেই দিন অরূপ বাবুর নির্দেশে প্রকাশিত হয় ওর নিজস্ব লেখা। পরের দিনের কাগজে বেষ্ট নিউজ ছবি।যা হাজার কথা বলেদিয়ে ছিল। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে কি ভাবে ভোট পর্ব চলে। ওর ক্ষিদে ছিল ছবি তোলা ও চ্যালেঞ্জ নেওয়া। বিপদে পড়তে হয়েছে আরো কয়েক বার একবার নেপালের রাজা রাজা রাণি খুন হলে অশোক যায় কভার করতে, কারফিউ চলাকালীন ছবি তুলতে গিয়ে মিলিটারিরা ধরে রাখে। সারাদিন পর অনেক কষ্টে নিজের চেষ্টায় মিলিটারি বড় অফিসারের সাহায্য উদ্ধার হন। রোটে ছিল নিখোঁজ হয়ে গেছেন এক সংবাদ পত্রের আলোক চিত্রি। এই রকম বিপদ সংকুল অবস্থায় অনেক বার পড়তে হয়েছে।

এমনও হয়েছে কলকাতায় সারাদিন কাজ করে ফিরেছে। সেই দিনে ই নিউজ থেকে খবর নিয়ে এল কাল ভোরে বেরিয়ে পড়তে হবে।
আমাকে শুধু বললো কাজটা আমায় দাও। আমি অবাক হলাম। নতুন উদ্যমে চলে গেল কাজে। আমাকে কথা শুনতে হতো তপন দা অশোক ছাড়া ভাল কাজ অন্য কাউকে দেন না। আমাকে হজম করতে হতো। সহকর্মীরা অনেকের কাছে অভিযোগ ও করতো। আমাকে কম কথা শুনতে হয়নি সুমন চট্টোপাধ্যায় ও হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। আমি জানতাম কাকে দিয়ে কাজ হবে। তাই জবাব দিহি করিনি। কতৃপক্ষ আমার কাজে কোনদিন হস্তক্ষেপ করেন নি।


সেই সময়ে ছবির ব্যাপারে যদি কেউ আনন্দ বাজারে গ্রুম করে থাকে অলকদা তারাপদ দার পরে অশোক। কলকাতার পাতায় সম্পূর্ন নিজের উদ্যোগে ভাল ভাল লিড ছবি উপহার দিয়েছে। একটি ছবির কথা না উল্লেখ করে পারছিনা সেলুনে আলি আকবর খাঁ সাহেব এর চুল কাটার ছবি।সবাই ওঁনাকে বাজাতে দেখেন। এই রকমের অজস্র অফ বিট ছবি নিজের উদ্যোগে করতো।

একসময় মিটিং এ অভীক বাবু বলতেন অশোক আমাদের শচীন তেন্ডুলকর।
এবিপি আনন্দর সাথে প্রথম বঙ্গ সংস্কৃতি সন্মেলনে আমেরিকায় কভার করতে যায় সেটি ছিল তার প্রথম বিদেশ সফর।সেখানে ৯/১১ স্মৃতি সৌধের গেটের সামনে ফুল দিচ্ছেন আমেরিকার লোকজন সেখানে অশোক অসাধারণ ছবি করে। আবার একটা অনুষ্ঠান এ পরের বছর আমন্ত্রণ পেয়ে নিজের উদ্যোগে আবার আমেরিকায় যায়।


এর মধ্যে অজস্র নিউজ কভার করে। মহারাষ্ট্র ও গুজরাত বর্ডার এর লাটুরে ভারতের সব চেয়ে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প তে প্রায় পাঁচ হাজার লোক মারা যান। খবর পাওয়ার পর চীফ রিপোর্টার অন্য সাংবাদিকরা প্রথমে রাজি করাতে পারে নি প্রধান সম্পাদক কে। আমি সাহস করে অভীকবাবুর ঘরে গিয়ে কনভিনস্ করাই ও তিঁনি রাজি হন। বলেন কোন ফটোগ্রাফার যাবে আমি অশোক এর নাম বলি ও অশোকেই পাঠাই লাটুরে। একবার ভুবনেশ্বর এ প্রবল ঝড়ে বহু মানুষ মারা যান। মনে আছে একটা গাড়ি বোঝাই চালের বস্তা লুঠ করছে না খেতে পাওয়া মানুষের দল। সাংঘাতিক ছবি অনেক রিস্ক নিয়ে তুলেছিল।এর রকমের ভুরি ভুরি কাজ আছে ওর ঝোলায়।

এরপর আমি রিটায়ার করি২০০৬ সালে। আমি চলে যাই আর্কাইভ এ। এর কিছুদিন পরেই আমাদের একটা নতুন কাগজ লঞ্চ করেন অভীক বাবু “এবেলা।” অশোক চীফ ফটোগ্রাফার হয়ে নতুন ছেলেদের নিয়ে কাজ শুরু করে। আরো একটা অধ্যায় শুরু হয় ওর। ।
এবেলা আমার কাছে ভীষণ ভাল লেগেছিল। নতুন আঙ্গিকে নতুন খবর, ছবির মিশেলে খুবই জনপ্রিয় হলো। এবেলা কাগজ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে লন্ডন কভার করতে দেখলাম। কিছু দিন পরেই মুখ্যমন্ত্রী অশোক কে ডেকে নেন মুখ্যমন্ত্রীর নিজস্ব ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করতে। এখনও যে পরিশ্রম করতে দেখি তা আমার কল্পনার অতীত ।

মুখ্যমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হয়ে ওকে জার্মান বাংলা দেশ ছাড়া ও অনেক দেশের ভিতর ও বাইরে যেতে হয়। একজন সংগ্রামে বিশ্বাসী ফটোগ্রাফার এর আর কি বেশী achivement হতে পারে।তা আমার জানা নেই। অশোক এখনো ভুলে যায়নি মায়ের স্বার্থ ত্যাগ ও স্বপ্নের কথা। তাই সে এখন বিপদে মানুষের পাশে থাকে।

প্রথম ছবি। অশোক মজুমদারের।

ব্যারাক ওবামা ও মন মোহন। কান্না শ্মহিদ শ্তম্ভে, অমিতাভ লতাজী, মুখ্যমন্ত্রী গাড়ি তে আরো অনান্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here