দেশের সময় ওযেবডেস্কঃ নরেন্দ্র মোদীর ছবি নয়, করোনার টিকাকরণের সার্টিফিকেটে থাক জাতীয় পতাকার ছবি৷ এমনই দাবি তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

শনিবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের ভার্চুয়াল সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই প্রস্তাব দেন তিনি৷ এ দিন ভার্চুয়াল বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জিএসটি, বিপর্যয় মোকাবিলার টাকা দেয় না৷ খালি ছবি লাগাতে ব্যস্ত৷ টিকা দিয়েও তাতে নিজের ছবি লাগিয়ে দিচ্ছে৷ তাহলে করোনায় মৃত্যু হলেও আপনার ছবি লাগিয়ে দেওয়া উচিত!

এত মানুষ মারা গেলেন, প্রত্যেকের বাড়িতে একটা করে ছবি পাঠিয়ে দিই? একটা টিকা দেওয়ার কৃতিত্ব নিতেও ছবি লাগাতে হয় কেন? এটা কী ধরনের মানসিকতা? আমাদের এখানে যখন সরকার টিকা কিনে মানুষকে দিতে শুরু করল, তখন আমাকেও ছবি লাগানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল৷ আমি বারণ করে দিয়েছি৷ ছবি লাগাতে হলে জাতীয় পতাকার ছবি লাগাও৷ দেশে জাতীয় পতাকার থেকে বড় তো আর কেউ নয়!

‘করোনা টিকার সার্টিফিকেটে প্রধানমন্ত্রীর ছবি নিয়ে এর আগেও সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ প্রশ্ন তুলেছিল তৃণমূল সহ বিরোধীরাও৷ যদিও বিরোধীদের দাবিকে গুরুত্ব দেয়নি কেন্দ্র৷
করোনার টিকাকরণ নিয়ে শুরু থেকেই কেন্দ্রের নীতি নিয়ে সরব ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সবাইকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার দাবি নিয়ে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছিলেন তিনি৷ পরে সেই দাবি মেনে নিয়েই প্রত্যেককে বিনামূল্য টিকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার৷

এ দিন বিজেপি-কেও তীব্র আক্রমণ করেছেন তৃণমূলনেত্রী৷ তিনি বলেন, ‘বিজেপি-র দুটো কাজ, গুলি চালানো আর গালিগালাজ করা৷ কোনও চমৎকার ওরা জানে না৷ ওরা শুধু জানে মিথ্যের পর মিথ্যে বলতে৷ তাই বলছি, জোট বাধুন, তৈরি হোন৷ মানুষের আজ স্বাধীনতা নেই৷’

একুশের ভোটে বাংলার মাটিতে আগ্রাসী বিজেপিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল রুখে দেওয়ার পরেই স্বপ্নটা উস্কে গিয়েছিল তৃণমূলকর্মীদের মধ্যে। তারপর টুইটারে ট্রেন্ডিং হয়েছিল, ইন্ডিয়া ওয়ানটস দিদি।

তারপর দিদি দিল্লি সফরে গিয়ে চব্বিশের বার্তা দিয়ে সবাইকে এক হওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন। কয়েক দিন আগে সনিয়া গান্ধীর ডাকা অ-বিজেপি দলগুলির বৈঠকেও নেতা কে হবেন তা ভুলে নীতি জোরদার করার বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। শনিবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে মমতা বলে দিলেন, চব্বিশে দিল্লিতে খেলা হবে। সেইসঙ্গে নিজের বক্তৃতায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হুঙ্কার দিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন ত্রিপুরায় পা রাখবেন সেদিন ভূমিকম্প হবে।

এদিন মমতা বলেন, “বাংলায় খেলা হচ্ছে। ত্রিপুরায় খেলা হবে, অসমেও খেলা হবে। সারা দেশে খেলা হবে। ২০২৪-এ দিল্লিতেও খেলা হবে।” তা ছাড়া বিজেপির বিরুদ্ধে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে টিএমসিপি নেতৃত্বকে সমন্বয় রাখার কথা বলেন মমতা। এদিন দিদি বলেন, “আমাদের সংস্কৃতিতে গুরুত্ব দিতে হবে। বিজেপি ছাত্রছাত্রী-শিক্ষকদের কণ্ঠ রোধ করছে, সামাজিক মাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করছে। ১৮ বছর কোনও বাধা মানে না। দাম্ভিকতা মানে না। আমি চাই বাংলার ছাত্রছাত্রীরা সারা দেশের শিক্ষাঙ্গনে সম্প্রসারিত হোক, সমন্বয় করুক।”

এদিন আগরতলা শহরে বড় মিছিল করেছে তৃণমূল। তাকে উদাহরণ করেই অভিষেক বলেন, “আজকে আগরতলায় মিছিল হয়েছে। দেখে নিয়েছেন তো কোথায় মাথা আর কোথায় ল্যাজ? এখনও এক মাস হয়নি সংগঠন গঠন শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই এই। যেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরায় পা রাখবেন সেদিন ভূমিকম্প হবে। আর ত্রিপুরায় দুয়ারে গুন্ডা যাবে না। এবার দুয়ারে সরকার যাবে, কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, যুবশ্রী যাবে।”

বিজেপির উদ্দেশে চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন অভিষেক। তিনি বলেন, “ত্রিপুরার জনগণকে আশ্বস্ত করছি, আপনাদের অধিকার রক্ষায় আমরা শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে লড়ব। দেশের সব রাজ্যে তৃণমূল যাবে। কোনও মাইকা লাল থাকলে, বিজেপির হিম্মত থাকলে আটকে দেখাক।”

মমতা ত্রিপুরায় পা রাখলে ভূমিকম্প হওয়ার হুঙ্কার নিয়ে বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “কোভিড পরিস্থিতিতে এমনিতেই মানুষের জীবনযাত্রা বিপন্ন। তার উপর যদি ভূমিকম্প হয়, তবে ত্রিপুরার মানুষদের কথা ভেবে ভয় লাগছে।” শমীক ভট্টাচার্য আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী অনেক আবেগপূর্ণ ভাষণ দিচ্ছেন। তা না করে তৃণমূল আগে ত্রিপুরা বিধানসভায় খাতা খুলে দেখাক। তারপর কথা বলুক। স্বপ্ন দেখা ভাল তাতে শরীর মন দুটোই ভাল থাকে।

তিনি যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ নন তা বোঝাতে এদিন আরও বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ যা নিয়ে ইতিমধ্যেই সমালোচনার চোরাস্রোত বইতে শুরু করেছে। নাম না করে বিজেপির উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘তোমাদের অনেক নেতা মহিলা কেসে জড়িত। আমি প্রতিহিংসাপরায়ণ নয় বলে ধরছি না।’
এখানেই থামেননি মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী। নাম না করে বিজেপি নেতাদের উদ্দ্যেশে তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিহিংসাপরায়ণ নই। তোমাদের অনেক নেতা অনেক কেসে জড়িয়ে পড়েছে। তোমাদের অনেক নেতা মহিলা কেসে জড়িয়ে পড়েছে। তাও কিছু বলিনি। সেসব মাথায় রেখো। সব তথ্য আমার কাছে আছে।’

এদিন সকালেই জানা গিয়েছে, কয়লা কাণ্ডে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী রুজিরা নারুলাকে কয়লা কাণ্ডে সমন পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি ইডি। আগামী ১ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে তাঁদের হাজিরা দিতে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে নোটিসে। সেই সূত্র ধরেই বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতি প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার অভিযোগ তোলেন দিদি।

এদিন মমতা বলেন, ‘কয়লা চুরিতে শুধু তৃণমূলকে ধরলে হবে? কয়লা তোমার সিআইএসএফ-এর দায়িত্বে। কয়লা জাতীয় সম্পদ। আসানসোলে কেন্দ্রের মন্ত্রীরা এসে লুটেপুটে খেয়েছে। আমার কাছে সব তথ্য আছে, কারা এসে কোল মাফিয়াদের হোটেলে ছিল।’

এরপরই বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে মহিলা কেসে যুক্ত থাকার অভিযোগ করেন মমতা। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, রাজনৈতিক সৌজন্য দেখিয়েই তিনি তাঁদের ধরছেন না। ঘটনা হল, হালফাইল তিন-চার জন বিজেপি নেতার নাম মহিলা ঘটিত মামলায় জড়িয়েছিল। সেওসব নিয়ে সাময়িক হইচই হলেও বিশেষ জট পাকেনি।

মমতার এদিনের এই মন্তব্য নিয়ে নানান মহলে নানান প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, যিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তিনি জানেন কারা মহিলা ঘিটিত অপরাধে যুক্ত। অথচ ধরছেন না? এই প্রসঙ্গে আইনজীবী তথা সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী নিজেই স্পষ্ট করে দিলেন, তিনি মহিলাঘটিত অপরাধে যুক্তদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। জানেন কারা অপরাধী কিন্তু তাদের ধরছেন না। রাজনৈতিক সৌজন্য মানে কি অপরাধীদের ছেড়ে রাখা? এ তো ভয়ঙ্কর মন্তব্য। সরাসরি অপরাধে উৎসাহ দেওয়া।’

মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে এদিন বিকেল সওয়া চারটে নাগাদ ফোন করা হয়েছিল মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়কে। তিনি বলেন, ‘আমি তো মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য এখনও নিজে কানে শুনিনি। তা শোনার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে পারব।’

বিজেপি নেতা সায়ন্ত বসু বলেন, “ভাইপোকে ডাকাডাকি শুরু হতেই দিদিমণি ভুল বকতে শুরু করেছেন। গোটা দুনিয়া জানে প্রতিহিংসা আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমার্থক শব্দ। আমাদের দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৫ হাজার মিথ্যে মামলা রয়েছে। আর উনি সত্য ঘটনা জেনেও চুপ করে বসে আছেন? এসব গল্পকথা ওঁর দলের লোকেরা বিশ্বাস করবে তো?’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here