দেশের সময় কলকাতা কোথাও এতটুকু স্বস্তি নেই। গুমোট গরমে একমুঠোও ঠান্ডা হাওয়া নেই পরিবেশে। অতি তীব্র দহনজ্বালায় জ্বলছে বাংলা।

গরম হাওয়া যেন আগুনের হলকা গায়ে লাগলেই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। কল খুললে জলও আগুন গরম।

সারা দেশ জুড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নিরিখে বিচার করলে প্রথম দশে স্থান পেয়েছে রাজ্যের দুই। শীর্ষস্থানে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কলাইকুন্ডা।

সোমবারই ৪৪ বছরের রেকর্ড ভেঙে এক লাফে কলকাতার তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ৪২ ডিগ্রিতে। পশ্চিমের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছুঁয়ে ফেলেছে। আজও রেহাই নেই। বরং আজ মঙ্গলবার তাপপ্রবাহের মাত্রা আরও চড়বে বলেই পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর হাওয়া অফিস। কলকাতাতেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস অবধি পৌঁছতে পারে আজও।
গরমে হাঁসপাঁস করছে মহানগর। রবিবারের আগে ছিটেফোঁটা বৃষ্টিরও সম্ভাবনা নেই। তার মধ্যেই একটি ভাইরাল পোস্ট ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

পোস্টটিতে লেখা আছে,  ‘৩০শে এপ্রিল ২০২৪ মঙ্গলবার বিগত ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে তীব্রতর দাবদাহের সাক্ষী হতে চলেছে সমগ্র দক্ষিণবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গের দাবদাহের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ও সবচেয়ে বিপজ্জনক তাপপ্রবাহ দ্বারা আক্রান্ত হতে চলেছে দক্ষিণবঙ্গ। ভয়াবহ লাল তাপপ্রবাহ বলয় চক্কর সবচেয়ে বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছাতে চলেছে মঙ্গলবার।’ আলিপুর আবহাওয়া দফতর স্পষ্ট জানাচ্ছে, এই ধরনের কোনও সতর্কবার্তা তাঁদের তরফে দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ পোস্টটি ভুয়ো।

সোমবার রাজ্যের ১১টি এলাকায় তীব্র তাপপ্রবাহ হয়েছে। আজও একই পরিস্থিতি থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর হাওয়া অফিস। গতকাল রাজ্যের মধ্যে সব থেকে বেশি গরমের সাক্ষী থেকেছে কলাইকুন্ডা। সেখানে দিনের তাপমাত্রা ছিল ৪৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের থেকে ৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

মেদিনীপুরের পারদ চড়েছে ৪৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। পানাগড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দমদমে একটানা ৪২ ডিগ্রি যাচ্ছে। কলকাতায় দিনের তাপমাত্রা ছিল ৪১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের থেকে ৬.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। বেলা ৩টের পর পারদ উটেছিল ৪২ ডিগ্রিতে।  ১৯৮০ সালের পর রেকর্ড গরম কলকাতায়। আজও রক্ষা নেই বঙ্গবাসীর।

হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, পশ্চিমের জেলাগুলিতে এপ্রিলেই পারদ ৪৫ ডিগ্রি পেরিয়ে গেছে। মে মাসের পরিস্থিতি কেমন হতে চলেছে তা আঁচ করলেই আতঙ্ক হয়। এখন আগামী ৩ মে অবধি অতি তীব্র তাপপ্রবাহ চলবে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। দিনের তাপমাত্রা একইরকম থাকবে।

গরম ও অস্বস্তিকর আবহাওয়া ভোগাবে। দক্ষিণের সব জেলাতেই তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস। উত্তরেও তিন জেলাতে চলতে পারে তাপপ্রবাহ। উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলাতে তাপপ্রবাহ চলবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহতে জারি হয়েছে কমলা সতর্কতা। তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি চলবে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারেও।

হাওড়া, হুগলি এবং নদিয়ায় ২৯ তারিখ থেকে ২ মে পর্যন্ত পর্যন্ত তাপপ্রবাহের কমলা সতর্কতা জারি হয়েছে। পারদ আরও চড়বে মুর্শিদাবাদে। সেখানে আগামী দিনদিন হিটওয়েভের লাল সতর্কতা জারি হয়েছে।

রবিবার বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ায়। কারণ, বঙ্গোপসাগরে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়বে। সাগর থেকে জলীয় বাষ্প ঢুকবে রাজ্যে। কাজেই বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের দাবি, আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি লক্ষ করে তাঁরা দেখেছেন যে, রবিবার দখিনা বাতাস দক্ষিণবঙ্গে প্রবেশ করে আবার উল্টো দিকে ঘুরে যাচ্ছে। এর ফলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাই সব ঠিক থাকলে রবিবার থেকেই গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। যা চলবে অন্তত ৬ তারিখ পর্যন্ত। দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমের জেলা এবং উপকূলবর্তী জেলাগুলিতেও বৃষ্টির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে আবহাওয়া দফতর সরকারি ভাবে এখনই বৃষ্টির পূর্বাভাস নিয়ে কোনও ঘোষণা করছে না। তারা আরও কিছু দিন আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতির উপর নজর রাখতে চাইছে বলে জানা গিয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here