দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সময়টা ২০০৬।
সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষে টাটার কারখানা আর হয়নি। আজ তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।

১৫ বছর পর সেই সিঙ্গুরেই ফের শুরু হল ধরনা। এবার বিজেপি। কৃষকদের সমর্থনেই তাদের ধরনা।  ১৪ থেকে ১৬ ডিসেম্বর— এই তিন দিন চলবে ধরনা। ভারতীয় জনতা কিষাণ মোর্চার ব্যানারে ডাক দেওয়া হয়। দাবি, আত্মহত্যা করেছেন এমন কৃষকদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য, উপযুক্ত দামে কৃষকদের সার, সেচের ভর্তুকিতে বিদ্যুৎও দিতে হবে। এছাড়াও একাধিক দাবিতে সিঙ্গুরের গোপালনগরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের পাশে ধরনায় বসেছে রাজ্য বিজেপি।

সেই সিঙ্গুরে দাঁড়িয়ে তৃণমূলনেত্রীর বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন বিরোধী দলনেতা। মমতার ত্রিপুরা, মুম্বই, গোয়া সফরের কথা টেনে নন্দীগ্রামের বিধায়ক বলেন, “এখন উনি প্রধানমন্ত্রী হতে বেরিয়েছেন। এটা জেনে রাখুন, ওঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়া স্যান্ডো গেঞ্জির বুক পকেটের মতো।”

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ সহ একাধিক দাবিতে গত সপ্তাহেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের কাছে সাত দফা দাবিতে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিল বিজেপির কিষান মোর্চা। তাঁদের নিয়ে রাজভনে গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজভবনের গেটে দাঁড়িয়েই শুভেন্দু ঘোষণা করেছিল ১৪-১৬ ডিসেম্বর কৃষকদের দাবি নিয়ে সিঙ্গুরে ধর্না দেবে গেরুয়া শিবির।

এদিন সিঙ্গুর সংকট নিয়েও মমতাকে কটাক্ষ করেন শুভেন্দু। প্রসঙ্গত, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে গোপালনগর মৌজায় ধর্না শুরু করেছে বিজেপি। টাটা কারখানার বিরুদ্ধে এই এলাকাতেই একসময়ে টানা ধর্না দিয়েছিলেন মমতা। ধর্নায় দাঁড়িয়ে শুভেন্দু সিঙ্গুরের সেই ‘অভিশপ্ত’ মাঠের দিকে দেখিয়ে বলেন, এখানে কিছুই হল না। চাষ হল না, সরষে ছড়ালেন তাও কিছু হল না। শিল্পও হল না। এই রাজ্যের নেত্রী বটে, শিল্প ভাগান গুজরাতে।

জাওয়াদের প্রভাবে অতিবৃষ্টিতে দক্ষিণ বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিঘার পর বিঘা জমিতে আমন ধান, শীতকালীন সবজি, আলু, পানের বরজ কার্যত ভেসে গিয়েছে।

এদিন সেই কর্মসূচিতেই মমতাকে নিশানা করে চাঁচাছোলা আক্রমণ করলেন শুভেন্দু। বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, রাজ্যের সরকার নিজেই মেনে নিচ্ছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার করে অর্থনৈতিক ব্লান্ডার করে দিয়েছে। তাই এখন মুখ্যমন্ত্রী জেলায় জেলায় ঘুরে বলছেন, এখন আর কিছু দিতে পারবেন না। এমনই অবস্থা যে, যাতে কৃষকবন্দু না পেতে পারেন তার জন্য ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের পোর্টালও সরকার লক করে রেখেছে।

এদিন সিঙ্গুরে বিজেপি-র ধর্না আন্দোলনে শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেন, “আশা করি এই আন্দোলনের কথা আপনারা গোটা ভারতে ছড়িয়ে দেবেন। এই এলাকায় অতিরিক্ত বর্ষার কারণে এছাড়া খানাকুল, আরামবাগ, পুরশুড়া, গোঘাট, চন্দ্রকোণা, ঘাটাল, পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মন্তেশ্বর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক বন্যা হয়েছে। দুর্বল বাঁধগুলি ভেঙে যাওয়ার জন্য, রাজ্য সরকারের ভঙ্গুর সেচ ব্যবস্থার জন্য, যথাযথ কাজ না হওয়ার কারণে নিম্ন এলাকা বারবার করে প্লাবিত হয়েছে। আমন ধান শেষ হয়ে গেছে। রাজ্য সারের কালোবাজারি চলছে। সেই কারণেই আমাদের এই আন্দোলন।”

আগামী দিনে নবান্ন অভিযান হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।

মঙ্গলবার দুপুরে সিঙ্গুরের লোহাপট্টি থেকে মিছিল করে সিংহের ভেড়িতে উপস্থিত হন বিজেপি নেতারা। সেই দলে ছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ, বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা, বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল, চন্দনা বাউড়ির মতো হেভিওয়েটরা। সঙ্গে ছিলেন কর্মী–সমর্থকরাও।

এদিন সুকান্ত মজুমদার বললেন, ‘‌কৃষকদের পাশে না দাঁড়ালে তাঁদের কাছে দু’‌টো পথ খোলা রয়েছে। হয় পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে যাওয়া, না হলে আত্মহত্যা।’‌ তিনি আরও মনে করেন, টাটার কারখানা এখান থেকে সরে যাওয়ায় দেশের শিল্পমহল পশ্চিমবঙ্গের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। 

গত নভেম্বর থেকে দিল্লি সীমান্তে তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবি আন্দোলন করছিলেন কৃষকরা। সেই নিয়ে বিস্তর মুখ পুড়েছে মোদি সরকারের। অবশেষে প্রায় এক বছর পর, গত মাসে এই তিন আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা করে কেন্দ্র। এবার নিজেদের ভাবমূর্তি শুধরানোর জন্যই কি সিঙ্গুরে বিজেপি–র আন্দোলন?‌ 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here