দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একুশের নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণা হতেই আক্রমণের ঝাঁজ আরও বাড়ল ভোট ময়দানে। প্রাক্তন দলকে করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর বলে কটাক্ষ শুভেন্দু অধিকারীর। একইসঙ্গে বিস্ফোরক অভিযোগ নন্দীগ্রামের প্রাক্তন বিধায়কের। তিনি বলেন, বিরোধীদের ফোনে আড়ি পাতছে সরকার। এখানেই শেষ নয়, শুভেন্দুর মতে, ‘আমলারা সব পক্ষপাতদুষ্ট। নবান্নে প্রশাসকের নামে নেতাদের বসিয়ে ভোট করাতে চাইছে শাসক দল।’ এদিনও শুভেন্দু অধিকারীর নিশানা থেকে রেহাই পেলেন না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জোকার বলে কটাক্ষ মদন মিত্রকেও।

নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর এই প্রথম হুগলির ডানকুনিতে সভা করছেন শুভেন্দু। শনিবারের এই জনসভাকে ঘিরে সকালে থেকেই একটা টানটান আবহ তৈরি হয়েছে। এই জনসভায় যাওয়ার আগে সকালেই তিনি কোলাঘাটে ইস্কন-এর মন্দিরে যান। সেখানে প্রার্থনা করেন। আগেই শুভেন্দু টুইট করে শনিবারের জনসভা এবং ইস্কন মন্দিরে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছিলেন।

তৃণমূল ছেড়ে সদ্য বিজেপি-তে গিয়েছেন শুভেন্দু। বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, এই বাংলায় পরিবর্তন আনার পক্ষে প্রতিটি জনসভা থেকে জোর সওয়াল করেছেন। তৃণমূল সরকারকে উৎখাত করে ফেলারও হুঁশিয়ারি শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে।

তৃণমূল সুপ্রিমোকেও সরাসরি ‘অনুপ্রবেশকারীদের পিসি’ বলে আক্রমণ শানান বিজেপি নেতা। নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করতেই নবান্নে সেল খোলার প্রস্তুতি বলে মত শুভেন্দুর। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ প্রশাসন দিয়ে ভোট করানোর দাবি জানিয়েছেন শুভেন্দু। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে পক্ষপাতদুষ্টদের ভোট করানো যাবে না স্পষ্ট বার্তা বিজেপি নেতার। পুলিশ অফিসার, সিআইডি আধিকারিক দিয়ে বিরোধী নেতাদের ফোনে কথা রেকর্ড করানো হয় বলে ভোটের মুখে বিস্ফোরক অভিযোগ শুভেন্দুর মুখে।

এদিনও শুভেন্দু অধিকারী টেনে আনেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীয়ের প্রসঙ্গ। বলেন, মিসেস নারুলার থাইল্যান্ডের অ্যাকাউন্টের কথা আমি আগেই বলেছিলাম। উল্লেখ্য, বারুইপুরের সভায় দাঁড়িয়ে শুভেন্দু বলেছিলেন, ,’বারুইপুরের সভায় থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্কের চেক দেখিয়েছিলাম। লালার টাকা জমা হয়েছিল ম্যাডাম নারুলার অ্যাকাউন্টে। আমি সেদিন কারও বোন নারুলা বা কারোর বউ নারুলা বলিনি। ঠাকুরঘরে কে, আমি কলা খাইনি। তারপরই ভাইপো বলল, আমার স্ত্রীকে টেনে আনছে। বিদেশে টাকা পাচার করলে স্ত্রীকে ধরে টানবে না? করুণানিধির মেয়ে কানিমোঝিকেও জেল খাটতে হয়েছিল।’

সিবিআই জেরার পর কুলতলির সভায় ডায়মণ্ডহারবারের সাংসদের বিরুদ্ধে আক্রমণের সুর চড়িয়ে বলেন, ‘এর আগে রাজীব কুমারকে বাঁচাতে ধর্না দিয়েছিলেন মাননীয়া। আর আজকে কী শেখাতে গিয়েছিলেন! বলতে গিয়েছিলেন বৌমা আমার কীর্তিমান ভাইপোর নামটা তুমি বলে দিও না।’ এদিনের সভা থেকে শুভেন্দুর নিশানায় ছিলেন ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরও। সকালের টুইটের প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দুর পরামর্শ, ‘ওনাকে ২ মে-এর আগে পটনার ট্রেনের টিকিটটা বুক করে রাখতে হবে।’

এক নজরে শুভেন্দু বক্তৃতায় যা বললেন:

৭ তারিখে মোদীজি ব্রিগেডে আসছেন। সভা ভরাতে হবে। সোনার বাংলা গড়তে হবে। এ বার ডাবল ইঞ্জিন সরকার হবে।
একটার পর একটা স্লোগান বাংলাদেশ থেকে ধার করে এনেছেন।
আমাকে অনেকে বলছেন, আপনার অনেক দুর্নীতি তুলে ধরছেন। অনেক ভিতরের কথা বলছেন। যার উত্তর তৃণমূল বা রাজ্য সরকার দিতে পারছে না। আমি তাইল্যান্ডের ব্যাঙ্কে টাকা জমা দেওয়ার রশিদ দেখিয়েছিলাম। পরবর্তী কালে প্রমাণ হয়েছে, ‘ম্যাডাম নারুলা’ হলেন তোলাবাজ ভাইপোর মাননীয়া। তাঁর অ্যাকাউন্টে গিয়েছে।

হুগলি জেলায় ৫ টাকা কেজি করে আলু বিক্রি করেছেন আলু চাষিরা। আর আমাদের ৪০ টাকা কেজি করে আলু কিনতে হয়েছে। এই টাকা কোথায় গিয়েছে? কৃষকেরা কেন পাননি? এই টাকা কি ভাইপো-ভেট? মানুষ আজ জানতে চান। দিদির দূত, তোলাবাজ ভাইপো ভূত।
কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার গর্ব হতে যাবেন? বাংলার গর্ব যদি কেউ হন, তিনি বিদ্যাসাগর হবেন, স্বামী বিবেকানন্দ হবেন। বাংলার গর্ব যদি কেউ হন, তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ হবেন। বাংলার গর্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন হবেন?
প্রতিটি ক্ষেত্রে তৃণমূল সরকার ব্যর্থ। এত মদের দোকান, যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গিয়েছেন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী।
বিরোধীদের ফোনে আড়িপাতা হচ্ছে। থানাগুলি থেকে এবং রাজ্যস্তরে সিআইডি, এসপি-রা বিরোধী নেতাদের ফোনে আড়ি পাতে। শ্যামল বসু কী বলছেন? গৌতমবাবু কী বলছেন? বিমান বসু কী বলছেন? প্রত্যেক জায়গায় পার্টির নেতাদের ফোনে আড়িপাতা হচ্ছে তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের কথায়। এটা বন্ধ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে গোটা প্রশাসনের খোলনলচে পাল্টে দিতে হবে। না হলে গোটা রাজ্য জুড়ে প্রত্যেক জেলাতে আরাবুলের মতো, শওকত মোল্লার মতো যে মডেল তৈরি হয়েছে, তাতে শান্তিপূর্ণ ভোট হতে পারে না।

সবুজসাথী নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে।
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বলতে পারছেন না, ১ কোটি না ২ কোটি লোককে চাকরি দিয়েছি।
এ বারের নির্বাচন অবাধ, ভয়মুক্ত পরিবেশে হবে। বিজেপি-র সরকার তৈরি হবে।
১ তারিখে টিকিট কেটে ২ তারিখে পটনা চলে যেতে হবে পিকে-কে।
করোনার থেকেও ভয়ঙ্কর ভাইরাস তৃণমূল প্রাইভেট লিমিটেড। নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছ ভোটের জন্য একটা উদ্য়োগ নিয়েছেন। আট দফায় ভোট হবে। তৃণমূল যাতে অপরের ভোট নিজেরা না দিতে না পারে, সে জন্যই তারা একটা উদ্যোগ নিয়েছে। প্রশাসনকে-পুলিশকে নির্লজ্জ ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

কলকাতা কর্পোরেশন-সহ গোটা রাজ্যে ১০০টি কর্পোরেশনে দলের লোকদের বসিয়ে রেখেছেন। এই প্রশাসকরা পার্টির ক্যাডার। এই প্রশাসকদেরকে সরাতে হবে।
নবান্ন থেকে নির্বাচনী সেল খোলা হয়েছে। নবান্ন থেকে নির্বাচনী সেল তুলে দিতে হবে।
প্রকাশ্য সভা থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে কয়েকটি দাবি জানাতে চাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here