দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কোচবিহারের শীতলকুচি বিধানসভায় গতকাল কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চার গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে। তা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গণহত্যার অভিযোগ তুলে অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। এর মধ্যেই রবিবার বরানগরের সভা থেকে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। হুঁশিয়ারির সঙ্গে এদিন দিলীপবাবু বলেন, “শীতলকুচি কী দেখেছেন! এরপর বেশি বাড়াবাড়ি করলে জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে।

রাজ্যের চতুর্থদফা নির্বাচনে শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। এই ঘটনাকে ‘গণহত্যা’-র সঙ্গে তুলনা করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীরা অবশ্য এই ঘটনার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘উসকানিমূলক মন্তব্যকে’ দায়ী করেছে। এরই মধ্যেই রবিবার বরানগরের সভা থেকে চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘শীতলকুচি কী দেখেছেন! এরপর বেশি বাড়াবাড়ি করলে জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে।’ দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যে শুরু হয়েছে তোলপাড়।

এদিন বরানগরের বিজেপি প্রার্থী পার্নো মিত্রের সমর্থনে জনসভা করতে গিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। সেখানে তিনি বলেন, “এত দুষ্টু ছেলে কোথা থেকে এল? বাংলায় আর দুষ্টু ছেলে থাকবে না। যারা ভেবেছিল কেন্দ্রীয়বাহিনী বোধহয় বন্দুকটা শুধু দেখানোর জন্যই আনে, কালকে তারা বুঝে গেছে ওর ভিতরে থাকা গুলির কী জোর!” এখানেই থামেননি মেদিনীপুরের সাংসদ। তাঁর কথায়, “কেউ যদি আইন হাতে নিতে আসে তাহলে ওই অবস্থাই হবে!” দিলীপ ঘোষের বক্তব্যেই স্পষ্ট, যে চারজন কাল শীতলকুচি বিধানসভার মাথাভাঙা ব্লকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি কোনও সমবেদনা নেই।

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতির মুখে এই কথায় রীতিমতো তোলপাড় রাজ্য রাজনৈতিক মহল। উল্লেখ্য, শনিবার ভোট শুরু হতেই শীতলকুচির পাঠানটুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ১৮ বছরের এক যুবকের। বেলা গড়াতেই ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। এরপর উত্তেজনা ছড়ায় জোরপাটকি এলাকায়। ১২৬ নম্বর বুথের বাইরে এলোপাথারি গুলি চলার অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় আরও চারজনের। নির্বাচন কমিশন জানায় জওয়ানদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। মৃতেরা প্রত্যেকেই তৃণমূলের সমর্থক বলে খবর। গোটা ঘটনায় রিপোর্ট তলব করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।


গতকাল নরেন্দ্র মোদী শিলিগুড়ির সভা থেকে মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বলেছিলেন, “আমি অনুরোধ করব, এই ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্ত হোক।” সেইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উস্কানিতেই ঘটেছে শীতলকুচির ঘটনা। তবে দিলীপবাবু সেদিকে গেলেন না। বরং শীতলকুচিকে দৃষ্টান্ত করেই হুঁশিয়ারি দিতে চাইলেন বলে মত অনেকের।

এদিকে শীতলকুচির ঘটনায় বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে দুষে বললেন, ‘ এই ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্ররোচনা দায়ী।’ শুভেন্দু সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনায় বিজেপি-কে গলায় দড়ি দিতে বলছেন আগে গলায় দড়ি দিক তাঁর ভাইপো।’

দিলীপের এই মন্তব্য নিয়ে দমদম লোকসভা কেন্দ্রের প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “এই হচ্ছে বিজেপি, আরএসএস, আর দিলীপ ঘোষদের মনোভাব। বাংলার মানুষ সব দেখছেন।” মেদিনীপুরের সাংসদের এ হেন মন্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “দিলীপ ঘোষ নির্বোধ। ওঁর কথার যত কম জবাব দেওয়া যায় তত মঙ্গল। মানবাধিকার সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই ওঁর।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here