দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বিহারে ভোটযুদ্ধ প্রায় শেষের পথে। আগামী ভোট পশ্চিমবঙ্গে। যার দিকে পাখির চোখ নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ জুটির। গত লোকসভা নির্বাচণে ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গে কামাল দেখিয়েছে গেরুয়া শিবির। লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে উত্তরবঙ্গে ৫৬টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৪১টিতেই পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। আর ৩৯টিতে একনম্বরে পদ্ম শিবির।

এই পরিসংখ্যান অবশ্যই স্বস্তি দিচ্ছে বিজেপিকে। কিন্তু সেইসঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে জিততে যে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের আশীর্বাদও এবার ঝুলিতে লাগবে সেটাও স্পষ্ট জানেন বিজেপির চাণক্য অমিত শাহ। আর তাই বিহারে ভোটের আবহেই এই রাজ্যের সংগঠন খতিয়ে দেখতে ২ দিনের সঙ্গের এবার দক্ষিণবঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। 

অমিত শাহের এই সফর ঘিরে এখন সাজো সাজো রব বঙ্গ বিজেপিতে। ২ দিনের সফরে এবার শাহের গন্তব্য জঙ্গলমহলের বাঁকুড়া। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার রবীন্দ্র ভবনে রাঢ়বঙ্গের সাংগঠনিক জেলাগুলির বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন অমিত শাহ।

এর মাঝেই আদিবাসী পরিবারে মধ্যাহ্নভোজও সারবেন তিনি। শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগনার জ্যাোতি নগরে মতুয়া পরিবারে মধ্যাহ্নভোজের কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। তিন বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে এসে উত্তরবঙ্গে এমন একটি আদিবাসী এবং কলকাতার একটি উদ্বাস্তু পরিবারে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন শাহ। এ বারেও ফের আদিবাসী এবং উদ্বাস্তু পরিবারে ভোজনের কর্মসূচি। জনসংযোগই যে এর প্রধান লক্ষ্য তা নতুন করে বলার কিছু নেই।

দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গলমহল ও রাঢ়বঙ্গের জেলাগুলিতে প্রায় ৬০ লক্ষ আদিবাসী রয়েছেন। বঙ্গে ক্ষমতায় আসতে এই বিশাল ভোটব্যাঙ্কের দিকে নজর রয়েছে বিজেপির। তাই এবারের রাজ্য সফরে মতুয়া ও আদিবাসীর বাড়িতে খাবেন তিনি। এটা যে বঙ্গভোটের দিকে লক্ষ্য রেখেই বিজেপির সুচারু চাল তা বলাই বাহুল্য। 
 
এর আগে গত ১লা মার্চ বঙ্গ সফরে এসেছিলেন অমিত শাহ। এরপর করোনা কালে আর এমুখো হওয়া হয়নি। তবে লকডাউনের সময় বাংলার কর্মীদের মোটিভেট করতে ভারচুয়াল সভা করেছেন শাহ। বঙ্গ বিজেপিতে রদবদলের মাঝে অমিত শাহের এই বাংলা সফর তাই যথেষ্টই বার্তাবাহক। বিশেষজ্ঞমহল প্রশ্ন তুলছে আদিবাসী ভোটব্যাঙ্কের দিকে লক্ষ্য রেখেই কি অমিত শাহের এই বাঁকুড়া সফর।

কারণ লোকসভা ভোটে  উত্তরবঙ্গের মত জঙ্গলমহলও খালি হাতে ফেরায়নি গেরুয়া শিবিরকে। বাঁকুড়া জেলার ২টি লোকসভা কেন্দ্র – বাঁকুড়া এবং বিষ্ণুপুরে জয় পায় বিজেপি। শুধু তাই নয় বাঁকুড়ায় তপশিলি জাতি-উপজাতির ভোট প্রায় ৩৬ শতাংশ। সেই ভোটেরও একটা বড় অংশ গিয়েছিল পদ্ম শিবিরের দিকেই।

পরিসংখ্যানে জেলার ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রের সবকটিতেই এগিয়ে গেরুয়া শিবির। সেই ভোটব্যাঙ্ক অক্ষত রাখাই এখন বিজেপির কাছে বড় চ্যালে়ঞ্জ। তাই ময়দানে নামতে হয়েছে খোদ শাহকে। তবে বিজেপির এই অদাবিসী তোষন নিয়ে চাপে রয়েছে তৃণমূল তা স্পষ্ট। শাহের বঙ্গে আসার দিনই তাই মতুয়া ও আদিবাসী মন জয় করতে ঢালাও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। 

এবারের সফরে বৃহস্পতিবার সকালে হেলিকপ্টারে রাজারহাট থেকে বাঁকুড়া যাবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে রবীন্দ্র ভবনে রাঢ়বঙ্গের সাংগঠনিক জেলাগুলির বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। বিকেলে তাঁর কলকাতা ফেরার কথা। শুক্রবার সকালে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে যাবেন শাহ। সেখান থেকে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর বাড়ি। এর পর তিনি যাবেন বিধাননগরের ইজেডসিসি-তে। সেখানে কলকাতা ও লাগোয়া জেলাগুলির দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন শাহ।

বিকেলে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাতের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। শুক্রবার রাতে কলকাতা ছাড়বেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। দক্ষিণবঙ্গের দলীয় কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতেই যে শাহের এই সফর তা জানিয়েছেন বাংলার দায়িত্বে থাকা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়।

বাংলার ক্ষমতা দখলে মরিয়া গেরুয়া শিবির। তাদের নিশানায় রাজ্যে আদিবাসী-তফসিলি-মতুয়া ভোট।  এই সব  কর্মসূচির পাশাপাশিই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে অমিত শাহ  কী বলেন–স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে সেটাও মস্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। ক’দিন আগেই রাজ্যপাল দিল্লি গিয়ে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে  শাহের কাছে নালিশ জানিয়ে এসেছেন। আর রাজ্যের বিজেপি নেতারা অনেক দিন ধরেই রাষ্ট্রপতি শাসনে বিধানসভা ভোটের দাবি জানিয়ে আসছেন। প্রকাশ্যে বা সাংগঠনিক সভায় এই  বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী ইঙ্গিত করেন-সে দিকে নিশ্চিত ভাবে নজর থাকবে রাজ্যের শাসক শিবিরেরও।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here