দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ (Shraddha Walkar Murder Case) দিল্লির শ্রদ্ধা ওয়ালকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সামনে আসতেই যে প্রশ্নটা সবার মনে প্রথমে আসে। ভালবাসা কি ফুরিয়ে এসেছিল শ্রদ্ধা ওয়াকার ও আফতাব আমিন পুনাওয়ালার সম্পর্কে?

পরে পুলিশি জেরার মুখে আফতাবও স্বীকার করে নেয় যে, সম্পর্কের টানাপড়েন থেকেই তার লিভ-ইন সঙ্গী শ্রদ্ধাকে খুনের কথা ভাবে সে!

দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি শুরু হয় কবে থেকে ? পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে আফতাবের প্রেমে পড়েন শ্রদ্ধা। মহারাষ্ট্রের পালঘরের চাকরি ছেড়ে চলে আসে দিল্লিতে। আফতাবের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। পরে আফতাব দিল্লির ছত্তরপুরে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে, সেখানেই থাকতে শুরু করে দু’জনে।

তবে সম্পর্কের ভাঙন শুরু কীভাবে? এই নিয়ে পুলিশের সামনে সেভাবে মুখ না খুললেও শ্রদ্ধার ইনস্টাগ্রাম থেকে মিলেছে কিছু তথ্য। যা ইঙ্গিত করে যে শ্রদ্ধা সম্পর্ক থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে চাইছিলেন। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না শ্রদ্ধা। মাঝেমধ্যে দু’একটা পোস্ট করতে দেখা মিলেছে ৷

চলতি বছরের ভ্যালেন্টাইন ডে-তে আফতাবের সঙ্গে নিজের একটি ছবি পোস্ট করেন শ্রদ্ধা। ক্যাপশনে লেখা, ‘খুশির দিন…’, হ্যাঁ তখন সত্যিই দু’জনের সম্পর্ক ভাল ছিল। সেই ছবিতে আফতাবকে শ্রদ্ধার গালে চুমু খেতেও দেখা যায়। কিন্তু তারপর থেকেই ভাঙন শুরু হয়। অন্তত শ্রদ্ধার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে সেটাই জানা যাচ্ছে।

https://www.instagram.com/p/CZ9EjMeqPOX/?igshid=YmMyMTA2M2Y=

মৃত্যুর আগে দুটি পোস্ট করেছেন শ্রদ্ধা। কিন্তু সব ছবিতেই তিনি একা। একা একাই ঘুরতে বেরিয়ে গেছিলেন শ্রদ্ধা। গঙ্গার ধারের একটি রিল পোস্ট করেন। সেখানে তাঁর একাকীত্বতার ছবি ফুটে উঠেছে। এমনকী মৃত্যুর সপ্তাহ খানেক আগে পোস্ট করা একটি ছবি থেকেও সেই ধারণা স্পষ্ট!

https://www.instagram.com/reel/CdHybedJp3F/?igshid=YmMyMTA2M2Y=

শনিবারই দিল্লি পুলিশ গ্রেফতার করে আফতাবকে।  তাঁকে জেরা করেই একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য উঠে আসছে।

মে মাসে নয়, আগেই শ্রদ্ধাকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিল আফতাব আমিন পুনাওয়ালা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন শ্রদ্ধা, সেই কারণেই পরিকল্পনা পিছিয়ে দেন। দিল্লিতে লিভ ইন সম্পর্কে থাকা শ্রদ্ধা ওয়াকার খুন ও তাঁর দেহ ৩৫ টুকরো করার ঘটনায় তোলপাড় গোটা দেশ।

চলতি সপ্তাহের সোমবার থেকেই আফতাব আমিন পুনাওয়ালাকে জেরা করছে দিল্লি পুলিশ। জেরায় আফতাব মুখও খুলেছে, কীভাবে গত ১৮ মে শ্রদ্ধাকে খুন করেছিল সে এবং তারপরে দেহ ৩৫টি টুকরো করেছিল, তা ইতিমধ্যেই জানিয়েছে। এবার আফতাব জানাল, ১৮ মে নয়, তার ১০ দিন আগেই শ্রদ্ধাকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন শ্রদ্ধা, সেই কারণে খুনের পরিকল্পনা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় সে।

আফতাব জানিয়েছেন, ৮ মে তুমুল ঝগড়া হয়েছিল তাঁর সঙ্গে শ্রদ্ধার। সেই সময়ই গলা টিপে খুন করতে ইচ্ছা করেছিল তাঁর। কিন্তু ঝগড়ার মাঝেই হঠাৎ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন শ্রদ্ধা, হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করেন। শ্রদ্ধার কান্না দেখে কিছুটা মন গলে আফতাবের, খুনের পরিকল্পনা সেই সময়ের জন্য বাতিল করে দেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অনলাইন ডেটিং অ্যাপ বাম্বলে পরিচয় হয়েছিল শ্রদ্ধা ও আফতাবের। তিন বছর ধরে সম্পর্কে ছিলেন তাঁরা। সম্প্রতিই তাদের সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হয়। শ্রদ্ধার সন্দেহ ছিল, আফতাব অন্য কারোর সঙ্গেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল তাঁর সঙ্গে নিয়মিত ফোনে কথা বলতও সে। যার প্রেমে পড়ে পরিবার ছেড়ে এসেছিলেন, তাঁর হঠাৎ মন বদলেই অত্যন্ত মুষড়ে পড়েছিলেন শ্রদ্ধা। প্রায়সময়ই আফতাবের সঙ্গে ঝগড়া, চিৎকার-চেঁচামেচি করতেন।

গত ১৮ মে ফের বচসা হয় আফতাব ও শ্রদ্ধার মধ্যে। ঝগড়ার সময় আফতাব শ্রদ্ধার বুকের উপরে বসে পড়ে এবং গলা টিপে ধরে। খুনের পরেরদিন, মাংস কাটার ছুরি দিয়ে শ্রদ্ধার দেহ ৩৫ টুকরো করে, সেই অংশগুলি নতুন ৩০০ লিটারের ফ্রিজে জমিয়ে রাখে। দেহের বাকি অংশের থেকে মাথা আলাদা রাখে প্ল্যাস্টিকে মুড়িয়ে। প্রত্যেকদিন ফ্রিজ খুলে শ্রদ্ধার কাটা মুণ্ডু দেখত সে, এমনটাও জানা গিয়েছে তদন্তে।

গতকালই পুলিশ আফতাবকে দক্ষিণ দিল্লির মেহরৌলিতে নিয়ে যায়, সেখানের জঙ্গলে কোথায় কোথায় শ্রদ্ধার দেহ ফেলেছিল, তা দেখায় আফতাব। তিন ঘণ্টা ধরে খুঁজে দেহের ১৩টি টুকরো উদ্ধার করা হয়। এখনও অবধি দেহাংশে ভর্তি মোট ১০টি প্যাকেট উদ্ধার করা হয়েছে। সবকটি দেহাংশের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।

উল্লেখ্য, নিজের প্রেমিকা শ্রদ্ধাকে খুব ঠান্ডা মাথায় খুন করার পরিকল্পনা নেয় আফতাব। কিন্তু সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন যে কতটা নৃশংস আকার নিতে পারে, তা শ্রদ্ধার খুনের ঘটনা সামনে আসতেই বোঝা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে আফতাবের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here