দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আসন্ন পুরভোটে কোন ওয়ার্ডে কে টিকিট পাবেন, কে পাবে না, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন খোদ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনও বিধায়ক, সাংসদ, মন্ত্রী এ ব্যাপারে কিছু করতে পারবেন না। কেননা, তাঁরা টিকিট দেওয়ার মালিক নন। শনিবার রাতে তৃণমূল ভবনে কলকাতার দলীয় কাউন্সিলরদের ডেকে এই কথা সাফ জানিয়ে দিলেন মেয়র ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং দলের সভাপতি সুব্রত বক্সি৷


সমাপ্তি ভাষণ দেন মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার। কলকাতা পুরসভার চেয়ারম্যান মালা রায় দিল্লিতে বাজেট থাকার জন্য আসতে পারেননি। এছাড়া সব কাউন্সিলর এদিন উপস্থিত ছিলেনদলের সিনিয়র কাউন্সিলরদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অপরাজিতা দাশগুপ্ত, রত্না শূর, অশোকা মণ্ডল, মিতালি ব্যানার্জি, স্বপ্না দাস, সাধনা বসু, শান্তনু সেন, অভিজিৎ মুখার্জি, সামসুজ্জামান আনসারি, মঞ্জর ইকবাল, রাম পেয়ারি রাম, অনিন্দ্য রাউথ, পবিত্র বিশ্বাস প্রমুখ।

সূত্রের খবর, দলের অন্তত ১৬ জন কাউন্সিলর সম্পর্কে অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা এ বার নিজেদের ওয়ার্ডে টিকিট পাচ্ছেন বলে এলাকায় প্রচার করে দিয়েছেন। অন্য দিকে, নানা কারণে টিকিট পাবেন না ধরে নিয়ে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর বসে গিয়েছেন। ওয়ার্ডের কাজ শিকেয় উঠেছে। কয়েকজন নেতা এদিন কাউন্সিলরদের বলেন, আপনাদের ৫ বছরের জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন দলনেত্রী। তাই ৫ বছর পুরো দায়িত্ব পালন করতে হবে। টিকিট পাবেন না ধরে নিয়ে এভাবে হাত গুটিয়ে নিলে চলবে না৷

বৈঠক চলে বেশকিছু সময়। তা থেকেই কাউন্সিলরদের ধারণা, পুরভোটে টিকিট পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে জটিলতা কাটাতেই সবাইকে ডেকে সতর্ক করে দেওয়া হল। ফিরহাদ বলেন, ‘যাঁদের ওয়ার্ড সংরক্ষণের আওতায় পড়েছে তাঁদেরও মাথায় রাখা উচিত, জনপ্রতিনিধি হিসেবে ওয়ার্ডের প্রতি তাঁর দায়িত্ব আছে। সংরক্ষণের জন্য দাঁড়াতে পারবেন না বলে ওয়ার্ডের কাজ বন্ধ করবেন না। ভুলে যাবেন না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজর সবদিকেই আছে।’ বৈঠকে আলোচনা হয়েছে ৩, ৬, ৯— এই ফর্মুলায় আসন সংরক্ষণ হয়েছে। এই ফর্মুলা অনুযায়ী আমাদের লড়াইয়ে নামতে হবে। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস আমাদের শত্রু। এক ইঞ্চি জায়গাও তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে না। সিপিএম, কংগ্রেস জোট করছে। দলের ভাবমূর্তি যাতে উজ্জ্বল থাকে, সেদিকে নজর রেখে লড়াইয়ে নামতে হবে।

সূত্রের খবর, ওয়ার্ডপিছু প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য একটি কমিটি গড়া হয়েছে ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত বক্সিকে রেখে। সেই কমিটি ওয়ার্ডপিছু বেশ কয়েকটি নাম সুপারিশ করবে। সঙ্গে থাকবে সুপারিশ করার কারণ। সেই সুপারিশ খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলনেত্রী।
কিছুদিন যাবৎ বাজারে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, ভাবমূর্তি এবং এলাকায় কাজের নিরিখে অনেকেই এ বার টিকিট নাও পেতে পারেন। ওই প্রসঙ্গ তুলে কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্যে এদিন ফিরহাদ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘বাজারে অনেকে গুজব ছড়াচ্ছে। সে সবে কান দেবেন না। মন দিয়ে এলাকায় কাজ করুন।’ মেয়র এদিন আরও জানিয়েছেন, ‘দলনেত্রী একটা নির্দেশ দিয়েছেন। তা আমি আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছি, টিকিট একমাত্র দলনেত্রীই দেবেন।’
সম্প্রতি, পুরভোটের খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। ওই খসড়া তালিকা মোতাবেক, বেশ কয়েকজন মেয়র পারিষদ, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর তাঁদের ওয়ার্ডে এ বার দাঁড়াতে পারবেন না। যা নিয়ে অনেকেই মুষড়ে পড়েছেন। ঘনিষ্ঠমহলে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন কয়েকজন। এদিনে বৈঠকে উঠে এসেছে সংরক্ষণের প্রসঙ্গও।

দলীয় সূত্রে খবর, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি এদিন কাউন্সিলরদের জানিয়ে দিয়েছেন, পুরভোট ঘোষণার আগে ১০০ শতাংশ কাজ শেষ করতে হবে। কোনও কাজ ফেলে রাখা দল মেনে নেবে না। ওয়ার্ড সংরক্ষণ হয়েছে বলে গা এলিয়ে দেওয়া দল বরদাস্ত করবে না বলেও এদিন কাউন্সিলদের সাফ জানিয়ে দিয়েছে শীর্ষ নেতৃত্ব।ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ, দেবাশিস কুমার বলেন, ওয়ার্ডের পরিষেবা ঠিকমতো মানুষ পাচ্ছেন কি না, সে ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ রাখা হচ্ছে। একজন কাউন্সিলরও বিজেপি–তে যাননি। দলের প্রতি আস্থা রেখে মমতার ওপর ভরসা রেখে তাঁরা কাজ করছেন। সংরক্ষণের জন্য কয়েকজন কাউন্সিলর দাঁড়াতে পারছেন না। সেসব আসনে তাঁদের স্ত্রীকে দঁাড় করানো যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনা–চিন্তা করা হচ্ছে। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, সাধাসিধে জীবন ও সারা বছর নিষ্ঠা নিয়ে দলের কাজ যাঁরা করেছেন,তাঁরাই মনোনয়ন পাবেন।‌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here