দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ নবান্ন ও রাজভবনের মধ্যে বিতর্কের রোজ পটকা ফাটছে। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় জেলা সফরে গিয়ে প্রশাসনিক ডাকলে সরকার যেমন অসহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ। তেমনই রাজ্যপাল ধারাবাহিক তোপ দেগে চলেছেন নবান্নের বিরুদ্ধে। কখনও বলছেন, তাঁকে কার্নিভালে ডেকে অপমান করা হয়েছে। কখনও বা বলছেন, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তলানিতে এসে ঠেকেছে।

তবে কালীপুজোর দিন বুঝি এ সব শব্দ বাজি জব্দ হবে!

আগেই জানা গিয়েছিল যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বাড়িতে কালীপুজোয় রাজ্যপালকে নিমন্ত্রণ করেছেন। নবান্ন ও তৃণমূলের একটি সূত্র দাবি করছিল, ভাইফোঁটাতেও ধনকড়কে নিমন্ত্রণ করেছেন মমতা।

আজ রাজ্যপাল জানান, ভাইফোঁটার নিমন্ত্রণ তিনি পাননি। তবে মুখ্যমন্ত্রীর থেকে কালীপুজোর নেমন্তন্ন পেয়েছেন। তাতে তিনি খুব খুশি। কালীপুজোয় তিনি সস্ত্রীক যাবেন কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে।

বহুদিন ধরে বাড়িতে কালীপুজো করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নিজে সারাদিন উপোস রাখেন। ভাইয়ের বউদের সঙ্গে নিয়ে ঠাকুরের ভোগ রান্না করেন। তার পর রাতে অঞ্জলী দিয়ে পুজো শেষ হলে তবেই জল খান। ইদানীং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপোস রাখেন কালীপুজোয়।

কালীপুজোর দুপুর থেকেই দলের নেতা মন্ত্রী এবং পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের ভিড় লেগে থাকে দিদি-র বাড়িতে। উঠোনে চেয়ার পেতে জটলা করে খোশ গল্প চলে। সুযোগ পেলে দিদিও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। কে নেতা, কে মন্ত্রী, কে পুলিশ কর্তা তখন বোঝা দায়। কেউ অতিথিদের চা এগিয়ে দিচ্ছেন, কেউ পুজোর জোগাড় করছেন—সবাই ব্যস্ত। আগে দিদির বাড়ির কালীপুজোয় অবশ্য সবচেয়ে ব্যস্ত থাকতেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। এ বছর স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

দিদির বাড়িতে ভাইফোঁটাও ভাল করেই হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের ভাই চার জন। কিন্তু তাঁদের ছাড়া দলের নেতা,মন্ত্রী এবং তিন-চার জন সাংবাদিককে ভাইফোঁটা দেন মুখ্যমন্ত্রী।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে নবান্ন-রাজভবন সংঘাত যখন এতটাই তীব্র তখন মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ কেন রাজ্যপালকে নিমন্ত্রণ করলেন কালীপুজোয়। তৃণমূলের শীর্ষ সারির একাধিক নেতার মতে, দিদি এ সব ব্যাপারে বরাবরই ঘরোয়া। প্রটোকল, পদ ইত্যাদি নিয়ে অতো ভাবেন না। তবে হতে পারে যে দিদি কৌশলে তাঁর দিক থেকে সৌজন্যের কোনও ত্রুটি রাখছেন না। রাজ্যপাল যখন উঠতে বসতে তাঁর সরকারকে তুলোধনা করছেন, তখন দিদি নিজে বিতর্কে না ঢুকে উদার ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি যতবার রাজ্যপাল সরকারের সমালোচনা করেছেন, ততবার দলের তরফে পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাঁকে পাল্টা জবাব দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী কোনও মন্তব্য করেননি।

রাজ্যপাল যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন তাও তাৎপর্যপূর্ণ। রাজভবনের এক আমলার মতে, জগদীপ ধনকড়ও দেখাতে চাইলেন যে তিনি যে সব সমালোচনা করেছেন তা প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক কারণে। ব্যক্তিগত ভাবে তিনি মমতা-বিরোধী নন। বরং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ বোঝাপড়া রেখেই তিনি চলতে চান। তা ছাড়া সংবিধানিক ভাবে আদতে রাজ্যে তো তাঁরই সরকার চলছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here