দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ নারদ মামলায় নাটকীয় মোড়। এবার মামলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম জুড়ল সিবিআই। নারদ মামলায় এবার মুখ্যমন্ত্রীকে পার্টি করল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এই মামলা অন্য রাজ্য স্থানান্তরের কেসে যুক্ত করা হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। একইসঙ্গে জোড়া হল রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও।

হাইকোর্টে সিবিআই জানিয়েছে, সোমবার পরিকল্পিত ভাবে সিবিআই অফিস ঘেরাও করা হয়। সিবিআই অফিসে ৬ ঘণ্টা ধর্ণা দেন তিনি। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা আধিকারিকরা দাবি করেছেন আদালতে। সেদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআই অফিসে এসে চিৎকার করে অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন এমনকী নইলে তাঁকে গ্রেফতার করার দাবি জানান।

নারদ মামলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক এবং তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও পার্টি তথা পক্ষ করে দিল সিবিআই।

কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই মামলায় পার্টি করা হল? তাঁর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ এনেছে সিবিআই?

রিট পিটিশনে হাইকোর্টে সিবিআই জানিয়েছে, সেদিন চার অভিযুক্তকে নিজাম প্যালেসে নিয়ে আসার পর নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে যায়। সকাল ১০ টা ৫০ মিনিটে সিবিআই অফিসে চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযুক্তরা যেখানে বসেছিলেন, সোজা সেখানে চলে যান। সিবিআই অফিসে ঢুকতে ঢুকতেই তিনি চিৎকার করতে থাকেন, ‘আমাকেও গ্রেফতার করুন’।

গ্রেফতার হওয়ার চার জনকে নিঃশর্তে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন তিনি। অভিযুক্তদের আদালতে পেশ করতেও বাধা দেওয়া হয়। সিবিআইয়ের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী সিবিআই অফিসারদের সম্পর্কে অসম্মানজনক ও অবমাননাকর মন্তব্যও করতে থাকেন, তাঁদের হুমকি পর্যন্ত দেন।

রিট পিটিশনে সিবিআই জানিয়েছে, নিজাম প্যালেসের সিবিআই অফিসারদের বিরুদ্ধে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ধারায় মামলা করার হুমকি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর সেখানে তিনি ধর্নায় বসে পড়েন। প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে তিনি ধর্না দেন। সেই সঙ্গে সুপরিকল্পিত ভাবে নিজাম প্যালেসের সামনে বিপুল সংখ্যক সমর্থক জড়ো করে রাস্তা আটকে রাখা হয়। যাতে অভিযুক্তদের আদালতে পেশ করা না যায়।

তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও রিট পিটিশনে বড় অভিযোগ করা হয়েছে। আবেদনে বলা হয়েছে, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সেদিন এক ঝাঁক আইনজীবী নিয়ে সিবিআই দফতরে ঢুকে যান। সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার প্রধান, অফিস হেডকে হেনস্থা করেন। তাঁদের ভয়ঙ্কর পরিণতি হবে বলে হুমকি দেন।

একই ভাবে আইন মন্ত্রী মলয় ঘটকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে। রিট পিটিশনে বলা হয়েছে, বিপুল সংখ্যক সমর্থক নিয়ে রাজ্যের আইনমন্ত্রী সারাদিন নিম্ন আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আদালত চত্বরে সবাইকে সন্ত্রস্থ করে রাখার চেষ্টা হয়েছে।

সিবিআইয়ের মোদ্দা বক্তব্য হল, বাংলায় আইনের শাসন নেই। যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী নেতৃত্বে সেদিন সিবিআই দফতরের বাইরে ও আদালত চত্বরে অশান্তির পরিবেশ কায়েম করে রাখা হয়েছিল, তাতে এখানে সুষ্ঠু বিচার সম্ভব নয়। যে পরিবেশে রায় ঘোষণা করতে হয়েছে নিম্ন আদালতকে তাতে ওই রায়ের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা থাকা সম্ভব নয়। তাই এই মামলা অন্য রাজ্যে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক। কারণ, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী এবং সরকারের অন্য আধিকারিকরা বিচার প্রভাবিত করার চেষ্টা করে সেখানে ন্যায় বিচার সম্ভব নয়।

এর আগেও বহুবার এক রাজ্যের মামলা পরিস্থিতির কারণে অন্য রাজ্যে নিয়ে যেতে হয়েছে। যাতে যে রায় আদালত দেবে তা যেন নিরপক্ষে ও সঠিক হয়। সেই সব অতীত দৃষ্টান্তও রিট পিটিশনে তুলে ধরেছে সিবিআই।

নারদ মামলায় গত সোমবার যে ঘটনা ঘটেছে সেটাই প্রথম নয়। সিবিআই কর্তাদের বক্তব্য, বাংলায় এ ঘটনা বারবার হচ্ছে। অতীতে সারদা কাণ্ডে তৎকালীন কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে তাঁর সরকারি বাসভবনে গিয়েছিলেন সিবিআই অফিসাররা। তখনও রাজ্য পুলিশের হাতে হেনস্থা হতে হয় সিবিআই অফিসারদের। সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য এই পরিস্থিতি বিপজ্জনক।

কলকাতা হাইকোর্টে হাইভোল্টেজ নারদ মামলার শুনানি শুরু হবে দুপুর ২টোয়। প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে এই শুনানি চলবে।

মামলার প্রতিপাদ্য বিষয় দুটি। এক— নারদ মামলায় রাজ্যের দুই মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিম এবং দুই প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায় জামিন পাবেন কিনা!
এবং দুই— নারদ মামলা রাজ্যের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে কিনা।

প্রথম বিষয়টির ব্যাপারে সিবিআই বিশেষ আদালত তথা নিম্ন আদালতের বিচারক রায় দিয়েছিলেন। অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছিলেন চার জনকে। তবে জানিয়েছিলেন, পনেরো দিনে একবার তদন্তকারী অফিসারের সামনে হাজিরা দিতে হবে। কিন্তু সেই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্ট।

দ্বিতীয় বিষয়টি উত্থাপন করেছে সিবিআই। তাদের বক্তব্য, সোমবার নিজাম প্যালেসে তাদের দফতরের উপর হামলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআই দফতরে বসে দাবি করেছেন, চার জনকেই শর্ত সাপেক্ষে ছেড়ে দিতে হবে। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআই দফতরে ঢুকে পড়ে অফিসার, কর্মীদের হেনস্থা করেছেন। আর নিম্ন আদালত চত্বরে দিনভর হাজার দুয়েক সমর্থক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাজ্যের আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক। এমন পরিবেশে কোনও মামলার শুনানি হলে তার রায়ের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস থাকতে পারে না।

সরকার ও তৃণমূলের পক্ষে আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি ও সিদ্ধার্থ লুথরা সওয়াল করবেন। সঙ্গে থাকবেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সিবিআইয়ের পক্ষে সওয়াল করবেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here