দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ নয় বছর আগে নন্দীগ্রামের পথ ধরেই বাংলায় রাজনৈতিক পালাবদল হয়েছিল। গায়ের জোরে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী।


মঙ্গলবার ১০ নম্ভেবর, নন্দীগ্রামে সিপিএমের বাহিনীর হানার ত্রয়োদশ বছর পূর্তি। তার প্রাক সন্ধ্যায় রাজ্য রাজনীতিতে বড় কৌতূহল তৈরি হয়েছে—ফের কি মাইলফলক হতে চলেছে নন্দীগ্রাম।

এমনিতেই শুভেন্দুর গতিবিধি নিয়ে তৃণমূলের আশঙ্কা রয়েছে। বাংলার রাজনীতিতে জল্পনা, একুশের ভোটের আগে দলীয় নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে তৃণমূল ছাড়তে পারেন এই দাপুটে নেতা। তার মধ্যেই কাল নন্দীগ্রামে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে জনসভার ডাক দিয়েছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। ‘রক্তস্নাত সূর্যোদয়ের’ ১৩ বছর পূর্তি শহিদদের স্মরণে সভা করবেন তিনি।
তৃণমূলের উদ্বেগ এখানেই। সেই সভা তৃণমূলের ব্যানারে হচ্ছে না। তা হচ্ছে জমি উচ্ছেদ কমিটির ব্যানারে। এই অবস্থায় নন্দীগ্রামের হাজরাকাটায় পাল্টা সভা ডেকেছে তৃণমূল। যার নেপথ্যে রয়েছেন শেখ সুফিয়ান, অখিল গিরি প্রমুখ। সেই সভায় যোগ দিতে পারেন তৃণমূলের অন্যতম সংখ্যালঘু মুখ তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে আজ সাংবাদিকদের ফিরহাদ হাকিম বলেন, “শুভেন্দুর উচিত ছিল তৃণমূলের হয়েই মিটিং করা। কারণ, শুভেন্দু আমাদের দলের সদস্য। দলের সভাটাই আমাদের সভা। আমরা কেউ নির্দল নই, অদল নই।” ববি জানিয়েছে, দল সেখানে সভা করলে নিশ্চয়ই যাবেন।


তবে শুভেন্দুর অনুগামীরা পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন ফিরহাদ হাকিমের উদ্দেশে। তাঁদের বক্তব্য, শুভেন্দু অধিকারী যখন নন্দীগ্রামের বিধায়ক ছিলেন না তখনও প্রতি বছর ১৪ মার্চ ও ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামে সভা করেন। ঈদে, দুর্গাপুজোয় শহিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের বিপদে আপদে পাশে থাকেন। কিন্তু শেষ কবে তৃণমূলের শীর্ষ সারির নেতারা ১৪ মার্চ ও ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামে শহিদ স্মরণে এসেছিলেন ফিরহাদ হাকিম কি তা মনে করে বলতে পারবেন?


শুভেন্দু অনুগামীদের এও বক্তব্য, নন্দীগ্রামের আন্দোলন হয়েছিল বলেই বাংলায় ক্ষমতায় আসতে পেরেছিল তৃণমূল। কিন্তু কলকাতার নেতারা নন্দীগ্রামকে ভুলে গেছেন।

প্রসঙ্গত, নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গে গতকাল রবিবার মুখ খুলেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। তাঁর কথায়, “শুভেন্দু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নন্দীগ্রামের আন্দোলন করেছিলেন বলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন। সেই আন্দোলনে কোনও ভাইপো ভাইঝি ছিল না।” অধীরবাবু এও বলেছিলেন, “আমি নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়ে সেখানে গিয়ে দেখেছি, ভূমি রক্ষার জন্য আন্দোলনকারীরা শুভেন্দুর উপর কতটা ভরসা করছিলেন।”


সব মিলিয়ে নন্দীগ্রামকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে যে জমজমাট পরিস্থিতি সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। এ বিষয়ে শুভেন্দুবাবু সোমবার বিশেষ কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। তিনি বলেন, “নন্দীগ্রামের মাটি আমার কাছে পবিত্র। প্রতি বছর ১০ নভেম্বর শহিদ স্মরণে সেখানে যাই। নন্দীগ্রামের মানুষ জানে আমি ডুমুর ফুল নই। বাকি যা বলার কাল বলব”।

 সম্পর্ক নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন ঘুরছে বঙ্গ রাজনীতিতে। ‘দাদার অনুগামী’ নাম দিয়ে পোস্টার ব্যানারও পড়তে শুরু করেছে পূর্ব মেদিনীপুর সহ বিভিন্ন জায়গায়। জল্পনা আরও দানা বাঁধে পুরুলিয়ার বিজয়া সম্মিলনীর গেরুয়া কার্ড ঘিরে। এমনকি সেই ছবিতে রাজস্থানি পাগড়ি মাথায় দেখা যায় শুভেন্দুকে। এরপর পটাশপুরের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েও মানুষের সঙ্গে থাকার বার্তা দেন শুভেন্দু। সেখানে সংবিধানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শুভেন্দু বলেন, “আমাদের ভারতের সংবিধানে ইংরেজিতে ৩টি শব্দ আছে। পুরো ব্যবস্থাটা চলবে ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, অফ দ্য পিপল। যদি কেউ পার্টিকে দেখে কাজ করেন তাহলে কিছুদিন থাকবেন, বেশিদিন থাকবেন না। কিন্তু যদি মানুষকে নিয়ে যদি কাজ করেন তাহলে অনেকদিন থাকবেন।” শুভেন্দুর এই কথার পরেই প্রশ্ন ওঠে আদতে এই বার্তা কাকে দিলেন তিনি। এমনকি মুর্শিদাবাদে যে প্রয়াত তৃণমূল নেতার স্মরণ সভায় রবিবার শুভেন্দু যোগ দেন সেখানেও ছিল না কোনও দলীয় পতাকা। উপস্থিতি ছিলেন না জেলার কোনও শীর্ষ নেতৃত্বও। আর তারপর এদিনের এই ব্যানার। যার জেরে জল্পনা আরও জোরালো হল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। 

সূত্রের খবর, এই ব্যানারে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হাওড়া জেলা তৃণমূলের অন্দরেও। যদিও প্রকাশ্যে অবশ্য বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে রাজি নয় জেলা নৃতৃত্ব। এপ্রসঙ্গে জেলার গ্রামীণ তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি পুলক রায় জানান, “শুভেন্দু অধিকারী দলেরই সদস্য ও রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবং নেতা। তাই তাঁর নামে পোস্টার পড়লে কোনোও অসুবিধা নেই। তাছাড়া ওই ব্যানারে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নামও লেখা নেই। তাই এই ব্যানার নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here