দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির চোটে এ বার তো মানুষ না খেতে পেয়ে মরবে! এমন আশঙ্কা খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিশেষ করে আলু, পেঁয়াজ, লঙ্কার মতো অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর যে চড়া দর, তাতেই প্রমাদ গুনছেন সাধারণ মানুষের মতো মুখ্যমন্ত্রীও। আর এর জন্য তিনি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইনে সাম্প্রতিক বদল এবং তার জন্য কাঠগড়ায় তুলেছেন কেন্দ্রীয় সরকারকেই।

সোমবারও বাজারে চন্দ্রমুখী আলু বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা দরে। জ্যোতি আলুর দাম ছিল ৪২ টাকা। সেই দাম নামার নামও নিচ্ছে না। আলু-পেঁয়াজের যখন এমনই আগুন দাম, তখন এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, কেন্দ্র সম্প্রতি নতুন যে আইন করেছে তার জন্যই মজুতদাররা পেয়ে বসেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী যথেচ্ছ মজুত হচ্ছে বলেই দাম বাড়ছে।


বাজারে আলু-পেঁয়াজের দাম কেন বেশি তা নিয়ে গতকাল রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ একটা ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছিলেন। হলদিয়ায় এক সভায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, তৃণমূলের নেতারা কাটমানি নিচ্ছেন বলেই আলু-পেঁয়াজেরও দাম বাড়ছে। তখনই আপত্তি করেছিল তৃণমূল। বলেছিল, মিথ্যা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন বিজেপি সভাপতি। তার পর সোমবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এ বার আপনি সামলান। মানুষ বিপাকে পড়ছে।

রাজ্যের বক্তব্য, সম্প্রতি আইনে সংশোধন এনে সরকার আলু, পেঁয়াজকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। তার পর থেকেই মজুত শুরু হয়েছে। হাওড়ার এক আলু ব্যবসায়ী কথায়, জ্যোতি আলু বাইরে যাচ্ছে। তার দাম কমছে না। আর চন্দ্রমুখীর যে সরবরাহ বাজারে রয়েছে তা যথেষ্ট নয়। প্রচুর পরিমাণে চন্দ্রমুখী আলু মজুত করে রাখা হয়ে, দাম নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সোমবার জ্যোতি আলুর পাইকারি দাম ছিল ১৭৭০ টাকা বস্তা। অর্থাৎ সাড়ে ৩৫ টাকা কেজি। চন্দ্রমুখী আলুর বস্তা ছিল ১৮৪০ টাকা। অর্থাৎ ৩৭ টাকা কেজি।

প্রধানমন্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ২০১৪-১৫ সালে একবার এ ধরনের অবস্থা হয়েছিল। কিন্তু তখন রাজ্য সরকার দাম বেঁধে রাখতে পেরেছিল। নতুন আইনের ফলে রাজ্যের হাতে কোনও ক্ষমতা নেই, সবই কেন্দ্রের হাতে। তাড়াহুড়ো করে এই আইন পাশ করানোর সময়েই আমরা সতর্ক করেছিলাম। আমাদের সেই আশঙ্কাই সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। এখন হয় কেন্দ্র দাম নিয়ন্ত্রণ করুক বা রাজ্যের হাতে সেই ক্ষমতা দিক।


কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের এক অফিসার অবশ্য বলেছেন, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম লাগামহীন ভাবে বাড়লে রাজ্যেরও দাম নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার রয়েছে। আইনে সে কথা বলাও রয়েছে। রাজ্য চাইলে তার প্রয়োগ করতেই পারে।

এদিকে, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পদক্ষেপও করেছে নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জারি হয়েছে সরকারি নির্দেশিকা। মুখ্যসচিবের দফতর থেকে জারি ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পাইকারি ব্যবসায়ীরা ২৫ মেট্রিক টন এবং খুচরো ব্যবসায়ীরা ২ মেট্রিক টনের বেশি পেঁয়াজ মজুত করতে পারবেন না। এই নির্দেশ অমান্য করলে সেই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই নির্দেশ বলবৎ থাকবে।

ইতিমধ্যে পেঁয়াজের দাম কোথাও কোথাও একশো টাকা হয়েছে। ঢেঁড়শ-টম্যাটো-করলা ৮০ টাকা কিলো, কুমড়ো ৪০ টাকা কিলো, মোচা প্রতিটি গড়ে ৪০ টাকা! তবে হাফ সেঞ্চুরির দোড়গোড়ায় পৌঁছে আলুর দাম কিছুটা নামতে শুরু করেছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। পাইকারি বাজারে প্রতি কুইন্টালে আলুর দাম কমেছে ১০০ টাকা। হঠাৎ করেই কমে গিয়েছে চাহিদা। কাল-পরশু থেকেই খুচরো বাজারে তার প্রভাব পড়তে শুরু করবে এবং আলুর দাম কমবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। কালীপুজোর পর আলুর দাম আরও নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে দাবি হিমঘর মালিকদেরও।

সম্প্রতি প্রশাসনিক বৈঠকেও মমতা বলেছিলেন, ‘আলু, পেঁয়াজ, লঙ্কা নিয়ে যে যা ইচ্ছে করছে। কেন্দ্র তো এখন মজুতদারিররাস্তা খুলে দিয়েছে!’ তিনি ব্যাখ্যা করেন, আগে অত্যাবশ্যকীয় নানা জিনিসের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের হাতে আইনি ক্ষমতা ছিল। প্রতি মাসে রাজ্যে প্রশাসনিক স্তরে বৈঠক হত। আলু-পেঁয়াজ-চাল ইত্যাদির মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে রাজ্য হস্তক্ষেপ করত। এক সময় রাজ্য সরকার বাজারে দামে ভারসাম্য আনতে পেঁয়াজ বিক্রিও করেছে। তাঁর কথায়, ‘লকডাউনের আগে আমরা ৪০ হাজার মেট্রিক টন আলু তুলে রেখেছিলাম। তা থেকে সরকার এখনও ২৫ টাকা দরে আলু সুফল বাংলায় বিক্রি করছে। হাতে যা আছে, তাতে ডিসেম্বর পর্যন্ত করা যাবে। কিন্তু কেন্দ্র এখন রাজ্যের আইনি ক্ষমতা খর্ব করেছে। দাম চড়ছে। কেন্দ্র নিষ্ক্রিয়।’

তবে মুখ্যমন্ত্রী ইঙ্গিত দেন, সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও রাজ্য এই পরিস্থিতিতে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। মমতা বলেন, ‘রাজ্যের তো কিছু অধিকার থাকার কথা। আমি আমার বাড়িতে কোথায় রান্নাঘর বানাব, বসারঘর বা খাওয়ার ঘর বানাব–সেটা আমার অধিকার। কেউ কি এসে আমায় বাধা দিতে পারে? সে রকম যদি কেন্দ্র মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে কোনও ব্যবস্থা না নেয়, তা হলে রাজ্যের হাতে ছেড়ে দিক।’ তিনি প্রশাসনিক কর্তা ও এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চকে বলেন, কোথায় কারা মজুতদারি, কালোবাজারি করছে–তাদের চিহ্নিত করতে হবে। এর পর রাতেই পেঁয়াজ নিয়ে নির্দেশ জারি করে সরকার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here