দেশের সময়-বিজেপির একাধিক নেতার বিরুদ্ধে নারী নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে।সম্প্রতি বিজেপির এক মিছিল চলা কালীন,একটি কলেজ পড়ুয়া মেয়ে সিএএ ও এনআরসি বিরোধী পোস্টার হাতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করায়,বিজেপি কর্মীরা তার উপর চড়াও হয়।তার পোস্টার ছিঁড়ে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির সমর্থক ও কর্মীদের বিরুদ্ধে।এই ঘটনা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ যে মন্তব্য করেছলেন তার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে নারী নিগ্রহের অভিযোগ দায়ের হয়েছে একটি থানায়৷

অভিযোগে বলা হয়েছে বিজেপির রাজ্য সভাপতি যে ভাবে এক নারীকে লক্ষ্য করে বলেছেন যে ওর ভাগ্য ভাল যে সেদিন বিজেপির সমর্থক ও কর্মীরা শুধু মাত্র ঐ মেয়েটির কাছ থেকে তার পোস্টার কেড়ে নিয়ে ওকে ছেড়ে দিয়েছে।ওকে ছেড়ে না দিয়ে ওর সঙ্গে আরও অনেক কিছু করা যেত বলে অত্যন্ত কুরুচিপূণ মন্তব্য করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি।

এই মন্তব্যের জেরে দিলীপ বাবুর বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন ঐ মেয়েটির পরিবার।যে কোন দিন থানা থেকে দিলীপবাবুকে ডেকে পাঠানো হতে পারে বলে খবর।আইনজ্ঞদের মতে এভাবে মহিলাের সম্পর্কে মন্তব্য করা নারী নিগ্রহের আওতার মধ্যে পড়ে।এই মন্তব্যের জেরে থানায় ডেকে গ্রেপ্তার করা যায় অভিযুক্তকে।

রাজ্য রাজনীতিতে জোর চর্চা শুরু হয়েছে যে রাজ্য সরকার বিজেপির রাজ্য সভাপতির বিরুদ্ধে আপাতাত হাতে একটা অস্ত্র সাজিয়ে রাখল।দিলীপবাবু বেশী বাড়াবাড়ি করলে যে কোন সময়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।লিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ অবশ্য একটা নয় আর আছে।বিজেপির রাজ্য সভাপতির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই আর এক মারাত্মক অভিযোগ করেছেন বিজেপিরই সহযোগি সংগঠন আরএসএসেরই ঘনিষ্ট এক মহিলা।

তাঁর অভিযোগ ২০১৮ সালে কলকাতার পিয়ারলেস ইন হোটেলে বিজেপি ও আরএসএসের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার জন্য ডেকে নিয়ে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করে আরএসএসের দুই প্রচারক।সেই ঘটনার আগের দিন তাকে হোটেলে যাবার জন্য বলেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষই।সেই মহিলার অভিযোগ তাকে পিয়ারলেস ইন হোটেলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করার যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল তার সঙ্গে দিলীপ ঘোষও জড়িত,তা না হলে দিলীপবাবু কেন তাকে আগের দিন ফোন করে ঐ হোটেলে একা যেতে বলেছিলেন।

নির্যাতিতা সেই মহিলা ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন একটি থানায়।প্রসঙ্গত আরএসএস ঘনিষ্ট এই মহিলা বছরখানেক আগেই আরএসএসের প্রচারক ও এরাজ্যের এক দায়িত্বপ্রাপ্ত আরএসএস কর্মী অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করা ও তার বিষয় সম্পত্তি হস্তগত করার অভিযোগ এনেছিলেন।

সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বছর খানেক আগেই রাজ্য পুলিশ আরএসএসের সেই প্রচারক অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে বাইরের রাজ্য থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে।আরএসএসের সেই প্রচারক অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায় আপাতাত জামিন পেলেও তার মামলা এখনও চলছে।শুধু অমলেন্দু চট্টোপাধ্যাই নয় সেই মহিলা এখন বিজেপি ও আরএসএসের আর বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে চলেছেন।এর মধ্যে দিলাপ ঘোষের বিরুদ্ধে তার ধর্ষণের ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।অনেকেই মনে করছেন এই অভিযোগও গুরুতর,এই অভিযোগের ভিত্তিতেও দিলীপ ঘোষকে রাজ্য পুলিশ তাদের হেপাজতে নিয়ে নিতে পারে।

সেই মহিলা সম্প্রতি এক সাংবাদ মাধ্যমে তার উপর হওয়া নিপীড়ন ও নির্য়াতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন যে তিনি বিজেপির প্রভাবশালী নেতা ও আরএসএসের প্রচারকদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন বলে তাকে প্রতিনিয়ত খুনের হুমকি ও রাস্তায় বেরুলেই তাকে আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে।রাজ্য সরকার গোটা বিষয়টা নজরে রাখছে বলে খবর।

এ রাজ্যের শাসক দল বিজেপির নেতা ও তাদের সহযোগি আরএসএসের প্রচারকদের যে কোন সময় গ্রেপ্তার করতে পারে। সেভাবেই কেস সাজিয়ে রাখা হয়েছে।কেউ কেউ বলছেন দিলীপ ঘোষ ও আরএসএসের নেতাদের এই সব কার্যকলাপ রাজ্য সরকারের হাতের তাস হিসেবে রাখা থাকছে।দিল্লির বিজেপি যদি এ রাজ্যের সরকারকে কোন রকম সারদা বা নারদা জুজু দেখায় তখন মমতাও তাদের পাল্টা হিসেবে দিলীপ ঘোষদের কেচ্ছা কেলেঙ্কারি দেখিয়ে বলতে পারবেন তিনিও রাজ্য বিজেপি নেতাদের শ্রীঘরে পাঠাতে পারেন।সেই সব অভিযোগের তথ্য রাজ্য পুলিশ জোগাড় করে রাখছে।

দিলীপ ঘোষদের কাহিনি সামনে আসতে না আসতেই রাজ্য বিজেপির আর এক মেতা শমীক ভট্টাচার্যের কেচ্ছাও সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সামনে চলে এল।এক মহিলার অভিযোগ শমীক দীর্ঘ দিন তার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছেন।তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চেয়ে এখন তাকে হুমকিও দিচ্ছেন।অনেকেই মনে করছেন এই মহিলা যদি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তবে শমীক ভট্টাচার্যেরও গ্রেপ্তার এড়ানো কঠিন হতে পারে।

সব মিলিয়ে রাজ্য বিজেপির একাধিক নেতা যে ভাবে নারী নিগ্রহের অভিযোগে বিদ্ধ হতে শুরু করেছেন তাতে এঁরা তৃণমূলকে মোকাবিলা করবে কী নিজেদের বাঁচাতেই এদের এখন কাল ঘাম বেরিয়ে পড়ার অবস্থা।বিজেপির অন্দর মোহলেও এখন বেশ কিছু নেতার গ্রেপ্তার হওয়া নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।সব মীিলিয়ে বিজেপির নেতারা আর খুব জোড়ের সঙ্গে রাজ্যে সরকারের বিরোধিতা করার মত জায়গায় আছে কিনা তা নিয়ে সংশয় বা ধন্দটা তৈরি হচ্ছেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here