দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সোমবার রাতে নির্বাচন কমিশন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ইঙ্গিত ছিল যে ব্যাপারটা সম্ভবত একপেশে থাকবে না। নির্বাচন কমিশন অবধারিত ভাবেই সমতা রাখবে।

হলও তাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কমিশনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মুখে কালো কাপড় লাগিয়ে মেয়ো রোডে প্রতিবাদ জানাতে বসেছেন, তখন কমিশন থেকে একের পর এক এল তিন নোটিস। তিনটিই বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে। রাহুল সিনহার প্রচারের উপর ৪৮ ঘণ্টার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি হল। শুভেন্দু অধিকারীকে সতর্ক করা হল। আর শীতলকুচি নিয়ে দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের জন্য তাঁর কাছে কৈফিয়ত চাইল কমিশন।

শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে নোটিস দিয়েছে কমিশন। তিনি বরানগরের সভায় যা বলেছিলেন তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে। শীতলকুচি নিয়ে মন্তব্যের জেরে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহার উপরেও ৪৮ ঘণ্টা প্রচারে  নিষেধাজ্ঞা যারই করেছে নির্বাচন সদন। সাম্প্রদায়িক লাইনে বক্তৃতার অভিযোগে শুভেন্দু অধিকারীকে সতর্ক করে কমিশন বলেছে, সংযত হতে।

সোমবার মমতার বিরুদ্ধে কমিশনের নির্দেশের পর তৃণমূল বলেছিল, বিজেপি শাখা সংগঠনে পরিণত হয়েছে নির্বাচন কমিশন। দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহাদের ক্ষেত্রে চোখ বুজে রয়েছে। আর যত পদক্ষেপ সব তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মমতা নিজে টুইট করে বলেছিলেন, কমিশনের এই সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক।
কিন্তু এদিন যেভাবে বিজেপির তিন নেতার বিরুদ্ধে কমিশন পদক্ষেপ করেছে তা দেখে অনেকেই বলছেন, নির্বাচন সদন তার নিরপেক্ষতা বজায় রেখেই কাজ করছে।

রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, এদিন যে ভাবে রাহুল সিনহা, দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছে কমিশন তাতে মমতার ধর্না ম্লান হয়ে গিয়েছে। কারণ কমিশন পক্ষপাত করছে বলে যে অভিযোগ তৃণমূল তুলেছে তা আর ধোপে টিকবে না বলেই মত তাঁদের।

অতীতে উনিশের লোকসভা ভোটেও দেখা গিয়েছে ধর্মীয় উস্কানিমূলক প্রচারের জন্য উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের উপর ৭২ ঘণ্টার জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল কমিশন। শুধু তা নয়, গত বছর দিল্লি নির্বাচনের সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর ও বিজেপি সাংসদ প্রবেশ ভার্মার উপর যথাক্রমে ৭২ ঘণ্টা ও ৯৬ ঘণ্টার জন্য নিষেধাজ্ঞা যারই করেছিল নির্বাচন সদন। তার আগে শিবসেনা প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরে, হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌটালার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে দেখা গিয়েছিল কমিশনকে।

নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মঙ্গলবার ধর্নায় বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গান্ধী মূর্তির পাদদেশে দিদির সেই কর্মসূচি ছিল নীরব। মুখে কালো কাপড় বেঁধে ক্যানভাসে ছবি আঁকলেন মমতা। সাড়ে তিনঘণ্টা পর ধর্না তুলে বাড়ি ফিরে যান তিনি।

মঙ্গলবার তাঁর ঘোষণা মতোই হুইল চেয়ারে করে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে এসে পৌঁছন মমতা। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সেখানে ধর্না শুরু করেন তিনি। কালো মাস্ক এবং ওই রঙের স্কার্ফ পরা মমতাকে ধর্না চলাকালীন ছবিও আঁকতে দেখা যায়। তবে দুপুর গড়াতেই সেই ধর্না তুলে নেন মমতা।

যদিও ধর্নামঞ্চে বসে মমতার ছবি আঁকা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ী বলেন, “উনি ছবি এঁকেছেন খুব ভাল কথা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, ছবি কেনার লোকগুলো সব জেলে রয়েছে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here