দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ কয়েক দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন, “পোশাক দেকেই বোঝা যায় কারা হিংসা ছড়াচ্ছে।” পোশাক বলতে মুসলিমদের লুঙ্গি ও টুপির দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন তিনি। মন্ত্রীর মন্তব্যে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। এবার ফের তাঁরই পথে একই রকম বিতর্কিত মন্তব্য করলেন তাঁর দলের নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। পোশাকের পরে এবার খাদ্যাভ্যাসের দিকে আঙুল তুললেন তিনি। মন্তব্য করলেন, খাবারের অভ্যেস দেখেই তিনি বুঝতে পেরে গেছেন যে তাঁর বাড়িতে কাজ করতে আসা শ্রমিকেরা বাংলাদেশি।

বৃহস্পতিবার সিএএ-র সমর্থনে একটি সেমিনারে যোগ দিতে গিয়েছিলেন এই বিজেপি নেতা। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়েই তিনি জানান, তাঁর বাড়িতে সম্প্রতি কিছু মিস্ত্রি কাজ করছেন। তাঁদের খাবারকে ‘অদ্ভুত’ বলে কটাক্ষ করে কৈলাস দাবি করেন, ওই মিস্ত্রিরা সকলেই বাংলাদেশি।

কিন্তু কী এমন খাবার, যা দেখে বলে দেওয়া যায় শ্রমিকদের দেশের নাম? জানা গেছে, সে খাবারটি হল চিঁড়ে। শ্রমিকদের চিঁড়ে খেতে দেখেই তাঁরা এ দেশের বাসিন্দা নয় বলে কটাক্ষ করলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সম্প্রতি দেশজুড়ে যে তোলপাড় চলছে, সেই আবহে এই মন্তব্য বিশেষ অর্থ বহন করছে বলেই মনে করছেন অনেকে। নেটিজেনরা সমালোচনা করে বলছেন, পোশাক দেখে ধর্ম চেনার পরে খাবার দেখে দেশ চেনা শুরু হয়েছে। গরিব মানুষের খাবার-পোশাককে উদ্দেশ্য করছে শাসকদল। অনেকে আবার বলেছেন, চিঁড়ের মতো একটা নিরীহ এবং সুপরিচিত খাবারকে এভাবে সন্দেহের তালিকায় ফেলার কারণ কী!

কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, “আমাদের বাড়িতে একটা নতুন ঘর তৈরি হচ্ছে। সেখানে কিছু মিস্ত্রি কাজ করতে আসেন। ওঁরা একটা অদ্ভুত জিনিস খাচ্ছিলেন, চিঁড়ে। যা দিয়ে তৈরি হয় পোহা। আমার খুবই সন্দেহ হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল এরা বাংলাদেশ থেকে এসেছে। দুদিন আমার সন্দেহ হয়েছে এরপর আমি কাজ করানোই বন্ধ করে দিয়েছি।”

শুধু তাই নয়, ওই খাবার দেখে তৎক্ষণাৎ বিল্ডিং কনস্ট্রাক্টর এবং সুপারভাইজরের সঙ্গেও কথা বলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তাঁদের কাছে জানতে চান মিস্ত্রিরা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন কিনা। বিজেপি নেতা আরও বলেন,”আমি এখনও পুলিশে কিছু জানাইনি। আমি শুধু এই বিষয়টি সকলকে জানালাম যাতে সবাই সতর্ক থাকে। গত দেড় বছর ধরেই বাংলাদেশি জঙ্গিদের চোখে চোখে রাখি। আমি যখন বাড়ির বাইরে পা রাখি ছ’ জন নিরাপত্তারক্ষীকে সবসময় পাহারা দিতে হয়।”

এসব কথা বলার পরে কৈলাস অবশ্য জানান, নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। এই আইনটি আসল শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেবে এবং যারা দেশের পক্ষে ক্ষতিকর তাদের আলাদা করে দেবে। সেই ক্ষতিকরদের তালিকায় কি তাঁর বাড়িতে কাজ করতে আসা, চিঁড়ে খাওয়া ‘বাংলাদেশি শ্রমিক’রা রয়েছেন? সে উত্তর অবশ্য উহ্যই থেকেছে এদিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here