দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ হলদিয়ার ঝিকুড়খালিতে জোড়া খুনের রহস্যের জট আরও জড়িয়ে পাকিয়ে যাচ্ছে। নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা রিয়া দে (২২) ও তাঁর মা রমা দে-কে (৪০)পরিকল্পনা করেই হলদিয়ায় ডেকে নিয়ে গিয়েছিল মূল অভিযুক্ত হলদিয়ার ঠিকাদার শেখ সাদ্দাম হুসেন, এ ব্যাপারে নিশ্চিত পুলিশ। এমনকি রিয়ার সঙ্গে সাদ্দামের প্রেমের সম্পর্ক ছিল সেই তথ্যও উঠে এসেছে তদন্তে।

সাদ্দাম ও এলাকাবাসীদের জেরা করে পুলিশের অনুমান, দীর্ঘদিন ধরেই সাদ্দামকে ব্ল্যাকমেল করছিল রিয়া ও তাঁর মা রমা। রিয়া ও সাদ্দামের ঘনিষ্ঠ কিছু ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে কয়েক লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল বলেও জেরায় জানিয়েছে সাদ্দাম। এই ব্ল্যাকমেলিংয়ের কারণে অতীষ্ঠ হয়েই কি মা-মেয়েকে হলদিয়ায় ডেকে এনে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়, সেটা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা৷


গত ১৮ ফেব্রুয়ারি হলদিয়ার সাত নম্বর ওয়ার্ডের ঝিকুড়খালি এলাকায় দু’জনকে আগুনে দাউদাউ করে পুড়তে দেখে আতঙ্কে শিউরে উঠেছিল এলাকার বাসিন্দারা। জল ঢেলে আগুন নেভানোর পরে দুটি দেহাংশ, পোশাকের কিছু অংশ এবং মাথার চুলের বেঁচে যাওয়া টুকরো দেখে পুলিশ অনুমান করেছিল, দগ্ধ দু’জনেই মহিলা। তাঁদের পরিচয় উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় পুলিশ।

এর পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় দুই মৃত মহিলার পোশাক ও চুলের বর্ণনা দিয়ে পরিচয় খোঁজার চেষ্টা করা হয় জেলা পুলিশের তরফ থেকে। পরে জানা যায়, মৃত দুই মহিলার নাম রিয়া ও রমা, তাঁরা নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা।
নিউ ব্যারাকপুর কালীবাড়ির কাছে নরেশ চন্দ্র সরণিতে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন রিয়া ও রমা। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, রমা বিবাহবিচ্ছিন্না। তাঁর পেশার ব্যাপারেও কিছু জানতে পারেনি পুলিশ।

নিউ ব্যারাকপুরের একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে রিয়া। এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় রিয়াকে। এলাকায় তাঁর খুব একটা সুনাম ছিল না, তবে মা-মেয়েকে এভাবে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনায় অপরাধীদের কড়া শাস্তি চেয়েছেন স্থানীয়রা।

হলদিয়ার পুলিশ সুপার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় জানান, জোড়া খুনের তদন্তে নেমে পুলিশ শেখ মনজুর বলে একজনকে আটক করেছিল প্রথমে। পুলিশের জেরায় মনজুর সব স্বীকার করে। পুলিশ জানতে পারে, এই ঘটনার সঙ্গে আরও তিন জন জড়িত। তাদের মধ্যে মূল অভিযুক্ত শেখ সাদ্দাম হুসেনকেও আটক করে পুলিশ। দু’জনেরই বাড়ি হলদিয়া এলাকায়।

হলদিয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়। জেরায় সাদ্দাম জানিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় আয়শা দে নামে প্রোফাইল তৈরি করেছিল রিয়া। সেখানেই তার সঙ্গে আলাপ সাদ্দামের। রিয়াকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতিও নাকি দিয়েছিল সে। সাদ্দামের দাবি, রিয়া ও তার কিছু ঘনিষ্ট মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করেছিল রিয়ার মা রমা। কয়েক লক্ষ টাকা দাবি করা হয়েছিল তার কাছে। সেই ব্ল্যাকমেল থেকে রেহাই চাইছিল সে।


তদন্তকারীদের অনুমান, রীতিমতো পরিকল্পনা করে, আঁটঘাট বেঁধে মা রমা এবং মেয়ে রিয়াকে কলকাতা থেকে হলদিয়ায় ডেকে নিয়ে গিয়েছিল শেখ সাদ্দাম হোসেন। দুর্গাচক হাসপাতাল রোডের একটি বাড়িতে রিয়া ও রমার থাকার ব্যবস্থা করেছিল সে। অনুমান, রাতে খাওয়ার সঙ্গে মাদক জাতীয় কিছু মিশিয়ে দিয়ে মা-মেয়েকে বেহুঁশ করে ঝিকুড়খালির নির্জন নদীর পাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। নিজের বেশ কয়েকজন শাগরেদকে জুটিয়ে এনেছিল সাদ্দাম। ভোররাতে সেখানেই মা-মেয়েকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার চেষ্টা হয়। সকালে স্থানীয়রা নদীর পাড়ে গিয়ে দু’টি দেহ দাউদাউ করে জ্বলতে দেখেন। গায়ে। অচৈতন্য অবস্থাতেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় দু’জনের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here