দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ জনসমাগমের বিচারে ভারতের বার্ষিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নিরিখে গঙ্গাসাগর থাকবে একেবারে উপরের দিকে। পুণ্যস্নান হবে মকর সংক্রান্তিতে এখনই থেকেই গঙ্গাসাগরে মেলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। জোর কদমে চলছে প্রস্তুতি। পুণ্যার্থীরাও বিক্ষিপ্ত ভাবে আসতে শুরু করে দিয়েছেন।

আনুষ্ঠানিক ভাবে ১০ জানুয়ারি শুরু হবে গঙ্গাসাগর মেলা। প্রশাসন চাইছে এই মেলাকে যথাসম্ভব পরিবেশবান্ধব হিসাবে তুলে ধরতে। গঙ্গাসাগর যাতে প্লাস্টিকমুক্ত হয় সেদিকেও নজর দিচ্ছে প্রশাসন। এব্যাপারে বিশেষ ভাবে উদ্যোগীও হয়েছে তারা।

মেলার প্রস্তুতি হিসাবে নানা রঙের আলো দিয়ে মন্দিরগুলিকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। কপিলমুনির আশ্রম ঘিরেই সমস্ত ভিড় থাকে, কপিলমুনির কাহিনি সাধারণ মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন মডেল তৈরি করা হয়েছে। সেখানে দেবদেবীদের মূর্তিও থাকছে।

এবারে নতুন করে মন্দিরের একদিকে তৈরি হয়েছে একটি সুদৃশ্য পুকুর, যার মাঝে একটা ফোয়ারা রয়েছে। এখানে বসার জায়গাও রয়েছে। গঙ্গাসাগরে কপিলমুনির আশ্রম চত্বরের সৌন্দর্যায়নের দায়িত্ব নিয়েছিল গঙ্গাসাগর বকখালি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড। এই কাজও তারাই করেছে। গঙ্গাসাগরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বৃষ্টিতে কাজের গতি অনেকটাই থমকে গেছে। বৃষ্টির জল জমে গেছে সাধুদের আখড়াগুলিতে। শীতকালে একেবারে বর্ষাকালের মতো বৃষ্টি পড়ায় অনেক পর্যটক এসেও মন্দিরে ঢুকে পারেননি। অনেকেই ভ্যান-রিকশায় করে ভিজে এসে মন্দিরের সামনে থেকেই ফিরে গেছেন। তবে মকর সংক্রান্তির আগেই দুর্যোগ কেটে যাবে বলে আশা করছেন মেলার লোকজন।

গঙ্গাসাগর মেলায় পরিচ্ছন্নতার দিতে বেশ কয়েক বছর ধরেই বিশেষ ভাবে নজর দিচ্ছে প্রশাসন। প্রচুর সংখ্যায় অস্থায়ী শৌচালয় বানানো হয়। তবে যে সংখ্যায় মানুষ এই মেলায় আসেন সেই তুলনায় শৌচাগার কম বলেই মেলা শেষে মনে হয়। শৌচাগার বানানোই শেষ কথা নয়, তা পরিষ্কার রাখা এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সরকার সে দিকেও নজর দিচ্ছে। এই অবস্থায় বৃষ্টি শুরু হয়ে যাওয়ায় প্রশাসনকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে সম্ভাব্য আবহাওয়া নিয়েও।

গঙ্গাসাগর নিয়ে একটি পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে। ভারতে সগর নামে এক রাজা ছিলেন। তাঁর রানি সুমতীর গর্ভে ষাট হাজার পুত্রের জন্ম হয়েছিল, কেশিনীর গর্ভে জন্ম হয় অসমঞ্জসের। সগর রাজার অশ্বমেধ যজ্ঞ করবেন বলে ঠিক করেন। সেই ঘোড়ার সঙ্গে পাঠান তাঁর ছেলেদের। দেবরাজ ইন্দ্র সেই ঘোড়া চুরি করে কপিলমুনির আশ্রমে বেঁধে রেখে যান। রাজপুত্ররা ঘোড়া খুঁজতে খুঁজতে কপিলমুনির আশ্রমে এসে দেখতে পান। তখন কপিলমুনি ছিলেন গভীর ধ্যানে মগ্ন। রাজপুত্রেরা মুনিকে চোর ভেবে তাঁর উপরে চড়াও হওয়ার উপক্রম করেন। মুনি চোখ খুলে নিজের অপমান সহ্য করতে না পেরে ক্রুদ্ধ হন, তাঁর তেজে ভস্ম হয়ে যান সগরের ছেলেরা।

অসমঞ্জসের ছেলে অংশুমান কপিলমুনির কাছে এসে জানতে চান কী ভাবে তাঁর বাপ-কাকাদের বিদেহী আত্মা স্বর্গে যেতে পারবে। তখন স্বর্গের নদী গঙ্গাকে আনার কথা বলেন কপিনমুনি। অংশুমান তা পারেননি, তাঁর পুত্র দিলীপ মারা যান অল্প বয়সে। দিলীপের পুত্র ছিলেন ভগীরথ।

শাপমুক্তির উপায় জানতে পারেন ভগীরথ। পূর্বপুরুষদের উদ্ধার করতে তিনি তপস্যা করেন ব্রহ্মার। ব্রহ্মা সন্তুষ্ট হয়ে বর দিতে চান। গঙ্গাকে মর্ত্যে আনার বর চান ভগীরথ। তখন শিবের তপস্যা করার পরামর্শ দেন ব্রহ্মা। ভগীরথের তপস্যায় শিব সন্তুষ্ট হন। শিব বর দেন যে গঙ্গা মর্ত্যে নামলে তিনি তাঁকে জটায় ধারণ করবেন। তখন ভগীরথ গঙ্গার তপস্যা করেন। গঙ্গা সন্তুষ্ট হয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন কিন্তু শিবের জটাজালে আটকে যান। তারপরে ভগীরথ নতুন করে শিবের তপস্যা করে তাঁকে সন্তুষ্ট করে গঙ্গাকে তাঁর জটাজাল থেকে মুক্ত করেন। গঙ্গাকে পথ দেখিয়ে তিনি নিয়ে আসেন কপিলমুনির আশ্রমে। ভগীরথের পূর্বপুরুষদের উপর দিয়ে বয়ে যায় গঙ্গা। উদ্ধার হন তাঁর পূর্বপুরুষরা।

সেই কপিলমুনির আশ্রমই গঙ্গাসাগরের মূল তীর্থস্থান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here