দেশের সময়: –নির্বাচনী বিপর্যয়ের পর ঘর গোছাতে নামার কথা শাসক তৃণমূলের।দলের সুপ্রীমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর বাড়িতে ডাকা বৈঠকে গিয়ে কথা দিয়ে এসেছেন তৃণমূলের নেতা নেত্রীরা, যে তাঁরা সম্মিলিতভাবে লড়াই করে এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠবেন।দলনেত্রী জানিয়ে দিয়েছেন পথে নেমেই মোকাবিলা করতে হবে বিজেপির।

তবে শাসক দলের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে,কাদের নিয়ে পথে নামবো,কে কখন দল বদলে বিজেপির ঘরে চলে যাবে তার তো কোন নিশ্চয়তা নেই।তৃণমূলের আসল সমস্যা এখন এটাই,দলের সর্বস্তরে একটা অবিশ্বাসের চোরা স্রোত বইতে শুরু করেছে।কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না।ভাবছেন যাকে বিশ্বাস করে দলের গোপন বিষয় নিয়ে আলেচনা করবেন,নীতি নির্ধারণ করবেন সেই ব্যক্তিটিই আবার গোপনে বিজেপির সঙ্গে কোন গোপন সমঝোতা করে বসে নেই তো,দলের সব খবর বিজেপির কাছে চলে যাবে না তো?

এই দোলাচল শুধু তৃণমূলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেই আটকে নেই,এই আশঙ্কা গ্রাস করেছে খোদ তৃণমূলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।সূত্রের খবর তিনি এ নিয়ে এতটাই অস্থীর যে কীভাবে কাকে দিয়ে এই কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।রাজনৈতিক পর্যপক্ষকদের একাংশ বলছেন তৃণমূলের চরম সংকট এখানেই আর এই সংকট তৈরির জন্য তৃণমূল নিজেই দায়ী।

যেভাবে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা নীতি ও আদর্শ বাদ দিয়ে শুধু দল ভাঙিয়ে এ রাজ্যে বিরোধীদের একেবারে সাইন বোর্ড করে দিয়েছে তাতে এখন তাদেরকেও সেই একই আক্রমণের মুখে পড়তে হওয়ায় তা মোকাবিলা করার কোন যুতসই রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না তারা।সবাই সবাইকে সন্দেহ করছে,কেউ বুঝতে পারছে না শেষ পর্যন্ত কে থাকবে আর কে যাবে?এরই মধ্যে বাজারে ভেসে বেড়াচ্ছে অনেক গুঞ্জন।যেমন কেউ বলছেন শুভেন্দু অধিকারীও নাকি দল বদলে ফেলতে পারেন,তাঁর সঙ্গে বিজেপির পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী পদ পাওয়া নিয়ে টানাপোড়েন চলছে।কেউ আবার বলছে সুব্রত মুখার্জীকে এ রাজ্যে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী প্রোজেক্ট করে বিজেপি বিধানসভা ভোটে লড়বে।

এই সব স্রেফ গুঞ্জন নাকি এর মধ্যে সারবত্তা আছে তার বিচার করবে সময়,তবে এই মূহুর্তে এই সব গুঞ্জন যে শাসক দলে তীব্র অনিশ্চয়তার মেঘ তৈরি করছে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।যে ভাবে দিল্লিতে গিয়ে বিজেপির পার্টি অফিসে এরাজ্যের তৃণমূল বিধায়ক ও বিভিন্ন পুর-বোর্ডের সদস্যরা বিজেপিতে নাম লেখাচ্ছেন,তাতে যে কোন দিন যে সেখানে বড় কোন চমক থাকবে না কে বলতে পারে?

তাই তৃণমূল শিবিরে সবাই এখন সবাইকে আঁড় চোখে দেখছে।যে বিপর্য়য় নির্বাচনে হয়েছে তা মোকাবিলা করতে তৃণমূলের এখনই কোমড় কষে নেমে পড়া উচিত,কিন্তু কেউ বুঝতে পারছেন না,তৃণমূলের যথার্থ সৈনিক আর কে নাটক করছেন,কে জার্সি বদল করবেন আর কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত থেকে যাবেন কেউ জানেন না তাই তৃণমূল এখন একটা অদ্ভূদ স্থবিরতায় ভুগতে শুরু করেছে।তৃণমূল শিবিরে এই আশঙ্কার হাওয়া ক্রমশ ছড়িয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন এ রাজ্যে ভোট যুদ্ধের চানক্য বলে চিহ্নিত মুকুল রায়।

তৃণমূলের হয়ে দল ভাঙানোর খেলাটা একসময় তিনি খেলেছেন,তাই এ খেলা তাঁর হাতের তালুর মত চেনা,প্রতিদিন সেই তিনি বলে চলেছেন এটা স্রেফ ট্রেলার মাত্র পিকচার আভি বাকি হ্যায়।আর বাকি পিকচারে কী আছে বুঝতে না পেরে হাতরে মরছে তৃণমূল।নেত্রী তাঁর ভরসার নেতাদের দায়িত্ব বাড়িয়ে,নানাবভাবে তাদের মোটিভেটেড করতে চাইছেন বটে কিন্তু তিনিও জানেন আদর্শহীন প্রলোভন ও টোপ দিয়ে তিনি দল বড় করেছেন,তাই সেই প্রলভোন ও টোপ এবার তাঁর দলকেও ভেঙে দিতে পারে।প্রতিদিন আশঙ্কা তাড়া করছে তাঁকেও।

যুদ্ধে অস্ত্র হাতেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয় সবাই জানেন কিন্তু কোন অস্ত্রটা ব্যবহার করবো সেটানা বুঝলে তো লড়াতে নামাই যাবে না।তৃণমূলের দিশাহারা অবস্থাটা তো অনেকটা সেরকমই মনে হচ্ছে,সবাই যদি সন্দেহের তালিকায় থাকে তবে কে কোথায় প্রতিরোধ করবে,সেটাই তো বোঝা যাবে না।

মুখে স্বীকার না করলেও শোনা যাচ্ছে এই আশঙ্কাতেই দিন কাটছে তৃণমূল সুপ্রিমোর,কে কোথায় কার সঙ্গে যোগাযোগ করছে তাঁর খবর নিচ্ছেন তিনি,বুঝতে চাইছেন তাঁর ঘরের শত্রু কতজন,কিন্তু এই বুঝতেই তিনি যদি সময় ব্যয় করে ফেলেন তবে মোকাবিলা করার সময় পাবেন তো?তৃণমূলের এই দিশাহীন অবস্থা দেখেই কী কটাক্ষ করছেন মকুল রায়,এই জন্যই কী বলছেন আর কয়েক বছরের মধ্যে তৃণমূল দলটার কোন অস্তিত্ব থাকবে না।সেটাও অবশ্যই সময় বলবে তবে তৃণমূলের অন্দরে যে সন্দেহ ও আশঙ্কার স্রোত তীব্র তা একেবারে বাস্তব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here