দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কৃষক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। সকলেই এই আন্দোলনে নিজের আখেরে ঘোছাতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন নেতামন্ত্রীরা। কৃষকদের দাবি মেটনোর প্রসঙ্গে না গিয়ে শুরু হয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যের সমালোচনা। এদিন কৃষকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে বিরোধীদের একহাতে নেন প্রধানমন্ত্রী।

দিল্লিতে কৃষকদের আন্দোলন চলছে এক মাসের বেশি। শুক্রবার কৃষকদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সময় বিরোধীদের চড়া সুরে আক্রমণ করলেন তিনি। কারও নাম না করে তিনি বলেন, কিছু লোক কৃষকদের ভুল বোঝাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ যুক্ত না হওয়ার জন্য তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁর অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার একদিকে নিজের রাজ্যে কৃষকদের কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে, অন্যদিকে পাঞ্জাবে গিয়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলছে।


মোদীর কথায়, “কিছু লোক মিথ্যা কথা প্রচার করে চলেছে। তারা বলছে, কৃষকরা চুক্তি চাষ করলে তাঁদের জমি কেড়ে নেওয়া হবে।” এরপরে প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের কথা তোলেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের জন্য যে তহবিল তৈরি করেছে, তার টাকা নিচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গ। তাঁর কথায়, “কেবল পশ্চিমবঙ্গই কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে কৃষকদের জন্য টাকা নেয় না। ব্যাপারটা খুবই দুঃখের। পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনেক কৃষক কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লিখেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিজের রাজ্যে চাষিদের এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে। এই সরকারই আবার পাঞ্জাবে গিয়ে কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন করছে।”
মমতা সরকার চায়, তার হাত দিয়ে কৃষকদের কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা দিক কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু মোদী সরকার চায়, ওই টাকা সরাসরি কৃষকদের হাতে দিতে।

এরপর মোদী পরোক্ষে কংগ্রেসের উদ্দেশে বলেন, “যারা আজ কৃষকদের নিয়ে বড় বড় কথা বলছে, তারা নিজেরা ক্ষমতায় থাকার সময় কী করেছিল?” প্রধানমন্ত্রীর দাবি, তাঁর সরকার কৃষিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।
মোদী এদিন প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পে ৯ লক্ষ কৃষক পরিবারের জন্য ১৮ হাজার কোটি টাকা দেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিনে ওই কৃষক পরিবারগুলি ২ হাজার টাকা করে পাবেন।
কিছুদিন আগে বিজেপির সভাপতি জে পি নাড্ডা দলের প্রত্যেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়ককে নির্দেশ দেন, তাঁরা যেন দলের সমর্থকদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনেন। সেজন্য বিজেপি সভাপতি প্রত্যেক রাজ্যের বিজেপি প্রধান ও অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় নেতাকে চিঠি দিয়েছেন।


নাড্ডা নির্দেশ দেন, প্রতিটি ব্লক ডেভলপমেন্ট সেন্টারে মোদীর ভাষণ শোনানোর জন্য বিগ স্ক্রিনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি মান্ডির কাছেও বসাতে হবে বিগ স্ক্রিন। একইসঙ্গে নতুন কৃষি আইন নিয়ে কৃষকদের বোঝানোর জন্য লিফলেট ছড়াচ্ছে বিজেপি। বিভিন্ন স্থানীয় ভাষায় সেই লিফলেটের বক্তব্য অনুবাদ করতে বলা হয়েছে। মূল লিফলেটের বক্তব্যের কোনও অংশ বাদ দিতে নিষেধ করেছেন নাড্ডা।

সেপ্টেম্বরে কেন্দ্র তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন পাশ করার পর থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি কৃষকরাও সোচ্চার হয়েছেন। কেন্দ্রের সঙ্গে কৃষক নেতাদের বৈঠকের পরেও সমাধান সূত্র বেরোয়নি। কৃষকরা নয়া আইন বাতিলের দাবি জানালেও কেন্দ্র তা মানতে নারাজ। কৃষক নেতারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্র কৃষি আইন বাতিল না করা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। যাবতীয় প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে এই শীতের দিনগুলিতেও কৃষকরা নিজেদের লক্ষ্যে অবিচল।

২৫ ডিসেম্বর অটল বিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে ৬টি রাজ্যের কৃষক সংগনের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। কৃষকদের অসন্তোষকে হাতিয়ার করে বিরোধীরা যখন কেন্দ্রের শাসকদলকে কোনঠাসা করতে তৎপর, তখন প্রধানমন্ত্রীর বড়দিনের ভাষণকে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে পদ্ম শিবির। এই লক্ষ্যে, একদিকে দলের সমস্ত নেতাকর্মীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই ভাষণ মন দিয়ে শুনতে, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার দু’ঘণ্টার মধ্যেই কৃষকদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে পিএম-কিসান এর ২,০০০ টাকা। যা এই প্রকল্পে দেওয়া বার্ষিক ৬ হাজার টাকার কিস্তি। এই আইনগুলির উপযোগিতা বুঝিয়ে লেখা বিশেষ লিফলেট বিলি করা হবে বিজেপির তরফে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here