দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ কাটমানি নিয়ে শাসক নেতাদের বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। ক্রমশ বাড়চ্ছিল সেই ক্ষোভ। কিন্তু এ বার কাটমানি ফেরতের ‘সংগ্রাম’কে অন্য মাত্রা দিয়ে দিল বিজেপি। তাও আবার তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটে।

জনতার ক্ষোভকে সংগঠিত করে, দেওয়া টাকা ফেরতের জন্য ফর্ম ছাপিয়ে ফেলে বিজেপি। মঙ্গলকোটের চানক অঞ্চলের জলপাড়া গ্রামে সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেই ফর্ম দিয়ে আসে গেরুয়াশিবিরের কর্মীরা। বলে আসা হয়, কোন নেতাকে কী কারণে কত টাকা কাটমানি দিয়েছেন, তা ওই ফর্মে লিখে জমা করতে। তারপর হিসেব হবে।

গত তিন-চারদিন আগে বিলি করা ফর্ম শনিবার জমা পড়ে যায় স্থানীয় বিজেপি পার্টি অফিসে। কয়েকশো মানুষ অভিযোগ জানান। সেই মতো রবিবার সকালে গ্রামেরই একটি বাড়ির উঠোনে চাটাই পেতে সালিশি সভা বসায় বিজেপি। ডেকে পাঠানো হয় স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতা কালীময় গঙ্গোপাধ্যায় এবং অপূর্ব ঘোষকে। জানা গিয়েছে, যত ফর্ম জমা পড়েছে, তাতে এই দুই নেতার নামই উল্লেখ করেছেন গ্রামবাসীরা। বিজেপি-র ডাকা সালিশি সভায় হাজিরও হন ওই দুই তৃণমূল নেতা। সামনে পেয়েই ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। কেউ অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি করার জন্য কাটমানি নিয়েছেন কালীবাবু, কেউ আবার বলেন একশো দিনের কাজের জব কার্ডে টাকা খেয়েছেন অপূর্ব।

বাবু হয়ে সালিশি সভায় বসে, টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ওই দুই তৃণমূল নেতা। এবং মুচলেকা দিয়েছেন, তিন মাসের মধ্যে সব হিসেব মিটিয়ে দেবেন। যদিও ওই দুই নেতা বিজেপি-র ডাকা সালিশি সভায় দাবি করেছেন, তাঁরা নিমিত্তমাত্র। যা টাকা তাঁরা তুলেছেন, সবটাই অঞ্চল সভাপতি রমজান শেখের নির্দেশে। কিন্তু বিজেপি নেতারা ও সবের মধ্যে যাননি। কালী গাঙ্গুলি আর অপু ঘোষকে বলে দিয়েছেন, সভাপতির সঙ্গে যা বোঝার তোমরা বুঝে নাও। তোমরা যার থেকে যত টাকা নিয়েছ, সব কড়ায়গণ্ডায় ফেরত দেবে।

পর্যবেক্ষকদের মতে, এই গোটা ছবিটাতেই পরিষ্কার, তৃণমূলের আসল চেহারাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ থেকে ছ’মাস আগেও কেউ ভাবতে পেরেছে যে, বিজেপি সালিশি সভা ডাকবে আর তৃণমূল নেতারা সেখানে গিয়ে মুচলেখা দেবে? তাঁদের কথায়, এ যেন ২০১০-এর সিপিএমের অবস্থা। তখন জঙ্গলমহলে একের পর এক সিপিএম নেতা এমনই সব সালিশি সভায় এসে মুচলেখা দিতেন, ‘আমি কাল থেকে আর সিপিএম করব না।’

রমজান শেখ অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “বিজেপি ভয় দেখিয়ে আমাদের দুই নেতাকে তুলে নিয়ে গিয়ে এ সব লিখিয়েছে। আমরা প্রশাসনকে জানাব।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছ, এই কালীময় গঙ্গোপাধ্যায় এবং অপূর্ব ঘোষের নামে একটা সময়ে বাঘে গরুতে জল খেত। কী তাঁদের দাপট। একটা ফোনে কেঁপে যেত থানা। সেই তাঁরাই কি না সালিশি সভায় এসে মাথা নুইয়ে দিচ্ছেন!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here